সংসদে বাণিজ্য সংগঠনের সংশোধনী বিলটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়
ইবিটাইমস ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। এর আগে বিলটি পাসের বিরোধীতা করে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। জবাবে মন্ত্রী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে একজন ব্যবসায়ীদের ও সিন্ডিকেটের নেতা বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া, মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, তারপরেও বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তারা এসময় কাঁচা মরিচ, আলু, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন এবং সম্প্রতি দেশীয় পণ্য আলুর দাম বাড়ায় বাণিজ্যমন্ত্রীকে দায়ী করেন।
গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, কাঁচা মরিচ, আলু বিদেশ থেকে আসে না। এ সবের সংকট ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে হওয়ার কথা নয়। গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত থাকার পরেও আলুর দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। কারণ একটাই এখানেও সিন্ডিকেট। এই সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বহুবার সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করেছেন। এখন মানুষ যখন বলতে শুরু করেছে বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই সিন্ডিকেটের হোতা, তখনই সত্য কথা বলতে শুরু করলেন। তিনি বলেছেন সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, অর্থনীতি ভালো নেই। কষ্টে আছে সাধারণ মানুষ সন্দেহ নেই। গরীবদের সুরক্ষার সময় এখন, সুরক্ষার জন্য অর্থ এই মন্ত্রণালয়কে দিতে হবে। এই ১৬ কোটি মানুষের দেশে, হাজার হাজার বাজার কীভাবে ম্যানেজ করবেন। এগুলো মন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব না। একমাত্র ব্যালেন্স হবে যখন সরকারের কিছু মজুদ থাকবে এবং সরকার সেখান থেকে কম দামে দেবে তখন।
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, একবছর আগে চিনির দাম ছিল ৮৮-৯০ টাকা এখন তা ১৩০-১৩৫ টাকা, ডিম ছিল ৪০-৪২ টাকা এখন তা ৪৮-৫২ টাকা, রসুনের দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ। গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, রুই মাছ সবকিছুর দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রী কেন সিন্ডিকেট ধরতে পারছে না তা আমরা জানি না। জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমাকে অনেক সময় ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেটের হোতা এসব বলা হয়। সে কারণে এই পার্লামেন্টে আমাকে বহুবার বলতে হয়েছে, ব্যবসা করার অনেক আগে থেকেই আমি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অনেক মনোপলি ব্যবসাদার বা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ায় এটা সত্য। তবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সার্বিকভাবে যে পরিস্থিতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি, বৈশিকভাবে দাম বেড়েছে সে দিকেও আপনাদের নজর দিতে হবে। সাপ্লাই ঠিক না থাকলে দাম বাড়ে। আমরা আজকে ডিমের দাম বেঁধে দিয়েছি, যদি সেটা তারা না মানে তবে অবিলম্বে ডিম আমদানি করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা জানি বৈশ্বিকভাবে, পরিবহন খরচ বাড়ায় বা বিভিন্ন কারণে বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এটা দু’ভাগে ভাগ করতে পারি, একটা হলো ইমপোটেড গুডস যেমন- সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল ইত্যাদি। এগুলো জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে যে দাম থাকে সে দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের দাম নির্ধারণ করতে হয়। দ্বিতীয় জিনিস দেশীয় উৎপাদিত দ্রব্যের দাম কেন বাড়ে। কখনো কখনো হঠাৎ কোন দ্রব্যের ওপর সিন্ডিকেট করে বা দাম বাড়ানোর সুযোগ নেয় ব্যবসায়ীরা। যেমন ডিমের কথা যদি বলা হয়, দাম বাড়ছে।
এদিকে পাস হওয়া বিলটিতে বাণিজ্যিক কাজ কর্ম সহজ করতে, ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য সংগঠনে অধিকতর সম্পৃক্ততা সৃষ্টি এবং জয়েন্ট ট্রেড ওয়ার্কিং কমিটির কাজ অধিকতর সুচারুরুপে শেষ করার জন্য জয়েন্ট ট্রেড ওয়ার্কিং কমিটি (জেটিডাব্লিউসি) গঠন করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার উপযুক্ত কর্মকর্তা অন্তর্ভূক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস