ভিয়েনা ০২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইল শহর পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির উদ্বােধন রাহেলা জাকির টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের সভাপতি নির্বাচিত ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর আইএস বিরোধী জোটে যোগ দিচ্ছে সিরিয়া দিল্লিতে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের তদন্ত করছে ফরেনসিক দল বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ইতালি নির্বাচনী প্রচারণায় পোস্টার নিষিদ্ধ হঠাৎ ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন, বন্ধ রেল যোগাযোগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে আপিলের রায় ২০ নভেম্বর অসুস্থতায় ছেড়ে গেছেন স্ত্রী ! সকলের সহায়তায় বাঁচতে চায় হাসান

নামের কারণে ‘এমপিও বঞ্চিত’ ৩৮ শিক্ষক-কর্মচারী

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৮:৫২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
  • ১৮ সময় দেখুন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: কলেজটির নাম ‘শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ’। আর এই কারণেই ১৮ বছর ধরে ‘এমপিও বঞ্চিত’রয়েছেন কলেজটির শিক্ষক-কর্মচারীরা। যোগ্যতার সব শর্ত পূরণ করলেও ‘শহীদ জিয়া’নামের কারণে বিগত আওয়ামীলগি সরকার কলেজটির ডিগ্রি সেকশন এমপিওভুক্তির বাইরে রাখে। ফলে ১৮ বছর আগে কলেজের ডিগ্রি সেকশনে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা ছাড়া মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বঞ্চিত শিক্ষকরা কলেজটির ডিগ্রি সেকশন এমপিওভুক্ত করে নিয়োগের তারিখ থেকে সমস্ত বকেয়া পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কলেজের হারানো গৌরব ফিরে পেতে জাতীয়করণের দাবীও জানিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বিএনপি সরকারের আমলে ২০০০ সালে কালিগঞ্জ-জীবননগর মহাসড়ক সংলগ্ন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ফতেপুরে গড়ে ওঠে ‘শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ’। শিক্ষায় অনগ্রসর এই এলাকার মানুষের মনে শিক্ষার দ্যুতি ছড়াতে ঝিনাইদহ-৩ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত এমপিওভুক্ত করা হয়। ২০০৫ সালের ১৩ জুলাই ডিগ্রি সেকশনের পাঠদানের অধিভুক্তি করা হয়। কিন্তু পরের বছরই ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। এরপর থেকে কলেজের নাম পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। কিন্তু শিক্ষকদের অনড় অবস্থানের কারণে কলেজের নাম পরিবর্তন করতে না পেরে কলেজটিকে অকার্যকর করার পাঁয়তারা শুরু করেন তারা। আওয়ামী লীগ নেতারা ওই এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের জিয়া কলেজে ভর্তি না হতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেন। এরপরও যেসব শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতো তাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়। এমপিও আবেদনের জন্য বছরের পর বছর স্থানীয় আওয়ামী সংসদ সদস্যের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মেলেনি ‘ডিও লেটার’। দীর্ঘ ১৮ বছরে কলেজের জন্য কোনো প্রকার সরকারি অনুদানও আসেনি।
চার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত উপজেলার স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানটি ছিল বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। ১৮ বছর আগে যেসব শিক্ষক তাদের ভাগ্যবদলের আশায় শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সঙ্গে নিজেদের নাম যুক্ত করেছিলেন তাদের দুর্দশা পিছু ছাড়েনি। এসব শিক্ষক দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হয়েও আজ তারা সমাজের কাছে অসম্মানিত,পরিবারের কাছেও বোঝা। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা এসব শিক্ষকদের দাবি, তাদের সঙ্গে যে অন্যায় করা হয়েছে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

কলেজের ডিগ্রি সেকশনের প্রভাষক মো. ছামাদুজ্জামান বলেন,‘২০০৩ সালে আমাকে শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের ডিগ্রি সেকশনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই থেকে ২১ বছর ধরে বেতন-ভাতা তো দূরের কথা, কলেজ থেকে কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, বিগত দেড় যুগ ধরে আমরা বৈষম্যের চরম সীমা অতিক্রম করে আসছি। গত আওয়ামীলীগ সরকারের কাছে আমাদের একটাই অযোগ্যতা আমরা শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। অনতিবিলম্বে ডিগ্রি পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করে নিয়োগদানের তারিখ থেকে সমস্ত বকেয়া পরিশোধের অনুরোধও করছি।’

কলেজের অধ্যক্ষ মো. শওকত আলী বলেন,‘উপজেলার সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চনার শিকার শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ। সব যোগ্যতা থাকার পরও শুধু নামের কারণে ডিগ্রি সেকশনের এমপিও দেওয়া হয়নি। এমপিওর কাগজপত্র জমা দিতে শত চেষ্টার পরও ডিও লেটার দেননি আওয়ামীলীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য। বরং উপজেলার শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপীঠকে দুর্বল করতে সকল ঘৃণ্য অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে।’

তিনি বলেন, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করতেও পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ভর্তি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের হতে হয়েছে লাঞ্ছিত। কলেজটির ডিগ্রি সেকশনের শিক্ষকদের প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে তা অকল্পনীয়। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে তারা বিনা বেতনে পাঠদান করছেন এটা অমানবিক। আমি তাদের সমস্ত বকেয়া পরিশোধের দাবি জানাই। একই সঙ্গে কলেজটি জাতীয়করণের মাধ্যমে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

শেখ ইমন/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

নামের কারণে ‘এমপিও বঞ্চিত’ ৩৮ শিক্ষক-কর্মচারী

আপডেটের সময় ০৮:৫২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: কলেজটির নাম ‘শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ’। আর এই কারণেই ১৮ বছর ধরে ‘এমপিও বঞ্চিত’রয়েছেন কলেজটির শিক্ষক-কর্মচারীরা। যোগ্যতার সব শর্ত পূরণ করলেও ‘শহীদ জিয়া’নামের কারণে বিগত আওয়ামীলগি সরকার কলেজটির ডিগ্রি সেকশন এমপিওভুক্তির বাইরে রাখে। ফলে ১৮ বছর আগে কলেজের ডিগ্রি সেকশনে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা ছাড়া মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বঞ্চিত শিক্ষকরা কলেজটির ডিগ্রি সেকশন এমপিওভুক্ত করে নিয়োগের তারিখ থেকে সমস্ত বকেয়া পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কলেজের হারানো গৌরব ফিরে পেতে জাতীয়করণের দাবীও জানিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বিএনপি সরকারের আমলে ২০০০ সালে কালিগঞ্জ-জীবননগর মহাসড়ক সংলগ্ন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ফতেপুরে গড়ে ওঠে ‘শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ’। শিক্ষায় অনগ্রসর এই এলাকার মানুষের মনে শিক্ষার দ্যুতি ছড়াতে ঝিনাইদহ-৩ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত এমপিওভুক্ত করা হয়। ২০০৫ সালের ১৩ জুলাই ডিগ্রি সেকশনের পাঠদানের অধিভুক্তি করা হয়। কিন্তু পরের বছরই ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। এরপর থেকে কলেজের নাম পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। কিন্তু শিক্ষকদের অনড় অবস্থানের কারণে কলেজের নাম পরিবর্তন করতে না পেরে কলেজটিকে অকার্যকর করার পাঁয়তারা শুরু করেন তারা। আওয়ামী লীগ নেতারা ওই এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের জিয়া কলেজে ভর্তি না হতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেন। এরপরও যেসব শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতো তাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়। এমপিও আবেদনের জন্য বছরের পর বছর স্থানীয় আওয়ামী সংসদ সদস্যের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মেলেনি ‘ডিও লেটার’। দীর্ঘ ১৮ বছরে কলেজের জন্য কোনো প্রকার সরকারি অনুদানও আসেনি।
চার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত উপজেলার স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানটি ছিল বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। ১৮ বছর আগে যেসব শিক্ষক তাদের ভাগ্যবদলের আশায় শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের সঙ্গে নিজেদের নাম যুক্ত করেছিলেন তাদের দুর্দশা পিছু ছাড়েনি। এসব শিক্ষক দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হয়েও আজ তারা সমাজের কাছে অসম্মানিত,পরিবারের কাছেও বোঝা। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা এসব শিক্ষকদের দাবি, তাদের সঙ্গে যে অন্যায় করা হয়েছে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

কলেজের ডিগ্রি সেকশনের প্রভাষক মো. ছামাদুজ্জামান বলেন,‘২০০৩ সালে আমাকে শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের ডিগ্রি সেকশনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই থেকে ২১ বছর ধরে বেতন-ভাতা তো দূরের কথা, কলেজ থেকে কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, বিগত দেড় যুগ ধরে আমরা বৈষম্যের চরম সীমা অতিক্রম করে আসছি। গত আওয়ামীলীগ সরকারের কাছে আমাদের একটাই অযোগ্যতা আমরা শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। অনতিবিলম্বে ডিগ্রি পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করে নিয়োগদানের তারিখ থেকে সমস্ত বকেয়া পরিশোধের অনুরোধও করছি।’

কলেজের অধ্যক্ষ মো. শওকত আলী বলেন,‘উপজেলার সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চনার শিকার শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজ। সব যোগ্যতা থাকার পরও শুধু নামের কারণে ডিগ্রি সেকশনের এমপিও দেওয়া হয়নি। এমপিওর কাগজপত্র জমা দিতে শত চেষ্টার পরও ডিও লেটার দেননি আওয়ামীলীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য। বরং উপজেলার শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপীঠকে দুর্বল করতে সকল ঘৃণ্য অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে।’

তিনি বলেন, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করতেও পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ভর্তি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের হতে হয়েছে লাঞ্ছিত। কলেজটির ডিগ্রি সেকশনের শিক্ষকদের প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে তা অকল্পনীয়। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে তারা বিনা বেতনে পাঠদান করছেন এটা অমানবিক। আমি তাদের সমস্ত বকেয়া পরিশোধের দাবি জানাই। একই সঙ্গে কলেজটি জাতীয়করণের মাধ্যমে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

শেখ ইমন/ইবিটাইমস