ইবিটাইমস ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, “বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বর্গভূমি।” আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের দিকে তাকালেই তা অনুধাবন করতে বেশি সময় লাগে না।
তিনি বলেন, “এই দেশে একেবারেই কোনো ঘটনা ঘটে না-এমন নয়। মাঝেমধ্যে সংঘাত ঘটে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব সংঘাত রাজনৈতিক কারণে, সাম্প্রদায়িক কারণে নয়।”
শনিবার (১ নভেম্বর) লালমনিরহাট জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমরা বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে বড় হয়েছি, স্কুল-কলেজে গিয়েছি, চাকরি করেছি। একসঙ্গে বাজারে যাই, একসঙ্গে বসবাস করি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরা একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। চব্বিশে জুলাইয়ের বিপ্লবেও আমরা একসঙ্গে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি।”
তিনি বলেন, “এই দেশ আমাদের সবার। আমার যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীরও সমান অধিকার রয়েছে। তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো-এই অধিকার যেন কেউ ক্ষুণ্ন করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।”
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব তুলে ধরে ড. খালিদ বলেন, “কোনো দেশে যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না থাকে, গোষ্ঠী-গোষ্ঠী কিংবা সম্প্রদায়-সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত হয়, তাহলে সে দেশ কখনও উন্নত হতে পারে না। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, পর্যটকদের আগমন ঘটবে না।” তিনি দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সকল ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
লালমনিরহাটকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উর্বর ভূমি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখানে মসজিদ, মন্দির, গির্জায় কোনো ধরনের বিবাদ বা বিসংবাদ নেই। এই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ আরও সুদৃঢ় করতে হবে।” তিনি লালমনিরহাট জেলার মাদকাসক্তি, কিশোর গ্যাংসহ অন্যান্য সামাজিক সমস্যা নিরসনে সবাইকে একযোগে কাজ করার অনুরোধ জানান।
বিগত ১৭ বছরে লালমনিরহাটে উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপনারা এমন প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন, যিনি লালমনিরহাটকে সোনায় মুড়িয়ে দিতে পারবেন। আমরা অভিযোগ শুনতে চাই না, কাজ দেখতে চাই।”
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিষয়ে হাদিস উদ্ধৃত করে ড. খালিদ বলেন, “মহানবী (সা.) জীবনে বহু যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তিনি যুদ্ধের প্রাক্কালে সাহাবীদের ডেকে নির্বিচারে গাছ কাটতে, নারী ও শিশুদের হত্যা করতে এবং মন্দির বা গির্জায় অবস্থানরতদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। হযরত (সা.)-এর এই সমরনীতি থেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির পাওয়া যায়।”
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা নায়েবে আমীর মো. হাবিবুর রহমান এবং বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এইচ এম বরকতুল্লাহ।
ঢাকা/এসএস










