আগামী ২০২৬ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে দক্ষ কর্মী (Skilled Worker) ও স্কেল-আপ (Scale-up) ভিসার আবেদনকারীদের জন্য ‘এ-লেভেল’ মানের ইংরেজি জ্ঞান বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে
ইউরোপ ইডেস্কঃ বুধবার (১৫ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যম এতথ্য জানিয়েছে। নতুন এই পরিবর্তনগুলো গত মে মাসে প্রকাশিত হোয়াইট পেপারের অংশ, যার মূল লক্ষ্য অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো।
যুক্তরাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ জানিয়েছেন, “যারা এ দেশে আসবেন, তাদের ভাষা শেখা ও সমাজে অবদান রাখা অপরিহার্য।” তিনি বলেন, “এই দেশ সবসময় অবদানকারীদের স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু যারা ভাষা শেখে না, তারা জাতীয় জীবনে অংশ নিতে পারে না—এটি গ্রহণযোগ্য নয়।”
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ভিসা আবেদনকারীদের হোম অফিস অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ইংরেজি ভাষার চারটি দিক—বলা, শোনা, পড়া ও লেখা—পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বর্তমানের ‘বি১’ স্তরের (জিসিএসই মান) পরিবর্তে এখন ‘বি২’ স্তরের দক্ষতা লাগবে, যা ‘এ-লেভেল’ সমতুল্য। অর্থাৎ আবেদনকারীকে আরও জটিল ও বিমূর্ত বিষয়ের ওপর সাবলীলভাবে মত প্রকাশের সক্ষমতা দেখাতে হবে।
দক্ষ কর্মী ভিসার ক্ষেত্রে প্রার্থীকে সরকার অনুমোদিত কোনো নিয়োগদাতার অধীনে বছরে অন্তত £৪১,৭০০ আয় করতে হবে বা সংশ্লিষ্ট পেশার নির্ধারিত হার যেটি বেশি, সেটি প্রযোজ্য হবে। স্কেল-আপ ভিসা দ্রুত বর্ধনশীল ব্রিটিশ কোম্পানিতে কাজের সুযোগ দেয়। অন্যদিকে, ‘হাই পটেনশিয়াল ইন্ডিভিজুয়াল’ (HPI) ভিসা দেওয়া হয় গত পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বসেরা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জনকারীদের।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন অবজারভেটরির পরিচালক ড. মাদেলিন সাম্পশন বলেন, “সরকার এক ধরনের ভারসাম্য খুঁজছে—ভালো ইংরেজি জানা অভিবাসীদের আনা এবং একই সঙ্গে দক্ষ কর্মীর ঘাটতি পূরণের সুযোগ রাখা।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত বিশেষ করে মাঝারি দক্ষতার পেশায় প্রভাব ফেলবে, যেখানে ভাষা দক্ষতার চাহিদা সাধারণত কম।”
অভিবাসন আইনজীবী আফসানা আখতার বিবিসিকে বলেন, “এ-লেভেল মানের ইংরেজি চাওয়া অন্যায্য, কারণ অনেক ব্রিটিশ নাগরিকও হয়তো এমন মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারবে না।” তার মতে, “জিসিএসই স্তরের ইংরেজি যথেষ্ট, কারণ এখানে এসে সমাজে মিশলে অভিবাসীদের ভাষা দক্ষতা স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।”
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নতুন নিয়ম কার্যকর হলে প্রতিবছর যুক্তরাজ্যে অভিবাসীর সংখ্যা এক লক্ষ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ২০২৪ সালে নেট মাইগ্রেশন দাঁড়ায় ৪৩১,০০০—যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই অভিবাসন ব্যবস্থা হোক নিয়ন্ত্রিত, বাছাইকৃত ও ন্যায্য।”
এ ছাড়া হোয়াইট পেপারে আরও কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। যেমন, ২০২৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে দেশে চাকরি খোঁজার সময়সীমা দুই বছর থেকে কমিয়ে ১৮ মাস করা হবে। পাশাপাশি, মাসিক আর্থিক প্রমাণের পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশি কর্মী স্পনসর করতে নিয়োগদাতাদের ‘ইমিগ্রেশন স্কিলস চার্জ’ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে, নতুন নীতির লক্ষ্য হলো—ইংরেজি ভাষা দক্ষ, উচ্চমানের কর্মী আকর্ষণ করা এবং একই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন প্রবাহ কমিয়ে আনা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে দক্ষ শ্রমিকের সংকট আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
যুক্তরাজ্য সরকার অভিবাসন প্রক্রিয়াকে কঠোরতর করছে, যাতে শুধুমাত্র ভাষা ও দক্ষতায় যোগ্য ব্যক্তিরাই দেশে কাজের সুযোগ পান। কিন্তু সমালোচকেরা প্রশ্ন রেখেছেন —এই কঠোরতা কি অভিবাসনের গুণগত মান বাড়াবে, নাকি শ্রমবাজারে নতুন সংকট ডেকে আনবে ?
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস