ভিয়েনা ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
‘তৃতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি নেই, এটা খুবই খারাপ’: ট্রাম্প তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে চলছে পঞ্চম দিনে আপিল শুনানি বাংলাদেশে বৃহৎ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে ইইউ : মিলার ওয়ার্ল্ড জার্নালিস্ট ক্লাব এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন মাহবুবুর রহমান লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন ১৭৪ বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামের পতন অব্যাহত জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাথে জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার সাক্ষাৎ শহীদদের স্মরণে লালমোহনে জামায়াতে দোয়া মোনাজাত গণভোট আয়োজনে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে : আলী রীয়াজ অস্ত্র উদ্ধার করা অভিযান অব্যাহত থাকবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

লালমোহন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই রোগী: ছাদে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তারা

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ১১:২৬:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৮৫ সময় দেখুন

জাহিদ দুলাল, ভোলা দক্ষিণ : প্রায় তিন লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই যেন রোগীতে পরিণত হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুইতলা বিশিষ্ট ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

ওই ভবনটিতে রয়েছে জরুরি বিভাগ, অন্তঃবিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস কক্ষ। ওই ভবনটির বিভিন্ন স্থান থেকে এখন খসে পড়ছে পলেস্তরা, ফাটল ধরেছে ভবনের ছাদ, বিম ও দেয়ালে, বৃষ্টি হলে চুঁইয়ে পড়ে পানি।

এতে চিকিৎসক, নার্স ও রোগীসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এরআগেও জরুরি বিভাগের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান রোগী ও চিকিৎসকসহ কর্তব্যরতরা।

জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে একটি দুইতলা ভবনে ৩১ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এরপর ২০০৮ সালে তিনতলা ভবন নির্মাণ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়। তিনতলা বিশিষ্ট ওই ভবনটিতে বহির্বিভাগ ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ অপারেশন থিয়েটার এবং ১৯টি শয্যা করা হয়।

তবে এরইমধ্যে পুরনো ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। কয়েকবার মেরামত করেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। এখন চরম নড়বড়ে অবস্থা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরনো দুইতলা বিশিষ্ট ভবনটি। অথচ সেই ভবনেই রয়েছে ইউএইচএফপিও, চিকিৎসক ও নার্স-মিডওয়াইফদের কক্ষ।

এছাড়া জরাজীর্ণ দুইতলা ভবনটিতে চলছে জরুরি বিভাগ, অন্তঃবিভাগ, ল্যাব ও ইপিআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা কার্যক্রম। সবশেষ গত তিন বছর আগে পুরনো ভবনটি মেরামত করা হলেও এখন ফের ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।

এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবাপ্রত্যাশী রোগী, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্টাফরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা কয়েকজন রোগীর স্বজন মো. ইসমাইল, আব্দুর রহিম, আছিয়া ও করিমজান বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে, ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তরা।

এসব দেখে অনেক ভয় হচ্ছে, তারপরও রোগী ভর্তি করেছি। কারণ আমরা গরীব মানুষ, ভোলা-বরিশাল যাওয়ার মতো অত টাকা নেই আমাদের। ভর্তির পর থেকে এখন একদিকে রোগীকে নিয়ে চিন্তা, অন্যদিকে ভবনের পলেস্তরা খসে পড়ার আতঙ্কে রয়েছি। দ্রুত এই ভবনটি নতুন করে নির্মাণ করা না হলে প্রাণ বাঁচাতে এসে হয়তো প্রাণটাই হারাতে হতে পারে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপার ভাইজার মোসা. তাসলিমা বেগম জানান, এই ভবনটি সত্যিই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও আমাদের নার্স-মিডওয়াইফরা চরম আতঙ্ক নিয়ে রোগীদের নিজেদের সাধ্যের ভেতর আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিচ্ছেন। এতে করে রোগী ও আমরা চরমে উদ্বিগ্ন। তাই রোগীসহ আমাদের কর্তব্যরত নার্স-মিডওয়াইফদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য দুইতলা পুরনো এই ভবনটির স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মো. ওমর ফারুক বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুইটি ভবন। এরমধ্যে একটি দুইতলা, আরেকটি তিনতলা। দুইতলা ভবনটি বহু বছরের পুরনো। এরপরও এই ভবনটিতেই চলছে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। দুইতলা ভবনটি এখন দিন যত যাচ্ছে ততই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তরা খসে পড়ছে। কিছু কিছু স্থান দিয়ে পানি চুঁইয়ে পড়ছে, ফাটল ধরেছে বহুস্থানে। তবুও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অফিসের কার্যক্রম চালাচ্ছি। তবে এভাবে খুব বেশি দিন কার্যক্রম চালানো যাবে না। দ্রুত এখানে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মহসীন খান জানান, ভবনটি অনেক পুরনো হওয়ায় এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এই ভবনটিতে ঝুঁকি নিয়ে সবাইকে কাজ করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকবার মেরামতও করা হয়েছে। তবে যতদিন যাচ্ছে ততই ঝুঁকি বাড়ছে। তাই নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি সবদিক বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ দ্রুত একটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।
ঢাকা/ইবিটাইমস/এসএস

জনপ্রিয়

‘তৃতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি নেই, এটা খুবই খারাপ’: ট্রাম্প

Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

লালমোহন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই রোগী: ছাদে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তারা

আপডেটের সময় ১১:২৬:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

জাহিদ দুলাল, ভোলা দক্ষিণ : প্রায় তিন লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল ভোলার লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই যেন রোগীতে পরিণত হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুইতলা বিশিষ্ট ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

ওই ভবনটিতে রয়েছে জরুরি বিভাগ, অন্তঃবিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস কক্ষ। ওই ভবনটির বিভিন্ন স্থান থেকে এখন খসে পড়ছে পলেস্তরা, ফাটল ধরেছে ভবনের ছাদ, বিম ও দেয়ালে, বৃষ্টি হলে চুঁইয়ে পড়ে পানি।

এতে চিকিৎসক, নার্স ও রোগীসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এরআগেও জরুরি বিভাগের ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান রোগী ও চিকিৎসকসহ কর্তব্যরতরা।

জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে একটি দুইতলা ভবনে ৩১ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এরপর ২০০৮ সালে তিনতলা ভবন নির্মাণ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়। তিনতলা বিশিষ্ট ওই ভবনটিতে বহির্বিভাগ ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ অপারেশন থিয়েটার এবং ১৯টি শয্যা করা হয়।

তবে এরইমধ্যে পুরনো ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। কয়েকবার মেরামত করেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। এখন চরম নড়বড়ে অবস্থা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরনো দুইতলা বিশিষ্ট ভবনটি। অথচ সেই ভবনেই রয়েছে ইউএইচএফপিও, চিকিৎসক ও নার্স-মিডওয়াইফদের কক্ষ।

এছাড়া জরাজীর্ণ দুইতলা ভবনটিতে চলছে জরুরি বিভাগ, অন্তঃবিভাগ, ল্যাব ও ইপিআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা কার্যক্রম। সবশেষ গত তিন বছর আগে পুরনো ভবনটি মেরামত করা হলেও এখন ফের ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।

এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবাপ্রত্যাশী রোগী, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্টাফরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা কয়েকজন রোগীর স্বজন মো. ইসমাইল, আব্দুর রহিম, আছিয়া ও করিমজান বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে, ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তরা।

এসব দেখে অনেক ভয় হচ্ছে, তারপরও রোগী ভর্তি করেছি। কারণ আমরা গরীব মানুষ, ভোলা-বরিশাল যাওয়ার মতো অত টাকা নেই আমাদের। ভর্তির পর থেকে এখন একদিকে রোগীকে নিয়ে চিন্তা, অন্যদিকে ভবনের পলেস্তরা খসে পড়ার আতঙ্কে রয়েছি। দ্রুত এই ভবনটি নতুন করে নির্মাণ করা না হলে প্রাণ বাঁচাতে এসে হয়তো প্রাণটাই হারাতে হতে পারে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপার ভাইজার মোসা. তাসলিমা বেগম জানান, এই ভবনটি সত্যিই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও আমাদের নার্স-মিডওয়াইফরা চরম আতঙ্ক নিয়ে রোগীদের নিজেদের সাধ্যের ভেতর আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিচ্ছেন। এতে করে রোগী ও আমরা চরমে উদ্বিগ্ন। তাই রোগীসহ আমাদের কর্তব্যরত নার্স-মিডওয়াইফদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য দুইতলা পুরনো এই ভবনটির স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মো. ওমর ফারুক বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুইটি ভবন। এরমধ্যে একটি দুইতলা, আরেকটি তিনতলা। দুইতলা ভবনটি বহু বছরের পুরনো। এরপরও এই ভবনটিতেই চলছে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। দুইতলা ভবনটি এখন দিন যত যাচ্ছে ততই জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তরা খসে পড়ছে। কিছু কিছু স্থান দিয়ে পানি চুঁইয়ে পড়ছে, ফাটল ধরেছে বহুস্থানে। তবুও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অফিসের কার্যক্রম চালাচ্ছি। তবে এভাবে খুব বেশি দিন কার্যক্রম চালানো যাবে না। দ্রুত এখানে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মহসীন খান জানান, ভবনটি অনেক পুরনো হওয়ায় এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এই ভবনটিতে ঝুঁকি নিয়ে সবাইকে কাজ করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকবার মেরামতও করা হয়েছে। তবে যতদিন যাচ্ছে ততই ঝুঁকি বাড়ছে। তাই নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি সবদিক বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ দ্রুত একটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।
ঢাকা/ইবিটাইমস/এসএস