জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক: অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জয়ের দেখা পেল সফরকারী বাংলাদেশ। রবিবার রাতে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এই জয়ে  সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা। এই সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ এবং তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজটি বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ না হলেও জয়ের জন্য মরিয়া  ছিলো টাইগাররা।

গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে বৃষ্টির কারনে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটি ৪১ ওভারে নামিয়ে আনা  হয়। টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেক হয় স্পিনার নাসুম আহমেদের। বল হাতে প্রথম আক্রমনেও আসেন নাসুম। প্রথম ওভারে ১ রান দেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। রানের খাতা খোলার আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার শাই হোপকে বোল্ড করেন ফিজ।

শুরুতে উইকেট পড়লে সাবধানে খেলতে থাকেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক ওপেনার কাইল মায়ার্স ও শামারাহ ব্রুকস। তাই প্রথম ১১ ওভারে ৩২ রান পায় ক্যারিবীয়রা। এসময় ৫ ওভার বল করে ৩ মেডেনে ৩ রান দেন নাসুম। ইনিংসের ১২ ও নিজের তৃতীয় ওভারে উইকেটের দেখা পান স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। দারুন এক ডেলিভারিতে ২৭ বলে ১০ রান করা  মায়ার্সকে বোল্ড করেন মিরাজ। ব্রুকসের সাথে ৬১ বলে ৩১ রান যোগ করেন মায়ার্স। ৩২ রানে ২ উইকেট পতনে পরও সাবধান ছিলেন ব্রুকস ও চার নম্বরে নামা ব্রান্ডন কিং। বাংলাদেশ বোলারদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা। ২০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২ উইকেটে ৫৫। ২১তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন পেসার শরিফুল ইসলাম। চতুর্থ বলে কিংকে ও পরের ডেলিভারিতে ব্রুকসকে শিকার করেন তিনি। কিং ৮ ও ব্রুকস ৩৩ রান করেন। কিং-ব্রুকস ৫৬ বলে ২৩ রান যোগ করেন। এরপর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক নিকোলাস পুরান ও রোভম্যান পাওয়েল। তবে তাদের বেশি দূর যেতে দেননি মিরাজ। ৯ রানে পাওয়েলকে লেগ বিফোর আউট করেন মিরাজ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ১শতে পৌঁছানোর আগে পুরানের বিদায়ও নিশ্চিত করেন মিরাজ। ১৮ রান করে মিরাজের বলে বোল্ড হন পুরান। ৯১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দ্রুত গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের সেই পথে ছিটকে দেন শরিফুল। ৯৬ থেকে ১১০ রানে পৌঁছাতে আরও ৩ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরমধ্যে আকিল হোসেন ৩ রানে রান আউট হন। তবে রোমারিও শেফার্ড ১৫ ও গুদাকেশ মোটি ৭ রান করে শরিফুলের শিকার হন। ৩৪তম ওভারে ১১০ রানে নবম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে শেষ উইকেটে ৪৫ বলে ৩৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন এন্ডারসন ফিলিপ ও জেইডেন সিলেস। ফলে ৪১ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪৯ রানের সম্মানজনক সংগ্রহ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফিলিপ ২১ ও সিলেস ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশ শরিফুল ৮ ওভারে ৩৪ রানে ৪ উইকেট নেন। ওয়ানডেতে এটিই সেরা বোলিং ফিগার শরিফুলের। মিরাজ ৩৬ রানে ৩টি ও মুস্তাফিজুর ৩৪ রানে ১টি উইকেট নেন।

১৫০ রানের টার্গেটে তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারানো ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। আকিলের বলে লেগ বিফোর আউট হন লিটন দাস। রিভিউ নিলেও, আম্পায়ারস কলে থামতে হয় ১ রান করা  লিটনকে। শুরুতে লিটনকে হারালেও তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন অধিনায়ক তামিম। মারমুখী মেজাজে ছিলেন তামিম। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় দ্রুতই রান তুলছিলেন তিনি। কিন্তু অষ্টম ওভারে নিজের ভুলেই রান আউট হন ২৫ বলে ৩৩ রান করা তামিম।  শান্তর সাথে ৩০ বলে ৪০ রানের জুটি গড়েন তামিম। সেখানে তামিমের অবদান ছিলো ১৮ বলে ২৫ রান। দলীয় ৪৯ রানে তামিমকে হারানোর পর শান্তকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দু’জনের জুটিতে বাংলাদেশের স্কোর তিন অংকের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু দলীয় ৯৮ রানে থামতে হয় শান্তকে। ৫টি চারে ৪৬ বলে ৩৭ রান করেন শান্ত। শান্তর বিদায়ে ক্রিজে আসেন আফিফ হোসেন। কিন্তু ৯ রানের বেশি করতে পারেননি আফিফ। ফলে ২৩ ওভার শেষে ১১১ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জয় থেকে ৩৯ রানে দূরে ছিলো বাংলাদেশ। বল বাকী ছিলো ১০৮টি। তাড়াহুড়া না করে পঞ্চম উইকেটে ৫৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রান করে ৫৫ বল বাকী রেখেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মাহমুদুল্লাহ ও নুরুল হাসান। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৯ বলে অপরাজিত ৪১ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। ২০ রানে অপরাজিত থাকেন নুরুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকিল-মোটি ও পুরান ১টি করে উইকেট নেন।

৩৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা বাংলাদেশের মিরাজ।

আগামী ১৩ জুলাই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

ডেস্ক/ইবিটাইমস/এমএইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »