ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট; পিরোজপুর : করোনা আক্রান্ত মায়ের কোলে জন্ম নেয়া নব জাতকের ভাগ্যে জোটে নি মায়ের মুখ দেখা। কন্যাটি জন্ম নেয়ার সাথে সাথেই নবজাতকের সংক্রামন থেকে রক্ষা করতে নিরাপদে নেয়া হয়। ওই সন্তানটি জন্মের আট ঘন্টা পর করোনা আক্রান্ত হয়ে মায়ের মৃত্যু হয়। মায়ের দুধ কপালে জুটেনি নবজাতকের। করোনার কাছে মৃত্যু যুদ্ধে হেরে যাওয়া ওই মায়ের নাম প্রিয়ংকা সমাদ্দার (২৬)।
মঙ্গলবার (২০ জুলাই) বিকালে হিন্দু ধর্মীয় সৎকারের মাধ্যমে ওই নবজাতকের কাছ থেকে চিরকালের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মা প্রিয়ংকা সমদ্দারকে।
আর এ সময় স্থানীয় সহ মৃত্যের পরিবারে নেমে আসে এক কান্নার রোল। এর আগে
গতকাল সোমবার (১৯ জুলাই) রাতে খুলানা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গৃহ বধু প্রিয়ংকা। মৃত্যু প্রিয়ংকা পিরোজপুরের শিকারপুর এলাকার ব্যাংক কলোনীর বাসিন্দা ও অগ্রণীব্যাংক কর্মকর্তা তন্ময় সমদ্দারের স্ত্রী।
ওই দম্পত্তির রয়েছে ৪ বছরের আরো একটি কন্যা সন্তান। কিন্তু তাকে দেখার এখন এক চরম সমস্যা, কেননা ব্যাংক কর্মকর্তা তন্ময় সমদ্দারও করোনায় আক্রান্ত। তিনিও গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
এ দিকে ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী প্রিয়ংকা সমদ্দার মৃত্যুর মাত্র তিনদিন আগে প্রিয়াঙ্কার মা হাসি তালুকদার করোনায় আক্রান্ত হয়ে পিরোজপুরের কাউখালীর নিজ বড়িতে বসে মারা যায়। এর ২ মাস আগে মারা যান বাবা বিমল তালুকদার।
বুধবার (২০ জুলাই) বিকালে প্রিয়াঙ্কাকে কাউখালীতে তার বাবা-মায়ের সমাধীর পাশে সমাহিত করা হয়। অগ্রণীব্যাংক কর্মকর্তা তন্ময় সমদ্দার করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় নবজাতক ও ৪ বছরের কন্যা এ ২ অবুঝ শিশু কন্যা সন্তান দুটিকে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনরাও পড়েছেন বিপাকে।
স্বামী তন্ময় সমদ্দারের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৫বছর আগে পারিবারিক ভাবে তন্ময়ের সাথে প্রিয়ংকা সমদ্দারের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তারা ছিলেন বেশ সুখেই । কিন্তু হঠাৎ যেনো ওই দম্পত্তির জীবনে নেমে আসে এক অমাবশ্যার মেঘ। শুরু হয় একের পর এক স্বজন হারানোর প্রতিযোগীতা। বাবার মৃত্যুর দেড় মাসের মাথায় পরিবারটির উপর ছোবল হানে করোনা। প্রিয়াঙ্কা দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হওয়ায় তাকে কাউখালী মায়ের কাছে রেখে আসা হয়।
সেখানেই তিনি ও তার মা করোনায় আক্রান্ত হন। পরে তার স্বামী তন্ময় সমাদ্দার করোনায় আক্রান্ত হন। গর্ভবতী হওয়ায় প্রিয়াঙ্কাকে খুলনা আড়াইশ বেড হাসাপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রিয়াঙ্কা হাসপাতালে থাকা অবস্থায় এদিকে তার মা হাসি তালুকদার করোনায় মারা যান।
সোমবার (১৯ জুলাই) রাত সাড়ে ৮ প্রিয়াঙ্কা মারা যান। এর আট ঘন্টা আগে দুপুরে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। মৃত্যু প্রিয়ংকার সৎকার কার্যে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় সমাজ সেবক আব্দুল লতিফ খসরু বলেন, সৎকারের সময় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুই মাসের মাসের মধ্যে
একটি পরিবারের তিনটি লাশের সমাধী করা হলো। ভুমিষ্ট শিশু জন্মেই মাকে হারালো। তন্ময়ের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। বাহির থেকে যারাই আসছে তারাই পরিবারটির কথা চিন্তা করে কষ্টে কেঁদে ফেলেন।
এইচ এম লাহেল মাহমুদ/ইবিটাইমস