নিউজ ডেস্কঃ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন।অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এম.এন.এ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এম.এন.এ। নবগঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
পরবর্তীতে এই প্রবাসী সরকারই নেতৃত্ব দিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের। ২৫ শে মার্চ কালোরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চ লাইট নামে গণহত্যা শুরুর পর শরণার্থীরা, রাজনৈতিক নেতারা যখন ভারতে আশ্রয় নিতে শুরু করেন তখন বৈদ্যেনাথতলায় এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয় ইন্দিরা-তাজউদ্দিন বৈঠকের পর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’কে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠন করা হয় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা। বিশ্বে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের।
পরবর্তীতে সেই বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরন করা হয় মুজিবনগর। মুজিবনগর মন্ত্রীরা শপথ গ্রহণ পূর্বক স্থান ত্যাগ করার পরে কিছুক্ষনের মধ্যে পাকিস্তানি সৈন্যরা পৌঁছে যায় মুজিবনগরে। চরম ক্রোধে তারা তছনছ করে গোটা এলাকা। কিন্তু ততক্ষণে বিশ্ব জেনে যায় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের জন্মের সংবাদ। সেই
অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্বেই পরিচালিত নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে এবং এই যুদ্ধে শহীদ হন ৩০ লক্ষ বাঙ্গালী,আর সম্ভ্রম হারান ২ লক্ষ মা-বোন। তাদের এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই অস্থায়ী সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়। বঙ্গবন্ধু দেশে প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৭২ সালের ১২ ই জানুয়ারী এই অস্থায়ী সরকারের বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড তথা প্রধান নেতৃবৃন্দকে নিয়ে মেহেরপুরের মুক্তাঞ্চলের বৈদ্যনাথতলায় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের পর ১৮ ই এপ্রিল মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন হয়। অস্থায়ী সরকারের কাঠামো ছিল নিম্নরূপ:
মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে থাকে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম নিম্নরূপ:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি,সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি (রাষ্ট্রপতি পাকিস্তানে অন্তরীণ থাকার কারণে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের দায়িত্বপ্রাপ্ত) তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা, তথ্য, সম্প্রচার ও যোগাযোগ, অর্থনৈতিক বিষয়াবলি, পরিকল্পনা বিভাগ, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম, সমাজকল্যাণ, সংস্থাপন এবং অন্যান্য যেসব বিষয় কারও ওপর ন্যস্ত হয়নি তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হন তিনি।
খন্দকার মোশতাক আহমদকে দেয়া হয়েছিল পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এম মনসুর আলীকে দেয়া হয়েছিল অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে দেয়া হয়েছিল স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়।
কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস