ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী বর্ষিয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র মারা গেছেন
ইবিটাইমস ডেস্কঃ সোমবার (২৪ নভেম্বর) ভারতের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ফিল্মফেয়ার থেকে বলা হয়েছে, বলিউডের বর্ষিয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র মারা গেছেন। পত্রিকাটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, বলিউডের হি-ম্যান খ্যাত অভিনেতা ধর্মেন্দ্র আর নেই। ৮৯ বছর বয়সে তিনি আজ মৃত্যুবরণ করছেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ভারতের সিনেমার ছয় দশকের একটি সোনালি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হলো।
সম্প্রতি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। তখন তার মৃত্যুর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। অবশেষে সব গুঞ্জন থামিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন ধর্মেন্দ্র।
বলিউডের সোনালি যুগে যখন প্রেম মানেই কবিতা, নায়ক মানেই আকর্ষণ ও আভিজাত্যের প্রতীক তখনই আবির্ভাব হয় এক এমন অভিনেতার। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে কোমল হৃদয়ের প্রেমিক, নির্ভীক যোদ্ধা এবং পরিপূর্ণ ভদ্রলোক। তিনিই ধর্মেন্দ্র। ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে ‘হ্যান্ডসাম হিরো’ উপাধি অর্জন করেন নিজের অভিনয়, ব্যক্তিত্ব ও মানবিকতায়।
এক নজরে ধর্মেন্দ্র: ১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের নাসরালিতে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ধর্মেন্দ্র। তার বাবা কৃষিকাজের পাশাপাশি গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। বসবাস করা ধর্মেন্দ্রর পরিবারের মূল জীবিকা ছিল কৃষি কাজ। বাবা ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
পাঞ্জাবের এক ছোট গ্রাম থেকে উঠে এসে হয়েছিলেন বলিউডের ‘হি-ম্যান’। ষাট দশকের ক্যারিয়ারে তিনশোর বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।
তার জীবনের আলোচিত কিছু বিষয় এনেছে ভারতের নিউজ এইট্টিন। ধর্মেন্দ্র গ্রামের প্রাইমারী স্কুল শেষ করে লালটন কালান সরকারি সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশোনা করেন, পরে ফাগওয়ারার রামগড়িয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট সম্পন্ন করেন। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর আর কোনও প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেওয়া হয়নি তার। শৈশব থেকে সিনেমার প্রতি গভীর টান ছিল এই কিংবদন্তীর।
যে প্রতিযোগিতা ভাগ্য বদলে দেয় তার: ১৯৫৮ সালে ফিল্মফেয়ারের ট্যালেন্ট কনটেস্টে প্রথম স্থান ধর্মেন্দ্রর জীবন বদলে দেয়। সেই জয়ের পর পাঞ্জাবের গণ্ডি থেকে বের হয়ে পা রাখেন বিশাল একটি দুনিয়ায়। দুই বছর পর ১৯৬০ সালে অর্জুন হিংগোরানির ‘দিল ভি তেরা হম ভি তেরে’ দিয়ে শুরু হল ধর্মেন্দ্রর বলিউডযাত্রা।
প্রথম সিনেমা পায়নি সাফল্য: গ্রিক দেবতার মত চেহারার ধর্মেন্দ্রর প্রথম সিনেমা দিল ভি তেরা হম ভি তেরে’ বক্স অফিসকে খুব একটা সন্তুষ্ট করেনি। ‘শোলে’, ‘শবনম’, ‘আনপাড়’, ‘ফুল অউর পাথ্থর’, ‘বন্দিনী’ সিনেমাগুলোর জনপ্রিয়তা ধর্মেন্দ্রেকে প্রযোজন-পরিচালকদের কাছে ভাবিয়ে তোলে।
তৎকালীন সুপারস্টোর রাজেশ খান্না ঝড়েও টিকে থাকা এক অভিনেতা ষাটের দশকের শেষের দিকে পরপর কয়েকটি সুপারহিট সিনেমা দর্শকদের উপহার দেন রাজেশ খান্না। সেই ঝড়ে সমসাময়িক কয়েকজন অভিনেতার ক্যারিয়ার থমকে যায়। সে সময় সাহস নিয়ে কাজ করেছেন ধর্মেন্দ্র। ‘আয়া সাওয়ান ঝুমকে’, ‘ইয়াকিন’, ‘পেয়ার হি পেয়ার’, ‘আদমি অর ইনসান’ এর মত সিনেমাগুলো করে ধর্মেন্দ্র নিজের জমি শক্ত করেন।
‘হি-ম্যানের’ পেছনে অন্য অভিনেতা: তার পেশীবহুল শরীর এবং সিনেমায় অ্যাকশনের জন্য ডাকা হত ‘হি-ম্যান’ নামে। তবে ট্রাজেডি সিনেমাতেও তাকে পাওয়া গেছে। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া হৃষিকেশ মুখার্জির ‘সত্যকাম’ সিনেমায় তেমনই একটি সিনেমা ধর্মেন্দ্রর। এই সিনেমা জিতেছিল জাতীয় পুরস্কারও।
নীরবে প্রযোজক হয়েছিলেন: অভিনেতাদের প্রযোজক হওয়ার বিষয়টি প্রচলন পাওয়ার আগে থেকেই চলচ্চিত্রের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করেছিলেন ধর্মেন্দ্র। তার প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে আসে ‘বেতাব’; যে সিনেমায় বড় ছেলে সানি দেওলের অভিষেক হয়। পরে বানান ‘ঘায়েল’। যা তার ছেলেদের ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করেছিল।
ধর্মেন্দ্র ছিলেন ‘চরিত্রাভিনেতা’: ধর্মেন্দ্র ‘চরিত্রাভিনেতা’ হয়েছেন বহু সিনেমায়ভ ২০২৩ সালে ‘রকি আউর রানি কি প্রেম কাহানি’তে স্মৃতিভ্রষ্ট এক বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করে নতুন করে আলোচনায় আসেন ধর্মেন্দ্র। ‘লাইফ ইন এ মেট্রোৱ, ‘জনি গাদ্দার’সহ আরো কয়েকটি সিনেমায় তা দেখা গেছে।
ভালোবাসতেন মাটির ঘ্রাণ: জীবনের ছয় দশক সিনেমার সঙ্গে কাটিয়ে দেওয়া ধর্মেন্দ্র ভালোবাসতেন মাটির কাছে থাকতে। নিজের নিজের লোনাভালার ফার্ম হাউসে কৃষিকাজ করতেন, ট্রাক্টর চালাতেন। তিনি নিজের খামার, শাকসবজি আর গবাদিপশুর ছবি শেয়ার করতেন সোশাল মিডিয়ায়।
ধর্মেন্দ্র ব্যাক্তিগত জীবনে দুই বিবাহ করেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তার দুই ছেলে সানি দেওল ও ববি দেওল মুম্বাই চলচ্চিত্রে বেশ নাম কুড়ান। ধর্মেন্দ্রের দ্বিতীয়
স্ত্রী দক্ষিণ ভারতের ও মুম্বাই চলচ্চিত্রের আরেক সুপারস্টোর নায়িকা হেমা মালিনী। হেমা মালিনীর দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে এশা দেওল ভারতীয়
চলচ্চিত্রে বেশ সাফল্য লাভ করেন।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস





















