ভিয়েনা ১২:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
হবিগঞ্জে গ্রীষ্মকালীন সুইট ব্যাল্ক টু জাতের তরমুজ চাষে লাভবান কৃষকরা টাঙ্গাইলে ৭ দিনব্যাপী ভাসানী মেলা উদ্বোধন জর্জিয়ায় তুরস্কের সামরিক বিমান দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত রোহিঙ্গাদের জন্যে আবারও চাল সহায়তা দিলো দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনে যে সব দলিলাদি প্রয়োজন ১৯৭০ সালের ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় গোর্কি ইউক্রেন ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান চুরির চেষ্টার অভিযোগ কালিহাতীতে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় সিএনজিতে আগুন, এক যাত্রীর মৃত্যু টাঙ্গাইলে হাসপাতাল থেকে ১৩ দালাল আটক মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ ও বিক্রিতে চলে জীবিকা

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৭:০৬:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪
  • ১৮ সময় দেখুন

ভোলা দক্ষিণ প্রতিনিধি: বর্ষা ঋতুতে সৌখিন মাছ শিকারীরা বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করেন। মাছ শিকারের জন্য তথন তারা বিভিন্ন মসলা ও বিভিন্ন উপকরন দিয়ে তৈরী করে থাকেন টোক। যা বড়শির মাথায় দিয়ে মাছ শিকারের জন্য পুকুর, নদী, বড় খালে ফেলেন। এদের মধ্যে অন্যতম টোক হলো লাল পিঁপড়ার ডিম। এখানকার সৌখিন মাছ শিকারী মনিরুল ইসলাম জানান, লাল পিঁপড়ার ডিম দিয়ে তৈরী টোক পানির নিচের মাছের খুব পছন্দ। এজন্য আমরা অন্যান্য উপকরনের সাথে লাল পিঁপড়ার ডিম দিয়ে টোক তৈরী করে থাকি।

ভোলার লালমোহন পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আনিছল হক মিয়া বাড়ি সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন  ৬০ বছরের বৃদ্ধ মো. আলী আজগর। তিনি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। বিগত প্রায় ৩০ বছর ধরে বর্ষার মৌসুমে গাছের ডালে থাকা লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করছেন বৃদ্ধ আলী আজগর।

তিনি জানান, দেশে বেশ কিছু প্রজাতির পিঁপড়া রয়েছে। যার মধ্যে একটি বড় লাল পিঁপড়া। এ পিঁপড়া বন-জঙ্গলের উঁচু গাছের ডালে পাতা দিয়ে গোলাকার বাসা বানায়। ওইসব বাসা গ্রাম-গঞ্জের মানুষের ভাষায় লাল পিঁপড়ার ‘ঢোল’ নামে পরিচিত। লাল পিঁপড়া তাদের সংখ্যা অনুপাতে ছোট-বড় বাসা বা ‘ঢোল’ তৈরি করে। এ ধরনের বাসা খুবই মজবুত এবং পানি প্রতিরোধক। পিঁপড়ার ওই ঢোল থেকে ডিম সংগ্রহ করেন অনেকেই। যার দামও বেশ ভালো।

বৃদ্ধ আলী আজগর আরো জানান, প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দুপুরের পর আবার বাসায় ফিরি। এ সময়টুকু হেঁটে-হেঁটেই ঘুরে বেড়াই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে। লম্বা বাঁশের মাথায় রশি দিয়ে টুকরি ঝুলিয়ে সংগ্রহ করি গাছের ডালে থাকা বড় লাল পিঁপড়ার বাসা থেকে ডিম। বর্ষার তিন থেকে চার মাসই কেবল এই ডিম সংগ্রহ করা যায়। কারণ তখন লাল পিঁপড়ার অনেক বাসা পাওয়া যায়। এই সময় ভাগ্য ভালো থাকলে কখনো একদিনেই এক কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পারি। আবার কখনো দুই থেকে তিনদিন সময় লেগে যায় এক কেজি ডিম সংগ্রহ করতে। এসব ডিম মাছ শিকারীদের কাছে কেজি দরে বিক্রি করি। প্রতি কেজি ডিম ১২শত টাকায় বিক্রি করা যায়। বড় এই লাল পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে গড়ে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার মতো আয় করতে পারি। মাছ শিকারীরা মোবাইলে যোগাযোগ করে আমার বাসায় গিয়ে ডিম কিনে নেন।

বৃদ্ধ আলী আজগর জানান, আমার দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। তারা শ্বশুর বাড়িতেই থাকে। আর ছেলে বিয়ে করে ভিন্ন থাকে। এখন বাসায় আমি আর আমার স্ত্রীই আছি। আমাদের সম্পত্তি বলতে তেমন কিছুই নেই। যার জন্য দেড় হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় স্বামী-স্ত্রী দুইজনে মিলে একটি টিনশেড  বাসায় থাকি। সংসার চালাতে স্ত্রীও মানুষের বাসায় কাজ করেন। বর্ষার মৌসুমে আমি পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করলেও অন্য সময়টাতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করি। বয়স হয়েছে। কাজও এখন আর আগের মতো করতে পারি না। তাই আয়ও দিন দিন কমে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, মানুষের বাসায় আর কতদিন থাকবো। প্রধানমন্ত্রী আমাদের মতো অসহায়দের ঘর দিচ্ছেন। ওই ঘর পেতে কয়েকবার আবেদন করেছি, কাগজপত্রও দিয়েছি। তবে এখনো ঘর পাইনি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর পেলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো। এছাড়া অসহায়দের জন্য যে চালের বরাদ্দ রয়েছে সেই চাল পেলে আর তেমন চিন্তা থাকতো না। স্বামী-স্ত্রী দুইজনে মিলে তাহলে একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম। তাই আমাকে প্রধানমন্ত্রীর একটি উপহারের ঘর এবং চালের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ওই ব্যক্তি আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে তাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর প্রদানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এছাড়া তাকে চাল বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো।

জাহিদুল ইসলাম দুলাল/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়

হবিগঞ্জে গ্রীষ্মকালীন সুইট ব্যাল্ক টু জাতের তরমুজ চাষে লাভবান কৃষকরা

Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ ও বিক্রিতে চলে জীবিকা

আপডেটের সময় ০৭:০৬:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

ভোলা দক্ষিণ প্রতিনিধি: বর্ষা ঋতুতে সৌখিন মাছ শিকারীরা বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করেন। মাছ শিকারের জন্য তথন তারা বিভিন্ন মসলা ও বিভিন্ন উপকরন দিয়ে তৈরী করে থাকেন টোক। যা বড়শির মাথায় দিয়ে মাছ শিকারের জন্য পুকুর, নদী, বড় খালে ফেলেন। এদের মধ্যে অন্যতম টোক হলো লাল পিঁপড়ার ডিম। এখানকার সৌখিন মাছ শিকারী মনিরুল ইসলাম জানান, লাল পিঁপড়ার ডিম দিয়ে তৈরী টোক পানির নিচের মাছের খুব পছন্দ। এজন্য আমরা অন্যান্য উপকরনের সাথে লাল পিঁপড়ার ডিম দিয়ে টোক তৈরী করে থাকি।

ভোলার লালমোহন পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আনিছল হক মিয়া বাড়ি সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন  ৬০ বছরের বৃদ্ধ মো. আলী আজগর। তিনি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। বিগত প্রায় ৩০ বছর ধরে বর্ষার মৌসুমে গাছের ডালে থাকা লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করছেন বৃদ্ধ আলী আজগর।

তিনি জানান, দেশে বেশ কিছু প্রজাতির পিঁপড়া রয়েছে। যার মধ্যে একটি বড় লাল পিঁপড়া। এ পিঁপড়া বন-জঙ্গলের উঁচু গাছের ডালে পাতা দিয়ে গোলাকার বাসা বানায়। ওইসব বাসা গ্রাম-গঞ্জের মানুষের ভাষায় লাল পিঁপড়ার ‘ঢোল’ নামে পরিচিত। লাল পিঁপড়া তাদের সংখ্যা অনুপাতে ছোট-বড় বাসা বা ‘ঢোল’ তৈরি করে। এ ধরনের বাসা খুবই মজবুত এবং পানি প্রতিরোধক। পিঁপড়ার ওই ঢোল থেকে ডিম সংগ্রহ করেন অনেকেই। যার দামও বেশ ভালো।

বৃদ্ধ আলী আজগর আরো জানান, প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দুপুরের পর আবার বাসায় ফিরি। এ সময়টুকু হেঁটে-হেঁটেই ঘুরে বেড়াই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে। লম্বা বাঁশের মাথায় রশি দিয়ে টুকরি ঝুলিয়ে সংগ্রহ করি গাছের ডালে থাকা বড় লাল পিঁপড়ার বাসা থেকে ডিম। বর্ষার তিন থেকে চার মাসই কেবল এই ডিম সংগ্রহ করা যায়। কারণ তখন লাল পিঁপড়ার অনেক বাসা পাওয়া যায়। এই সময় ভাগ্য ভালো থাকলে কখনো একদিনেই এক কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পারি। আবার কখনো দুই থেকে তিনদিন সময় লেগে যায় এক কেজি ডিম সংগ্রহ করতে। এসব ডিম মাছ শিকারীদের কাছে কেজি দরে বিক্রি করি। প্রতি কেজি ডিম ১২শত টাকায় বিক্রি করা যায়। বড় এই লাল পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে গড়ে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার মতো আয় করতে পারি। মাছ শিকারীরা মোবাইলে যোগাযোগ করে আমার বাসায় গিয়ে ডিম কিনে নেন।

বৃদ্ধ আলী আজগর জানান, আমার দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। তারা শ্বশুর বাড়িতেই থাকে। আর ছেলে বিয়ে করে ভিন্ন থাকে। এখন বাসায় আমি আর আমার স্ত্রীই আছি। আমাদের সম্পত্তি বলতে তেমন কিছুই নেই। যার জন্য দেড় হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় স্বামী-স্ত্রী দুইজনে মিলে একটি টিনশেড  বাসায় থাকি। সংসার চালাতে স্ত্রীও মানুষের বাসায় কাজ করেন। বর্ষার মৌসুমে আমি পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করলেও অন্য সময়টাতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করি। বয়স হয়েছে। কাজও এখন আর আগের মতো করতে পারি না। তাই আয়ও দিন দিন কমে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, মানুষের বাসায় আর কতদিন থাকবো। প্রধানমন্ত্রী আমাদের মতো অসহায়দের ঘর দিচ্ছেন। ওই ঘর পেতে কয়েকবার আবেদন করেছি, কাগজপত্রও দিয়েছি। তবে এখনো ঘর পাইনি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর পেলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো। এছাড়া অসহায়দের জন্য যে চালের বরাদ্দ রয়েছে সেই চাল পেলে আর তেমন চিন্তা থাকতো না। স্বামী-স্ত্রী দুইজনে মিলে তাহলে একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম। তাই আমাকে প্রধানমন্ত্রীর একটি উপহারের ঘর এবং চালের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ওই ব্যক্তি আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে তাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর প্রদানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এছাড়া তাকে চাল বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো।

জাহিদুল ইসলাম দুলাল/ইবিটাইমস