ভিয়েনা ১০:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ১৭ নভেম্বর  বর্ণবাদ আবার ব্রিটিশ রাজনীতিতে ফিরে এসেছে-বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তুরস্কে আবারও ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী রাশিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তেল রাজস্ব ৩৭ বিলিয়ন ডলার কমেছে -জেলেনস্কি ষষ্ঠবারের মতো শ্রেষ্ঠ ওসি লালমোহন থানার সিরাজুল ইসলাম লালমোহনে গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত মাভাবিপ্রবিতে ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন ও যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত বন্যা সহনশীলতা কর্মসূচির আওতায় চারা গাছ বিতরণ ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জে গ্রীষ্মকালীন সুইট ব্যাল্ক টু জাতের তরমুজ চাষে লাভবান কৃষকরা

লালমোহনে নৌকা তৈরি করে চলছে জীবন

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৭:৪৩:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
  • ১৯ সময় দেখুন

ভোলা দক্ষিণ প্রতিনিধি: ভোলার লালমোহন উপজেলায় দীর্ঘ অর্ধশতাধিক বছর ধরে চলছে নৌকা তৈরি। উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া কাঠপট্টি এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন মিস্ত্রিরা। এখানের মিস্ত্রিরা তৈরি করেন ডিঙি নৌকা, জয়া নৌকা এবং ফিশিংবোর্টসহ বিভিন্ন ধরনের নৌকা। প্রকারভেদে এসব নৌকার দাম ৫০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। মিস্ত্রিদের ঘাম ঝরা শ্রমে তৈরি করা এসব নৌকা জেলার বিভিন্ন উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে পটুয়াখালী এবং নোয়াখালী জেলাতেও। এই নৌকা তৈরি করে গজারিয়া এলাকার অর্ধশতাধিক ব্যক্তির জীবিকার জোগান হচ্ছে। বছরের চার মাস নৌকা তৈরির ধুম পড়ে গজারিয়ার কাঠপট্টিতে।

ওই এলাকার নৌকা তৈরি করা মিস্ত্রি ৩৮ বছর বয়সী মো. চান মিয়া বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে দৈনিক আটশত টাকা মজুরিতে এখানে বিভিন্ন ধরনের নৌকা তৈরি করছি। বছরের বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত নৌকা তৈরির ব্যাপক চাপ থাকে। তখন ভালোই আয় হয়। তবে বছরের অন্যান্য মাসগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। তখন প্রায় দিনই বসে বসে খেতে হয়। তবুও বাবা-মা, স্ত্রী এবং চার মেয়েকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। এই নৌকা তৈরির শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা উচিত।

গজারিয়া কাঠপট্টি এলাকার আরেক নৌকা তৈরি করা মিস্ত্রি প্রিয় লাল জানান, আমার এখন প্রায় ষাট বছর। এই বয়সের মধ্যে প্রায় ৪৫ বছরই নৌকা তৈরি করে কাটিয়ে দিয়েছি। প্রকারভেদে এক-একটি নৌকা তৈরি করতে ৩ দিন থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। দৈনিক মজুরিতেই আমরা নৌকা তৈরি করি। মৌসুমের সময় নৌকা তৈরির অনেক চাপ থাকে। তবে অন্য সময়গুলোতে কাজ কমে যায়। তখন দেনা করেই সংসার চালাতে হয়। সরকারিভাবে আমরা কোনো সহযোগিতা পাই না। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের।

ওই এলাকার মহাজন মো. সুজন পঞ্চায়েত বলেন, এই কাঠপট্টিতে মোট ১০টির মতো টিম্বার রয়েছে। যারমধ্যে আমার টিম্বারের আওতায় ৬জন মিস্ত্রি নিয়মিত নৌকা তৈরির কাজ করেন। এরা সাতশত থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন। সকাল ৮ থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত তারা কাজ করেন। মিস্ত্রিদের তৈরি করা যে নৌকাটি ১ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়, সেটিতে লাভ হয় ২০ হাজার টাকার মতো। আর ৫-৬ লাখ টাকায় যেটি বিক্রি হয়, সেটিতে লাভ হয় অর্ধলাখ টাকার মতো। মিস্ত্রি ও কাঠসহ নৌকা তৈরির সরঞ্জামের পেছনে আমার টিম্বারে ৬ লাখ টাকার বেশি পুঁজি রয়েছে। এরমধ্যে এনজিও ঋণ রয়েছে অন্তত দুই লাখ টাকা।

তিনি আরো বলেন, আমাদের থেকে জেলেরা নৌকা কিনে নিয়ে মাছ শিকার করেন। ওই মাছ বিক্রি করে জেলেরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অথচ আমরা আড়ালেই থেকে যাচ্ছি। আমাদের কেউ খোঁজ নেয় না। পাই না সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধাও। এই নৌকা শিল্পের দিকে সরকার সুনজর না দিলে বেশি দিন আর এই শিল্প টিকিয়ে রাখা যাবে না। তাই সরকারের কাছে আমাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ বিনাসুদে ঋণ প্রদানের দাবি  জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা রীমা আক্তার জানান, নৌকা তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে নিয়ে আমাদের সমিতি গঠনের সুযোগ রয়েছে। ওই সমিতির সদস্যদের সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা যাবে। তাই নৌকা তৈরির সঙ্গে জড়িতরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের এই ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

জাহিদুল ইসলাম দুলাল/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়

গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন

Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

লালমোহনে নৌকা তৈরি করে চলছে জীবন

আপডেটের সময় ০৭:৪৩:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪

ভোলা দক্ষিণ প্রতিনিধি: ভোলার লালমোহন উপজেলায় দীর্ঘ অর্ধশতাধিক বছর ধরে চলছে নৌকা তৈরি। উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া কাঠপট্টি এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন মিস্ত্রিরা। এখানের মিস্ত্রিরা তৈরি করেন ডিঙি নৌকা, জয়া নৌকা এবং ফিশিংবোর্টসহ বিভিন্ন ধরনের নৌকা। প্রকারভেদে এসব নৌকার দাম ৫০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। মিস্ত্রিদের ঘাম ঝরা শ্রমে তৈরি করা এসব নৌকা জেলার বিভিন্ন উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে পটুয়াখালী এবং নোয়াখালী জেলাতেও। এই নৌকা তৈরি করে গজারিয়া এলাকার অর্ধশতাধিক ব্যক্তির জীবিকার জোগান হচ্ছে। বছরের চার মাস নৌকা তৈরির ধুম পড়ে গজারিয়ার কাঠপট্টিতে।

ওই এলাকার নৌকা তৈরি করা মিস্ত্রি ৩৮ বছর বয়সী মো. চান মিয়া বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে দৈনিক আটশত টাকা মজুরিতে এখানে বিভিন্ন ধরনের নৌকা তৈরি করছি। বছরের বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত নৌকা তৈরির ব্যাপক চাপ থাকে। তখন ভালোই আয় হয়। তবে বছরের অন্যান্য মাসগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। তখন প্রায় দিনই বসে বসে খেতে হয়। তবুও বাবা-মা, স্ত্রী এবং চার মেয়েকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। এই নৌকা তৈরির শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা উচিত।

গজারিয়া কাঠপট্টি এলাকার আরেক নৌকা তৈরি করা মিস্ত্রি প্রিয় লাল জানান, আমার এখন প্রায় ষাট বছর। এই বয়সের মধ্যে প্রায় ৪৫ বছরই নৌকা তৈরি করে কাটিয়ে দিয়েছি। প্রকারভেদে এক-একটি নৌকা তৈরি করতে ৩ দিন থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। দৈনিক মজুরিতেই আমরা নৌকা তৈরি করি। মৌসুমের সময় নৌকা তৈরির অনেক চাপ থাকে। তবে অন্য সময়গুলোতে কাজ কমে যায়। তখন দেনা করেই সংসার চালাতে হয়। সরকারিভাবে আমরা কোনো সহযোগিতা পাই না। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে আমাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের।

ওই এলাকার মহাজন মো. সুজন পঞ্চায়েত বলেন, এই কাঠপট্টিতে মোট ১০টির মতো টিম্বার রয়েছে। যারমধ্যে আমার টিম্বারের আওতায় ৬জন মিস্ত্রি নিয়মিত নৌকা তৈরির কাজ করেন। এরা সাতশত থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন। সকাল ৮ থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত তারা কাজ করেন। মিস্ত্রিদের তৈরি করা যে নৌকাটি ১ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়, সেটিতে লাভ হয় ২০ হাজার টাকার মতো। আর ৫-৬ লাখ টাকায় যেটি বিক্রি হয়, সেটিতে লাভ হয় অর্ধলাখ টাকার মতো। মিস্ত্রি ও কাঠসহ নৌকা তৈরির সরঞ্জামের পেছনে আমার টিম্বারে ৬ লাখ টাকার বেশি পুঁজি রয়েছে। এরমধ্যে এনজিও ঋণ রয়েছে অন্তত দুই লাখ টাকা।

তিনি আরো বলেন, আমাদের থেকে জেলেরা নৌকা কিনে নিয়ে মাছ শিকার করেন। ওই মাছ বিক্রি করে জেলেরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অথচ আমরা আড়ালেই থেকে যাচ্ছি। আমাদের কেউ খোঁজ নেয় না। পাই না সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধাও। এই নৌকা শিল্পের দিকে সরকার সুনজর না দিলে বেশি দিন আর এই শিল্প টিকিয়ে রাখা যাবে না। তাই সরকারের কাছে আমাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ বিনাসুদে ঋণ প্রদানের দাবি  জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা রীমা আক্তার জানান, নৌকা তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে নিয়ে আমাদের সমিতি গঠনের সুযোগ রয়েছে। ওই সমিতির সদস্যদের সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা যাবে। তাই নৌকা তৈরির সঙ্গে জড়িতরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের এই ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

জাহিদুল ইসলাম দুলাল/ইবিটাইমস