মো. নাসরুল্লাহ, ঢাকা: ভোলার ইলিশার একাধিক কূপে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড- বাপেক্স। তিন স্তরে সবধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে অন্তত ২০০ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে অনুমান বাপেক্স বিশেষজ্ঞদের। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলে শিগগির ইলিশা নামে ২৯ তম এই গ্যাসক্ষেত্রের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেয়া হবে।
গত মার্চের শুরুতে ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে মালের হাটসংলগ্ন এলাকায় বাপেক্সের নকশা ও নির্দেশনা অনুযায়ী, রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান গাজপ্রম খননকাজ শুরু করে। প্রায় চার কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায় ২৪ এপ্রিল প্রাথমিকভাবে গ্যাসের সন্ধান
পেলে খনন শেষে অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। গত ২৮ এপ্রিল কূপের মুখে আগুন জ্বালিয়ে গ্যাসের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়। পরে সেখানে তিনটি স্তরে পরীক্ষা করে গ্যাসের অস্তিত্ব ও মজুদের পরিমান নিশ্চিত হয় বাপেক্স।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ইলিশায় তিন স্তরে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সাধারন একটা কূপে তিনটা জোনের মধ্যে একটাতে গ্যাস পেলেই উৎপাদন শুরু হয়। বলেন, ইলিশাতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে তিনটার প্রত্যেকটাই আলাদা কূপের মতো। সার্বিক বিবেচনায় এটি একটা নতুন গ্যাসক্ষেত্র। সেখানে কোন পানি বা বালি পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। বলেন, একেবারে বিশুদ্ধ গ্যাস পাওয়া গেছে।’
ইলিশাকে গ্যাসক্ষেত্র ঘোষনার বিষয়ে বাপেক্স ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কোন গ্যাসক্ষেত্র ঘোষণা দিতে হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির প্রয়োজন। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা পেট্রোবাংলা চেয়্যারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেটি চেয়ারম্যান ও জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে। এরপর তিনি সম্মতি দিলে এই গ্যাসক্ষেত্রের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেয়া হবে। সঙ্কটময় মূহুর্তে নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়াটা জাতির জন্য খুবই আনন্দের সংবাদ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গ্যাসের অস্তিত্ব অনুমান করতে পেরে আগেভাগেই প্রসেস প্লান্টের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের মধ্যে এই গ্যাসের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা যাবে বলেও বাপেক্স কর্মকর্তারা আশা করছেন।
ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় ভোলা ইলিশা আলাদা গ্যাসক্ষেত্র। তবে এটা তুলনামূলক ছোটো গ্যাসক্ষেত্র। বলেন, ইলিশা একটা ‘ভিন্ন স্ট্রাকচার’। এর সাথে অন্যকোন গ্যাসক্ষেত্রের যোগাযোগ নেই। সুতরাং এটা একটা নতুন গ্যাসক্ষেত্র। গ্যাস সংকটের এই সময়ে এটা যথেষ্ট ভালো এবং খুশির খবর বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তারমতে, ভোলা এবং আশপাশের কয়েকটি এলাকায় আরও কূপ খনন করা হলে বিপুল পরিমান গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাপেক্সের কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে ৩৪০০ মিটার গভীরে খনন করার টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করলেও পরে তা ৩৪৭৫ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। নরমাল মিডিলজোন গুলোর গভীরতা ৩২০০ মিটারের মতো হলেও সেখানে ৩৪৩৩ খেকে ৩৪৩৬ এই তিন মিটার প্রথমে পরীক্ষামূলক টার্গেট নিয়ে তাতে সফল হন খননকারী দল। সেখানে গ্যাসের চাপ পাওয়া যায় প্রায় ৩৫৪০ পিএসআই। নিচের দিকে এই চাপ ছিল প্রায় ৫০০০ পিএসআই। দ্বিতীয় স্তরকে মূল জোন বিবেচনায় নিয়ে ৫ মে থেকে ৯ মে পর্যন্ত পরীক্ষা করে তাতে সফলতা মেলে। এর সেন্টার লেয়ার ছিল ১৭ মিটার। সার্বিক বিবেচনায় মাত্র ৭ মিটার পরীক্ষা করেই তাতে গ্যাসের চাপ পাওয়া যায় ৩৪০০ এর উপরে। সর্বশেষ উপরের স্তরে পরীক্ষা করে সেটাতেও সফলতা মেলে। প্রত্যেকটা স্তরে আলাদা গ্যাসের অস্তিত্ব এবং কাঙ্খিত চাপ রয়েছে।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কূপ খননের আগে করা ফিজিবিলিটি স্টাডির তথ্য অনুযায়ী ধারনা ছিল ইলিশায় ১৫০ থেকে ১৮০ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুদ থাকতে পারে। কিন্তু সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেছে সেখানে ন্যুনতম ২০০ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ রয়েছে। প্রতিদিন ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করলেও ২৫ থেকে ২৭ বছর এই গ্যাস ব্যবহার করা যাবে। বাপেক্সের গড় দাম বিবেচনায় এই গ্যাসের মূল্য ৬ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। আর আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিবেচনায় এর মূল্য ২৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। অথচ অনুসন্ধান ও খনন কাজে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৯০ কোটি টাকার মতো।’
ইবিটাইমস/আরএন
[contact-form][contact-field label=”Name” type=”name” required=”true” /][contact-field label=”Email” type=”email” required=”true” /][contact-field label=”Website” type=”url” /][contact-field label=”Message” type=”textarea” /][/contact-form]