একনেকে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন, পদ্মাসেতু জাদুঘর নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা: জাতীয় অর্থনীতি পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মঙ্গলবার প্রায় ১০ হাজার ৮৫৫ দশমিক ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙ্গার একটি উপযুক্ত স্থানে পদ্মাসেতু জাদুঘর নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

একনেক চেয়ারপারসন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই সভায় সভাপতিত্বে করেন। এ সময় একনেক ১ হাজার ৮৬৭ দশমিক ০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (আরএমইউ) স্থাপনসহ প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেয়। রাজধানীর শের-এ-বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিদায়ী ২০২২ অর্থবছরের ১৭তম একনেক সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়।

বৈঠকের পর পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংকালে বলেন, এই প্রকল্পগুলোতে মোট ব্যয় ১০ হাজার ৮৫৫ দশমিক ৬০ কোটি টাকার মধ্যে ৫ হাজার ১৪২ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার যোগান দেবে, ৭৫৬ দশমিক ৩০ কোটি টাকা সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে এবং অবশিষ্ট ৪ হাজার ৯৫৬ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা প্রকল্প সহয়তা হিসেবে আসবে।

অনুমোদিত ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ছয়টি নতুন ও বাকী চারটি সংশোধিত প্রকল্প। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর সাথে সংযোগকারী সড়ক ও ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত এমন একটি মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত উপযুক্ত স্থানে একটি পদ্মাসেতু জাদুঘর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ওই জাদুঘরে পদ্মাসেতু নির্মাণে ব্যবহৃত কিছু যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির থাকবে। প্রধানমন্ত্রী ২৫ জুন পদ্মাসেতু উদ্বোধনের দিন সেতুটির নির্মাণ শ্রমিক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীবর্গ, সচিবগণ ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে ছবি তুলবেন।

পদ্মাসেতুকে ‘জাতির গর্ব’ ও প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক সহসীকতার প্রতিফলন হিসেবে আখ্যায়িত করে ড. আলম বলেন, মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় আনলে সেতুটির সার্বিক ব্যয় মোটেই খুব বেশি নয়।

বিশ্বব্যাংক ও এডিবি, জাইকার মতো অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এই সেতুর জন্য তহবিল ফিরিয়ে নেয়ার প্রেক্ষাপটের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমাদের দৃঢ়চেতা প্রধানমন্ত্রীই নিজস্ব তহবিলে সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন করার তাঁর সিদ্ধান্তে সুদৃঢ়ভাবে অটল ছিলেন।

প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ লাইনের মতো জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ সেবার লাইনসমূহ মাটির নিচ দিয়ে স্থাপন নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলশুখা-আজমিরিগঞ্জ জেলা মহাসড়কের দিরাই-শাল্লা অংশের নির্মাণ ব্যয় ৬২৮ দশমিক ৫৪ কোটি টাকার ব্যাপারে তিনি জানান, কালভার্টের কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত এবং নৌ-চলাচল বিঘিœত হওয়ায় প্রস্তাবিত কালভার্টের স্থানে সেতু নির্মিত হবে- এই শর্তে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছেন।

ড. আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাওড় ও নিচু এলাকাগুলোতে এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিদের্শ দেন-যাতে সেগুলোর স্থায়ীত্ব ৭০ থেকে ৮০ বছর হয়। এছাড়াও তিনি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হ্রাস করতে এবং অর্থের অপব্যবহার না করার জন্যও নির্দেশ দেন।

সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো-অতিরিক্ত ৬৩ দশমিক ০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নলকা-সিরাজগঞ্জ-সয়দাবাদ আঞ্চলিক মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ শহর অংশে চার লেনে উন্নীতকরণ এবং অবশিষ্ট অংশ দুই লেনে উন্নীতকরণ; ৭৯ দশমিক ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়া শহর থেকে মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ; ৭০১ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গৌরীপুর-আনন্দগঞ্জ-মধুপুর-দেওয়ানগঞ্জ বাজার -হোসেনপুর জেলা মহাসড়কের প্রস্থ বাড়ানো ও মানসম্মত উন্নীতকরণ; রাঙ্গামাটি নদীর ওপর গোমা সেতুর নির্মাণ ব্যয় অতিরিক্ত ৩৪ দশমিক ৮২ কোটি টাকা, ৩য় দফায় সংশোধিত ব্যয় হ্রাস করে ১৩০ দশমিক ২০ কোটি টাকায় গুরুত্বপূর্ণ ৪৬ উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন।

এছাড়াও বিদ্যুৎ বিতরণ স্মার্ট গ্রিডের আধুনিকীকরণে প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৭ দশমিক ২৪ কোটি টাকা, ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কর্মসূচি (৬ষ্ঠ দফায়) এবং বিআরইবি নেটওয়ার্ক (ঢাকা-ময়মনসিংহ) আধুনিকীকরণ ও সক্ষমতা বাড়ানো খাতে ৬ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।

ঢাকা/ইবিটাইমস/এমএইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »