আশুরা বা মহররম মাসের ১০ তারিখের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলামের প্রাথমিক জীবনে রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার দিন রোজা রাখা ফরজ ছিল

 কবির আহমেদ, ভিয়েনাঃ আল্লাহর দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা , ধর্মনিষ্ঠা ,আত্মত্যাগ , দায়িত্ববোধ ও কর্তব্য পালন ,অসত্যের বিরুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করাই হলো ১০ই মহররমের মৌলিক শিক্ষা।

আশুরা বা আরবি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মুহররম মাসের ১০ তারিখ হলো ইসলামের একটি ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস। আশুরার মূল বিষয় হিসেবে মুসলিম শিয়া অনুসারীরা কারবালার ঘটনাকেই বুঝিয়ে থাকে। তবে সুন্নিদের এ নিয়ে মতভিন্নতা আছে। শিয়া মতানুযায়ী আশুরা কারবালার বিষাদময় ঘটনার শোকের দিন তবে সুন্নি মতামত বিভিন্ন।

ইসলামিক পঞ্জিকা অনুযায়ী মহররম এর দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। এটি ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সুন্নি মতানুযায়ী ইহুদীরা মুসার বিজয়ের স্মরণে আশুরার সাওম বা রোজা পালন করত। তবে শিয়া মত আশুরার পূর্ব ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তারা আশুরাকে কারবালার বিষাদময় ঘটনার স্মরণে পালন করে।

এই দিনটি শিয়া মুসলমানদের দ্বারা বেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে তারা বিভিন্ন ধরনের মিছিল, মাতম ও শোকানুষ্ঠান আয়োজন করে। তবে একটি ক্ষুদ্র অংশ ততবীর পালন করে থাকে। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে এসব অনুষ্ঠান চোখে পড়ার মত। যেমন- পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, লেবানন ও বাহরাইন।

তবে আশুরা নিয়ে সুন্নি সমাজে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। জনপ্রিয় ধারণায়, আশুরা মূলত একটি শোকাবহ দিন কেননা এদিন আল্লাহর নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সাঃ-এর দৌহিত্র হুসাইন ইবনে আলী নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে এই দিনটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়, এই দিনে আসমান ও যমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম আঃ-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে আল্লাহ নবীদেরকে স্ব স্ব শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেছেন। এই দিন নবী মুসা আঃ-এর শত্রু ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল।

এই দিনে হযরত নূহ আঃ-এর কিস্তি ঝড়ের কবল হতে রক্ষা পেয়েছিলো এবং তিনি জুডি পর্বতশৃংগে নোঙ্গর ফেলেছিলেন। এই দিনে দাউদ আঃ-এর তাওবা কবুল হয়েছিলো, নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম আঃ উদ্ধার পেয়েছিলেন; আল্লাহর নবী হযরত আইয়ুব আ ১৮ বছর পর দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন; এদিনে আল্লাহ তা’আলা নবী ও রাসূল ঈসা আঃ-কে ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। যদিও, ভিন্ন মতে ঘটনাগুলোর অনেকগুলোই এই দিনে ঘটেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়নি। আবার,বিভিন্ন ইসলামী সূত্র অনুযায়ী প্রচলিত আছে যে, এই তারিখেই কেয়ামত সংঘটিত হবে; যদিও এই বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে।

ইমাম হুসাইন রাঃ -এর শাহাদাৎ সম্পাদনাঃ

হিজরী ৬০ সনে এজিদ বিন মুয়াবিয়া, পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসাবে ঘোষণা করে। তার সম্পর্কে বলা হয় যে সে মদ্যপানকে বৈধ ঘোষণা করেছিল। অধিকন্তু সে একই সঙ্গে দুই সহোদরাকে বিয়ে করাকেও বৈধ ঘোষণা করেছিল। শাসক হিসাবে সে ছিল স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী। ইমাম হুসাইন এজিদের আনুগত্য করতে অস্বীকৃত হন এবং ইসলামের সংস্কারের লক্ষ্যে মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন। মক্কা থেকে তিনি কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কারবালার (বর্তমান ইরাক) উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে। কয়েক ঘণ্টা পর শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বে আরো বহু নতুন সৈন্য এসে তার সাথে যোগ দেয়৷ কারবালায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং যুদ্ধ শুরু হয়। এই অসম যুদ্ধে হযরত ইমাম হুসাইন রাঃ এবং তার ৭২ জন সঙ্গী শাহাদৎ বরণ করেন। শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজে কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে হযরত ইমাম হুসাইনকে(রাঃ) হত্যা করে। সেদিন ছিল হিজরী ৬১ সনের ১০ মুহররম।

ঐতিহাসিক পটভূমি সম্পাদনা মূল নিবন্ধ: কারবালার যুদ্ধঃ

এপ্রিল ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ,বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রাঃ কর্তৃক ছেলে ইয়াজিদকে খলিফা ঘোষণা করা হয়। ইয়াজিদ মদিনার গর্ভনরকে তাৎক্ষণিকভাবে হুসাইন রাঃ ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আনুগত্য (বায়াত) আদয়ের জন্য নিদের্শ দেয়। কিন্তু হুসাইন ইবনে আলী রাঃ তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, তিনি মনে করতেন যে, ইয়াজিদ ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে এবং মুহাম্মদের(সাঃ)সুন্নাহকে পরিবর্তন করছে। অতঃপর হুসাইন ইবনে আলী(রাঃ) তার পরিবারের সদস্য, সন্তান, ভাই এবং হাসানের পুত্রদের নিয়ে মদিনা থেকে মক্কায় চলে যান।

অপরদিকে কুফাবাসী যারা হযরত মুয়াবিয়ার রাঃ এর মৃত্যু সম্পর্কে অবগত ছিল তারা চিঠির মাধ্যমে তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য হুসাইনকে (রাঃ) অনুরোধ করেন এবং উমাইয়াদের বিপক্ষে তাকে সমর্থন প্রদান করে। প্রত্যুত্তরে হুসাইন(রাঃ) চিঠির মাধ্যমে জানান যে অবস্থা পর্যবেক্ষনের জন্য তিনি মুসলিম ইবনে আকীল কে পাঠাবেন। যদি তিনি তাদের ঐক্যবদ্ধ দেখতে পান যেভাবে চিঠিতে বর্ণিত হয়েছে সেরুপ তবে খুবই দ্রুতই যোগ দিবেন, কারণ একজন ইমামের দায়িত্ব হচ্ছে কুরআন বর্ণিত অনুসারে কাজের আঞ্জাম দেওয়া, ন্যায়বিচার সমুন্নত করা, সত্য প্রতিষ্ঠিত করা এবং নিজেকে স্রষ্টার নিকট সঁপে দেওয়া। মুসলিম ইবনে আকীলের প্রাথমিক মিশন খুবই সফল ছিল এবং ১৮০০ এর অধিক ব্যক্তি শপথ প্রদান করেছিল। কিন্তু অবস্থা ইতিমধ্যে পরিবর্তন হয়ে যায়। উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ কুফার নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেন এবং মুসলিম ইবনে আকীলকে হত্যার নির্দেশ জারি করেন। আকীলের মৃত্যু খবর পৌঁছার আগেই হুসাইন ইবনে আলী(রাঃ) কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা আরম্ভ করে দেন।

পথিমধ্যে ইমাম হুসাইন(রাঃ) খবর পান যে আকীলকে কুফায় হত্যা করা হয়েছে। তিনি খবরটি তার সমর্থকদের জানালেন এবং তাদের বললেন যে জনগণ তার সাথে প্রতারণা করেছে। তিনি কোন সংশয় ছাড়াই তার সাথীদের তাকে ছেড়ে চলে যেতে বললেন। অধিকাংশ সঙ্গী তাকে ছেড়ে চলে যায় নিকটাত্মীয়রা ছাড়া। যাই হোক কুফার যাত্রাপথে উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের সাথে তাকে (হুসাইন রাঃ) মোকাবেলা করতে হয়। কুফাবাসীগণ ইমামবিহীন থাকার কারণে তাকে (হুসাইন রাঃ) আমন্ত্রণ করেছিল সে প্রতিশ্রুতির কথা কুফার সেনাবাহিনীকে স্মরণ করতে বললেন। তিনি বললেন যে, কুফাবাসী সমর্থন করেছিলো বলেই তিনি যাত্রা করেছেন। কিন্তু তারা যদি তার (হুসাইন রাঃ) আগমনকে অপছন্দ করে তবে তিনি (হুসাইন রাঃ) যেখান থেকে এসেছেন সেখানে চলে যাবেন। তবে সেনাবাহিনী তাকে (হুসাইন রাঃ) অন্য পথ অবলম্বন করতে বললেন। এতে করে, তিনি (হুসাইন রাঃ) বাম দিকে যাত্রা করলেন এবং কারবালায় পৌঁছে গেলেন। সেনাবাহিনী তাকে (হুসাইন রাঃ) এমন এক জায়গায় অবস্থান নিতে বাধ্য করল যে জায়গাটি ছিল পানিশূন্য ধূ ধূ মরুভূমি।

সেনাপ্রধান উমার ইবনে সাদ ইমাম হুসাইনের(রাঃ) আগমনের উদ্দেশ্য বুঝার জন্য দূত প্রেরণ করলেন। ইমাম হুসাইন(রাঃ) জানালেন যে তিনি কুফাবাসীর আমন্ত্রণে এসেছেন কিন্তু তারা যদি অপছন্দ করে তবে তিনি ফিরে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন। যখন এই প্রতিবেদন ইবনে জিয়াদের কাছে পৌঁছল তখন তিনি সাদকে হুসাইন(রাঃ) ও তার সমর্থকদের ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য আদয়ের নির্দেশ দিলেন। তিনি এও নির্দেশ দিলেন যে, হুসাইন(রাঃ) ও তার সঙ্গীরা যাতে কোন পানি না পায়। পরের দিন সকালে উমার বিন সাদ তার সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। আল হুর ইবনে ইয়াজিদ আল তামিম সাদের দল ত্যাগ করে হুসাইনের(রাঃ) সাথে যোগ দিলেন। তিনি কুফাবাসীদের বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে নবীর নাতীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ভৎসর্ণা করলেন। অতঃপর যুদ্ধে তিনি নিহত হন।

কারবালার যুদ্ধ সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দিনটি ছিল ১০ ই অক্টোবর ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ (মুহাররম ১০, ৬১ হিজরি) এই যুদ্ধে প্রায় ৭২ জন নিহত হন যাদের সকলেই পানি বঞ্চনার শিকার হন। অর্থাৎ সকল পুরুষ সদস্যই নিহত হন কেবলমাত্র রোগা ও দুর্বল জয়নুল আবেদিন ছাড়া।

এটি এক অসম যুদ্ধ ছিল। যেখানে হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) ও তার পরিবার বিশাল এক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীন হন। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবু রায়হান আল বিন্নী এর মতে, “তাবুগুলোতে আঙুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং মৃতদেহগুলোকে ঘোড়ার খুড় দ্বারা ক্ষতবিক্ষত ও পদদলিত করা হয়; মানব ইতিহাসে কেউ এমন নৃশংসতা দেখেনি। হত্যার আগমুহূর্তে নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সাঃ এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন রাঃ বলেন, “ আমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যদি মুহাম্মদের(সাঃ) এর  দ্বীন জীবন্ত হয়, তবে আমাকে তরবারি দ্বারা টুকরো টুকরো করে ফেল।”

উমাইয়া সৈন্যরা হুসাইন রাঃ ও তার পুরুষ সঙ্গীদের হত্যা করার পর সম্পদ লুট করে, মহিলাদে গয়না কেড়ে নেয়। শিমার জয়নাল আবেদীনকে হত্যা করতে চাইলে জয়নাব বিনতে আলী এর প্রচেষ্টায় কমান্ডার উমার ইবনে সাদ তাকে জীবিত রাখেন। তাকেও (জয়নাল আবেদীন) বন্দী নারীদের সাথে দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়।

আরবি মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। ইসলামের ইতিহাসে এই মাসটি কতগুলো ঘটনার জন্য উল্লেখযোগ্য এবং স্মৃতিবিজড়িত। স্মৃতিবিজড়িত ঘটনা ও মর্যাদার কারণেই মহররম মাসের গুরুত্ব অত্যাধিক। কুরআনুল কারিমে এ মাসকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আসমান-জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে গণনায় মাসসমুহের সংখ্যা ১২টি। যা আল্লাহর কিতাবে (লৌহ মাহফুজে) লিপিবদ্ধ রয়েছে। তার মধ্যে চারটি মাস (রজব, জিলকদ, জিলহজ ও মহররম) হারাম (নিষিদ্ধ/সম্মানের)। এটা হল সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন।’ [সুরা আত-তাওবাহ : আয়াত ৩৬]

সম্মানিত নির্ধারিত এ ৪ মাস সম্পর্কে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে-‘বছরে ১২টি মাস রয়েছে; তন্মধ্যে ৪টি মাস হারাম (সম্মানিত মাস)। তিনটি মাস পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিক- জিলকদ, জিলহজ ও মহররম আর অন্যটি হচ্ছে রজব মাস।’ (বুখারি)

মহররম মাসের নামকরণ:

এই মাসটিকে মহররম হিসেবে নামকরণের অন্যতম কারণ হচ্ছে- এই মাসটি হারাম মাস; যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ; রক্তপাত করা হারাম বা নিষিদ্ধ। এ বিষয়টির প্রতি তাগিদ দিতেই মহররমকে হিজরি সনের প্রথম মাস করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর প্রস্তাব অনুসারেই হিজরি সনের প্রথম মাস হিসেবে মহররমকে নির্ধারণ করা হয় এবং নিষিদ্ধের জন্য মহররম নাম রাখা হয়।

মহররম মাসে বেশি বেশি রোজা রাখার ফজিলত :

আশুরার রোজার দ্বারা বিগত এক বছরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। দ্বিতীয় হিজরি সনে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার বিধান নাজিল হলে আশুরার রোজা ঐচ্ছিক হিসেবে বিবেচিত হয়। আশুরা দিবসে রোজা পালনের জন্য রসুলুল্লাহ (স) নির্দেশ দিয়েছেন।

আশুরার রোজা রাখার কারণ:

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করে ইয়াহুদিদেরকে মহররম মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখতে দেখে বললেন- এটা কিসের রোজা ? তারা জানালো, এটি একটি উত্তম দিন; এই দিনে আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের হাত থেকে মুসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারীদেরকে মুক্ত করেছিলেন।

একথা শুনে তিনি বললেন, ‘হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে আমিই বেশি হকদার। অতঃপর তিনি নিজে রোজা রাখলেন এবং সাহাবাদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি) মুক্তির এ আনন্দে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে মহররমের ১০ তারিখ তথা আশুরার রোজা পালন করেছিলেন।

আশুরার রোজার ফজিলত:

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আশুরার দিনের রোজার উপরে অন্য কোনো দিনের রোজাকে প্রাধান্য দিতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রমজান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব দিতেও দেখিনি)।’ (বুখারি) আশুরার রোজা পালনের মাধ্যমে গোনাহ মাফের আশা করেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, আমি আশা রাখি যে, এর দ্বারা বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম)

আশুরার রোজা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বড় অনুগ্রহ যে, মহররম মাসে মাত্র একদিন রোজা রাখার বিনিময়ে আল্লাহ পূর্ণ এক বছরের (সগিরাহ) গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। ইনশাআল্লাহ অস্ট্রিয়ায় আগামী বৃহস্পতিবার ১৯ আগস্ট পবিত্র আশুরা বা ১০ ই মহররম।

কবির আহমেদ, সাংবাদিক  লেখক ও কলামিস্ট  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »