ভিয়েনা ১০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ভিয়েনার নতুন দূরপাল্লার বাস টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন জার্মানিতে সহজ হলো ‘নিরাপদ দেশ’ ঘোষণার নিয়ম, আরও কঠোর হচ্ছে আশ্রয়ের সুযোগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান এইড এর বিবৃতি চরফ্যাশনে এডিশনাল পিপির উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ঝালকাঠি-১ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মুফতি নূরুল্লাহ আশরাফীর মতবিনিময় ‎ মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী ঝালকাঠি থেকে গ্রেপ্তার ঝিনাইদহে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ বিষয়ক সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত ইউরোপকে ‘ক্ষয়িষ্ণু’ ও ‘দুর্বল’ বললেন ট্রাম্প আগামী নির্বাচনকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় করে রাখতে হবে: ইউএনওদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা

জার্মানিতে সহজ হলো ‘নিরাপদ দেশ’ ঘোষণার নিয়ম, আরও কঠোর হচ্ছে আশ্রয়ের সুযোগ

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৮:১৫:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ১৪৮ সময় দেখুন

জার্মানির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বুন্ডেসরাট-এর অনুমোদন ছাড়াই একটি দেশকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা করা এবং আশ্রয় আইনকে কঠোর করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতারা

ইউরোপ ডেস্কঃ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) জার্মানির গণমাধ্যম থেকে এতথ্য জানা গেছে। গণমাধ্যমে বলা হয়েছে সম্প্রতি জার্মানির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগ-এর ৪৫৭ জন আইনপ্রণেতা দেশটির আশ্রয় আইন কঠোর করার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ১৩০ জন এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

জোট সরকারের অংশীদার রক্ষণশীল দল সিডিইউ/সিএসইউ এবং এসপিডি-এর আইনপ্রণেতারা আইনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল কট্টর ডানপন্থি এএফডি-এর আইনপ্রণেতারাও পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তবে বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন গ্রিন পার্টি এবং বামপন্থি দল ডি লিংকের আইনপ্রণেতারা।

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এর মধ্য দিয়ে প্রতিটি জার্মানির রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বুন্ডেসরাট-এর অনুমোদন ছাড়াই আইনি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোনও একটি দেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে ঘোষণা দিতে পারবে সরকার৷

‘নিরাপদ দেশ’ বলতে সাধারণত ওই দেশগুলোকেই বোঝানো হয়, যেসব দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো হলে ওই আশ্রয়প্রার্থী কোনো নিপীড়ন বা নির্যাতনের শিকার হবেন না। ফলে, নিরাপদ দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় পাওয়ার সুযোগও অনেকটা কমে যায়।

জার্মানির সরকার আশা করছে, এই নতুন পদক্ষেপগুলো আশ্রয় প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে। কারণ, এর মধ্য দিয়ে আশ্রয়প্রার্থীরা আশ্রয়ের মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হলে আবেদনগুলো ‘ভিত্তিহীন’ ধরে নিয়ে দ্রুত প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব হবে।

তবে, জার্মানির বার্তা সংস্থা ডিপিএ (DPA) জানিয়েছে, যারা রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন তাদেরকে নতুন পদক্ষেপের আওতায় আনা হবে না।
দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর সব পদক্ষেপ নিতে চাপ তৈরি করছেন জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট।

জার্মানির প্রতি অনাগ্রহী হোক আশ্রয়প্রার্থীরা: সরকার আশা করছে, নতুন করে নেয়া এসব পদক্ষেপ জার্মানিকে আশ্রয়প্রার্থীদের কাছে কম আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলবে। তবে, আইন কঠোর করা হলেও ঢালাওভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে। বরং প্রতিটি আশ্রয় আবেদন আলাদাভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে। তারপরও নিরাপদ ঘোষিত দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বিষয়টি একটু কঠিন হবে৷ কারণ, ওই ব্যক্তি নিজ দেশে কেন বিপদে বা ঝুঁকিতে আছেন, তার প্রকৃত প্রমাণ হাজির করতে হবে।

‘নিরাপদ’ ঘোষিত দেশের নাগরিকদের আগে থেকেই বলা হবে, তাদের আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ নতুন আইন অনুযায়ী, আলজেরিয়া, ভারত, মরক্কো এবং তিউনিশিয়াকে ‘নিরাপদ দেশ’-এর তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে৷

২০২৪ সালে জার্মানির অভিবাসন ও আশ্রয় বিষয়ক সংস্থা বিএএমএফ ‘নিরাপদ দেশ’-এর একটি তালিকা তৈরি করেছে৷ দেশগুলো হলো: ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র, আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হ্যার্ৎসেগোভিনা, জর্জিয়া, ঘানা, কসোভো, নর্থ মেসিডোনিয়া, মন্ট্রেনেগ্রো, মলডোভা, সেনেগাল এবং সার্বিয়া ৷

বাতিল হলো রাষ্ট্রীয় খরচে আইনি সহায়তা: নতুন নিয়মের অধীনে, যাদেরকে নির্বাসন হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বা জার্মানি ছাড়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে, তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ বা আইনি সহায়তা দেয়ার বিধানটিও বাতিল করা হয়েছে৷
এসপিডি নেতৃত্বাধীন জার্মানির সাবেক জোট সরকার ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই বিধানটি চালু করেছিল ৷

আইনের আরেকটি অংশ নাগরিকত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত৷ কোনও ব্যক্তি যদি জালিয়াতি, হুমকি, ঘুস এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অথবা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জার্মান নাগরিকত্ব অর্জন করতে চান, তাকে দশ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হবে৷ এই সময়ের মধ্য তিনি আর কোনোভাবে নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করতে পারবেন না ৷

যারা ইতিমধ্যে জার্মানির নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন, এমন কারও বিরুদ্ধেও যদি উল্লেখিত কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাদের ক্ষেত্রেও এই নিয়মটি প্রযোজ্য হবে ৷ অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক জার্মান পার্লামেন্টের মুখপাত্র আলেকজান্ডার থ্রোম বলেছেন, ‘‘অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিবর্তন এগিয়ে চলেছে।’’

সমালোচনা: এমন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সরকার ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর আশ্রয় ব্যবস্থা’ চালু করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এনেছেন ডি লিংকে-এর মুখপাত্র ক্লারা ব্যুঙ্গার। তিনি বলেছেন, ‘‘যারা তথাকথিত নিরাপদ দেশ থেকে আসবেন, তাদের ক্ষেত্রে আসলে প্রকৃত আশ্রয় প্রক্রিয়া মানা হবে না ৷ বরং দেখানো হবে, সব প্রক্রিয়া মানা হয়েছে।’’

গ্রিন পার্টির নেত্রী ফিলিৎস পোলাট বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, নতুন এই পদক্ষেপ ‘‘অসাংবিধানিক’’৷ বিপরীতে কট্টরপন্থি এএফডি-এর নেতা ক্রিশ্চিয়ান ভির্ট আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ইইউর আশ্রয় নীতি এখন ‘‘অকার্যকর’’ হয়ে পড়েছে।

নতুন নিয়মের সমালোচনা করেছে অভিবাসী অধিকার বিষয়ক সংস্থা প্রো আসুল। সংস্থাটির আইনি মুখপাত্র ভিবকে ইয়ুডিথ বলেছেন, তিনি নতুন নিয়মগুলোর দুটি বড় সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন।

একটি হলো: ‘‘ইচ্ছাকৃতভাবে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়া, যদিও এটি সাংবিধানিকভাবে প্রয়োজনীয় ৷’’

ইয়ুডিথ আরও বলেছেন, দ্বিতীয় হলো ‘‘কেলেঙ্কারি ৷ আটককেন্দ্রে রাষ্ট্রীয় অর্থে আইনি সহায়তা বাতিল করে সরকার ব্যাপকভাবে বেআইনি নির্বাসন এবং অন্যায় আটকের পথ তৈরি করছে বলে শঙ্কা রয়েছে ৷’’

দেশ ত্যাগের নোটিশ পাওয়া অথবা নির্বাসনের জন্য আটককেন্দ্রে রাখার ব্যক্তিদের জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে জার্মান আইনজীবী সমিতি (ডয়েচে আনভাল্টফেরাইন) এবং ফেডারেল ল লয়ার্স সমিতি (বুন্ডেসরেশটসআনভাল্টসকামার)। তারা বলেছেন, ‘‘স্বাধীনতা বঞ্চিত করা মৌলিক অধিকার হরণের গুরুতর বিধিনিষেধগুলোর একটি।’’

গত রোববার (৭ ডিসেম্বর) গির্জাগুলোসহ অভিবাসী, আশ্রয়প্রার্থী এবং শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা মিলে নতুন একটি একটি ফোরাম গঠন করেছে। জার্মানির সামগ্রিক আশ্রয় ব্যবস্থার নিন্দা জানিয়ে তারা বলেছে, ‘‘পরিকল্পিতভাবে অভিবাসন সীমিত করার সরকারী নীতি জার্মানির মৌলিক আইনগুলোকেও দুর্বল করে দিচ্ছে।’’

এদিকে প্রোটেস্ট্যান্ট বার্তা সংস্থা ইপিডি জানিয়েছে, শরণার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলন স্থগিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ আফগানদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি বন্ধ করা এবং সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেয়ার মতো সরকারি সিদ্ধান্তগুলোর কড়া সমালোচনা করেছেন তারা।

অভিন্ন ইউরোপীয় আশ্রয়নীতি বাস্তবায়ন গত সপ্তাহের শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) জার্মানির রাজ্যগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরাও আশ্রয় সংস্কার, গুপ্তচরবৃত্তি এবং ড্রোন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। শরৎকালীন এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় উত্তরাঞ্চলীয় শহর ব্রেমেনে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির ফেডারেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট৷

জার্মানির গণমাধ্যম ডিপিএ জানিয়েছে, এবারের সম্মেলনে আশ্রয় বা অভিবাসন মূল আলোচ্য বিষয় ছিল না। কারণ এই বছর জার্মানিতে নতুন আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। ব্রেমেন শহরে বৈঠক করেছেন জার্মানির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

সম্মেলনে মন্ত্রীরা যে বিষয়গুলো নিয়ে একমত হয়েছেন, তার মধ্যে একটি হলো ছয়টি জার্মান রাজ্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি নেবে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ণ অর্থ সহায়তা দেবে রাজ্যগুলোকে৷ মূলত অভিন্ন ইউরোপীয় আশ্রয় ব্যবস্থা (সিইএএস) বাস্তবায়নের জন্য এই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকে সিইএএস বাস্তবায়নের কথা রয়েছে গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নে। ডাবলিন নীতিমালা অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাবর্তনের ওপর জোর দিচ্ছে জার্মানি। এজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডোব্রিন্ডট ‘সেকেন্ডারি মাইগ্রেশন সেন্টার’ নির্মাণ প্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল করতে চান।

জার্মানির “হেসে” রাজ্যেই এ ধরনের অভিবাসী শিবিরগুলো বেশি সংখ্যায় নির্মাণ করা হবে ৷ ডিপিএ জানিয়েছে, ফ্রাঙ্কফুর্টের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে এই সুবিধাগুলো তৈরি করা হতে পারে।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়

ভিয়েনার নতুন দূরপাল্লার বাস টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

জার্মানিতে সহজ হলো ‘নিরাপদ দেশ’ ঘোষণার নিয়ম, আরও কঠোর হচ্ছে আশ্রয়ের সুযোগ

আপডেটের সময় ০৮:১৫:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

জার্মানির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বুন্ডেসরাট-এর অনুমোদন ছাড়াই একটি দেশকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা করা এবং আশ্রয় আইনকে কঠোর করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতারা

ইউরোপ ডেস্কঃ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) জার্মানির গণমাধ্যম থেকে এতথ্য জানা গেছে। গণমাধ্যমে বলা হয়েছে সম্প্রতি জার্মানির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগ-এর ৪৫৭ জন আইনপ্রণেতা দেশটির আশ্রয় আইন কঠোর করার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ১৩০ জন এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।

জোট সরকারের অংশীদার রক্ষণশীল দল সিডিইউ/সিএসইউ এবং এসপিডি-এর আইনপ্রণেতারা আইনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল কট্টর ডানপন্থি এএফডি-এর আইনপ্রণেতারাও পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তবে বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন গ্রিন পার্টি এবং বামপন্থি দল ডি লিংকের আইনপ্রণেতারা।

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এর মধ্য দিয়ে প্রতিটি জার্মানির রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ বুন্ডেসরাট-এর অনুমোদন ছাড়াই আইনি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোনও একটি দেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে ঘোষণা দিতে পারবে সরকার৷

‘নিরাপদ দেশ’ বলতে সাধারণত ওই দেশগুলোকেই বোঝানো হয়, যেসব দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো হলে ওই আশ্রয়প্রার্থী কোনো নিপীড়ন বা নির্যাতনের শিকার হবেন না। ফলে, নিরাপদ দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় পাওয়ার সুযোগও অনেকটা কমে যায়।

জার্মানির সরকার আশা করছে, এই নতুন পদক্ষেপগুলো আশ্রয় প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে। কারণ, এর মধ্য দিয়ে আশ্রয়প্রার্থীরা আশ্রয়ের মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হলে আবেদনগুলো ‘ভিত্তিহীন’ ধরে নিয়ে দ্রুত প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব হবে।

তবে, জার্মানির বার্তা সংস্থা ডিপিএ (DPA) জানিয়েছে, যারা রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন তাদেরকে নতুন পদক্ষেপের আওতায় আনা হবে না।
দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর সব পদক্ষেপ নিতে চাপ তৈরি করছেন জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট।

জার্মানির প্রতি অনাগ্রহী হোক আশ্রয়প্রার্থীরা: সরকার আশা করছে, নতুন করে নেয়া এসব পদক্ষেপ জার্মানিকে আশ্রয়প্রার্থীদের কাছে কম আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলবে। তবে, আইন কঠোর করা হলেও ঢালাওভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে। বরং প্রতিটি আশ্রয় আবেদন আলাদাভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে। তারপরও নিরাপদ ঘোষিত দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বিষয়টি একটু কঠিন হবে৷ কারণ, ওই ব্যক্তি নিজ দেশে কেন বিপদে বা ঝুঁকিতে আছেন, তার প্রকৃত প্রমাণ হাজির করতে হবে।

‘নিরাপদ’ ঘোষিত দেশের নাগরিকদের আগে থেকেই বলা হবে, তাদের আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ নতুন আইন অনুযায়ী, আলজেরিয়া, ভারত, মরক্কো এবং তিউনিশিয়াকে ‘নিরাপদ দেশ’-এর তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে৷

২০২৪ সালে জার্মানির অভিবাসন ও আশ্রয় বিষয়ক সংস্থা বিএএমএফ ‘নিরাপদ দেশ’-এর একটি তালিকা তৈরি করেছে৷ দেশগুলো হলো: ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র, আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হ্যার্ৎসেগোভিনা, জর্জিয়া, ঘানা, কসোভো, নর্থ মেসিডোনিয়া, মন্ট্রেনেগ্রো, মলডোভা, সেনেগাল এবং সার্বিয়া ৷

বাতিল হলো রাষ্ট্রীয় খরচে আইনি সহায়তা: নতুন নিয়মের অধীনে, যাদেরকে নির্বাসন হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বা জার্মানি ছাড়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে, তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ বা আইনি সহায়তা দেয়ার বিধানটিও বাতিল করা হয়েছে৷
এসপিডি নেতৃত্বাধীন জার্মানির সাবেক জোট সরকার ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই বিধানটি চালু করেছিল ৷

আইনের আরেকটি অংশ নাগরিকত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত৷ কোনও ব্যক্তি যদি জালিয়াতি, হুমকি, ঘুস এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অথবা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জার্মান নাগরিকত্ব অর্জন করতে চান, তাকে দশ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হবে৷ এই সময়ের মধ্য তিনি আর কোনোভাবে নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করতে পারবেন না ৷

যারা ইতিমধ্যে জার্মানির নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন, এমন কারও বিরুদ্ধেও যদি উল্লেখিত কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাদের ক্ষেত্রেও এই নিয়মটি প্রযোজ্য হবে ৷ অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক জার্মান পার্লামেন্টের মুখপাত্র আলেকজান্ডার থ্রোম বলেছেন, ‘‘অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিবর্তন এগিয়ে চলেছে।’’

সমালোচনা: এমন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সরকার ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর আশ্রয় ব্যবস্থা’ চালু করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এনেছেন ডি লিংকে-এর মুখপাত্র ক্লারা ব্যুঙ্গার। তিনি বলেছেন, ‘‘যারা তথাকথিত নিরাপদ দেশ থেকে আসবেন, তাদের ক্ষেত্রে আসলে প্রকৃত আশ্রয় প্রক্রিয়া মানা হবে না ৷ বরং দেখানো হবে, সব প্রক্রিয়া মানা হয়েছে।’’

গ্রিন পার্টির নেত্রী ফিলিৎস পোলাট বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, নতুন এই পদক্ষেপ ‘‘অসাংবিধানিক’’৷ বিপরীতে কট্টরপন্থি এএফডি-এর নেতা ক্রিশ্চিয়ান ভির্ট আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ইইউর আশ্রয় নীতি এখন ‘‘অকার্যকর’’ হয়ে পড়েছে।

নতুন নিয়মের সমালোচনা করেছে অভিবাসী অধিকার বিষয়ক সংস্থা প্রো আসুল। সংস্থাটির আইনি মুখপাত্র ভিবকে ইয়ুডিথ বলেছেন, তিনি নতুন নিয়মগুলোর দুটি বড় সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন।

একটি হলো: ‘‘ইচ্ছাকৃতভাবে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়া, যদিও এটি সাংবিধানিকভাবে প্রয়োজনীয় ৷’’

ইয়ুডিথ আরও বলেছেন, দ্বিতীয় হলো ‘‘কেলেঙ্কারি ৷ আটককেন্দ্রে রাষ্ট্রীয় অর্থে আইনি সহায়তা বাতিল করে সরকার ব্যাপকভাবে বেআইনি নির্বাসন এবং অন্যায় আটকের পথ তৈরি করছে বলে শঙ্কা রয়েছে ৷’’

দেশ ত্যাগের নোটিশ পাওয়া অথবা নির্বাসনের জন্য আটককেন্দ্রে রাখার ব্যক্তিদের জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে জার্মান আইনজীবী সমিতি (ডয়েচে আনভাল্টফেরাইন) এবং ফেডারেল ল লয়ার্স সমিতি (বুন্ডেসরেশটসআনভাল্টসকামার)। তারা বলেছেন, ‘‘স্বাধীনতা বঞ্চিত করা মৌলিক অধিকার হরণের গুরুতর বিধিনিষেধগুলোর একটি।’’

গত রোববার (৭ ডিসেম্বর) গির্জাগুলোসহ অভিবাসী, আশ্রয়প্রার্থী এবং শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা মিলে নতুন একটি একটি ফোরাম গঠন করেছে। জার্মানির সামগ্রিক আশ্রয় ব্যবস্থার নিন্দা জানিয়ে তারা বলেছে, ‘‘পরিকল্পিতভাবে অভিবাসন সীমিত করার সরকারী নীতি জার্মানির মৌলিক আইনগুলোকেও দুর্বল করে দিচ্ছে।’’

এদিকে প্রোটেস্ট্যান্ট বার্তা সংস্থা ইপিডি জানিয়েছে, শরণার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলন স্থগিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ আফগানদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি বন্ধ করা এবং সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেয়ার মতো সরকারি সিদ্ধান্তগুলোর কড়া সমালোচনা করেছেন তারা।

অভিন্ন ইউরোপীয় আশ্রয়নীতি বাস্তবায়ন গত সপ্তাহের শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) জার্মানির রাজ্যগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরাও আশ্রয় সংস্কার, গুপ্তচরবৃত্তি এবং ড্রোন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। শরৎকালীন এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় উত্তরাঞ্চলীয় শহর ব্রেমেনে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির ফেডারেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট৷

জার্মানির গণমাধ্যম ডিপিএ জানিয়েছে, এবারের সম্মেলনে আশ্রয় বা অভিবাসন মূল আলোচ্য বিষয় ছিল না। কারণ এই বছর জার্মানিতে নতুন আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। ব্রেমেন শহরে বৈঠক করেছেন জার্মানির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

সম্মেলনে মন্ত্রীরা যে বিষয়গুলো নিয়ে একমত হয়েছেন, তার মধ্যে একটি হলো ছয়টি জার্মান রাজ্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি নেবে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ণ অর্থ সহায়তা দেবে রাজ্যগুলোকে৷ মূলত অভিন্ন ইউরোপীয় আশ্রয় ব্যবস্থা (সিইএএস) বাস্তবায়নের জন্য এই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকে সিইএএস বাস্তবায়নের কথা রয়েছে গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নে। ডাবলিন নীতিমালা অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাবর্তনের ওপর জোর দিচ্ছে জার্মানি। এজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডোব্রিন্ডট ‘সেকেন্ডারি মাইগ্রেশন সেন্টার’ নির্মাণ প্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল করতে চান।

জার্মানির “হেসে” রাজ্যেই এ ধরনের অভিবাসী শিবিরগুলো বেশি সংখ্যায় নির্মাণ করা হবে ৷ ডিপিএ জানিয়েছে, ফ্রাঙ্কফুর্টের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে এই সুবিধাগুলো তৈরি করা হতে পারে।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস