ভিয়েনা ০২:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইলে পলিথিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা মানার গরজ নেই

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০১:১৫:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
  • ৮ সময় দেখুন

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ দেশে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও টাঙ্গাইলের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে তা মানার গরজ নেই। মঙ্গলবার শহরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এদিকে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হচ্ছে। এতে সহযোগিতা করছেন জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম, সদর উপজেলা স্যানেটারী ইন্সপেক্টর ও খাদ্য পরিদর্শক সাহেদা বেগমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

জানা যায়, বর্তমান সরকার পলিথিন বিরোধী আইন করে তা বাস্তবায়নে ক্যাম্পেইন করে। সর্বশেষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী (১ নভেম্বর) থেকে বাজারে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এ লক্ষে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার সরেজমিনে টাঙ্গাইলের পাইকারীর বড় বাজার পার্ক বাজার, সিটি বাজার, ছয়আনী বাজার, আমিন বাজার, সাবালিয়া বাজার, সাবালিয়া চার রাস্তার মোড় বাজার, বাসস্ট্যান্ড বাজার, বৈল্যা বাজার, বেবীস্ট্যান্ড বাজার, সন্তোষ বাজার, কলেজগেট বাজার ঘুরে জানা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতারা পলিথিনের বিকল্প সামগ্রী সহজলভ্য না হওয়ায় হঠাৎ করে নিয়ম মানতে আগ্রহী হচ্ছেন না। বিভিন্ন বাজার ও শপিং মলগুলোতে এখনও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।

পলিথিন ব্যবহারকারীরা জানায়, পলিথিনের পরিবর্তে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ অথবা পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সেগুলো সব সময় সঙ্গে রাখা যায় না। কিংবা কেনার অভ্যাস এখনও ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেনি। পাটের না হলেও বিকল্প এক ধরনের ব্যাগ পাওয়া যায়। তবে তার দাম সাধারণ পলিথিনের তুলনায় কিছুটা বেশি হওয়ায় ক্রেতা সাধারণের আগ্রহ কম। এছাড়া সেগুলোর অধিকাংশই পশ্চিমা দেশে রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানায়, শহুরে এলাকার বর্জ্য পদার্থের একটা বিরাট অংশ হচ্ছে পলিথিন বা প্লাস্টিক। উপাদানগত দিক থেকে এই পলিব্যাগগুলো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর পরিবেশ ও আবহাওয়ার জন্য ক্ষতিকর। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এই অনুপ্রবেশের ফলে দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরির উপকরণগুলোর মধ্যে বিসফেনল এ (বিপিএ) ও ফ্যালেটসের মতো রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এগুলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যা ও ক্যানসারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে। এ ব্যাগগুলো যখন পোড়ানো হয় তখন ডাইঅক্সিন ও ফুরানের মতো অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয়। এগুলো বায়ু দূষণের মধ্য দিয়ে শ্বাসযন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলায় ১০-১২টির বেশি পলিথিন মজুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হলেও পলিথিন মজুদ ও বিক্রি বন্ধ করা যায়নি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার ও মূল্য তালিকা না থাকায় সন্তোষ বাজারের ছয় ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন ও আলমগীরকে পাঁচ হাজার টাকা করে; আলিম, দীপক ও রানাকে দুই হাজার টাকা করে এবং দীপককে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার ও পরিবেশ আইনে তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। অন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে সতর্ক করা হয়েছে। এমন অভিযান নিয়মিতভাবে অব্যাহত থাকবে।

শফিকুজ্জামান খান মোস্তফা/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

টাঙ্গাইলে পলিথিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা মানার গরজ নেই

আপডেটের সময় ০১:১৫:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ দেশে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও টাঙ্গাইলের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে তা মানার গরজ নেই। মঙ্গলবার শহরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এদিকে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হচ্ছে। এতে সহযোগিতা করছেন জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তুহিন আলম, সদর উপজেলা স্যানেটারী ইন্সপেক্টর ও খাদ্য পরিদর্শক সাহেদা বেগমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

জানা যায়, বর্তমান সরকার পলিথিন বিরোধী আইন করে তা বাস্তবায়নে ক্যাম্পেইন করে। সর্বশেষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী (১ নভেম্বর) থেকে বাজারে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এ লক্ষে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার সরেজমিনে টাঙ্গাইলের পাইকারীর বড় বাজার পার্ক বাজার, সিটি বাজার, ছয়আনী বাজার, আমিন বাজার, সাবালিয়া বাজার, সাবালিয়া চার রাস্তার মোড় বাজার, বাসস্ট্যান্ড বাজার, বৈল্যা বাজার, বেবীস্ট্যান্ড বাজার, সন্তোষ বাজার, কলেজগেট বাজার ঘুরে জানা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতারা পলিথিনের বিকল্প সামগ্রী সহজলভ্য না হওয়ায় হঠাৎ করে নিয়ম মানতে আগ্রহী হচ্ছেন না। বিভিন্ন বাজার ও শপিং মলগুলোতে এখনও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।

পলিথিন ব্যবহারকারীরা জানায়, পলিথিনের পরিবর্তে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ অথবা পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সেগুলো সব সময় সঙ্গে রাখা যায় না। কিংবা কেনার অভ্যাস এখনও ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেনি। পাটের না হলেও বিকল্প এক ধরনের ব্যাগ পাওয়া যায়। তবে তার দাম সাধারণ পলিথিনের তুলনায় কিছুটা বেশি হওয়ায় ক্রেতা সাধারণের আগ্রহ কম। এছাড়া সেগুলোর অধিকাংশই পশ্চিমা দেশে রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানায়, শহুরে এলাকার বর্জ্য পদার্থের একটা বিরাট অংশ হচ্ছে পলিথিন বা প্লাস্টিক। উপাদানগত দিক থেকে এই পলিব্যাগগুলো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর পরিবেশ ও আবহাওয়ার জন্য ক্ষতিকর। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এই অনুপ্রবেশের ফলে দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরির উপকরণগুলোর মধ্যে বিসফেনল এ (বিপিএ) ও ফ্যালেটসের মতো রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এগুলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যা ও ক্যানসারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে। এ ব্যাগগুলো যখন পোড়ানো হয় তখন ডাইঅক্সিন ও ফুরানের মতো অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয়। এগুলো বায়ু দূষণের মধ্য দিয়ে শ্বাসযন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলায় ১০-১২টির বেশি পলিথিন মজুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ইতোপূর্বে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হলেও পলিথিন মজুদ ও বিক্রি বন্ধ করা যায়নি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার ও মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার ও মূল্য তালিকা না থাকায় সন্তোষ বাজারের ছয় ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন ও আলমগীরকে পাঁচ হাজার টাকা করে; আলিম, দীপক ও রানাকে দুই হাজার টাকা করে এবং দীপককে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার ও পরিবেশ আইনে তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। অন্য ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে সতর্ক করা হয়েছে। এমন অভিযান নিয়মিতভাবে অব্যাহত থাকবে।

শফিকুজ্জামান খান মোস্তফা/ইবিটাইমস