জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা রেজুলেশন গৃহীত

জাতিসংঘে রেজুলেশনটি যৌথভাবে উত্থাপন করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বুধবার (১৫ নভেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি শীর্ষক রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।রেজুলেশনটি যৌথভাবে উত্থাপন করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এবারের রেজুলেশনটিতে ১১৪টি দেশ সহ- পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে,যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ভয়েস অফ আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,রেজুলেশনটি গৃহীত হওয়ার পর জাতিসংঘে বাংলাদশ স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি তার প্রদত্ত বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ যেখানে জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্ব এবং খুব সীমিত সম্পদ রয়েছে। আমাদের ভূখণ্ডে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতির কোনো সুযোগ নেই। তাদের অবশ্যই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে”।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য দেশটির সরকারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির উন্নতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি এ ব্যাপারে আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত তিনি অন্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশে অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

চলমান বিভিন্ন বৈশ্বিক সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে, রেজুলেশনটিতে জাতিসংঘের অসংখ্য সদস্য রাষ্ট্রের সহ-পৃষ্ঠপোষকতা এক অনন্য সফলতার ইঙ্গিত বাহক। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় এটা বিশ্বব্যাপী সংহতির একটি শক্তিশালী সংকেত বাহক। জাতিসংঘের আলোচ্যসূচিতে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে জীবন্ত ও গুরুত্ববহ করে রাখার জন্য বাংলাদেশ ওআইসি ও ইইউকে তাদের নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।

উল্লেখ্য, বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় উঠে এসেছে এ বছরের রেজুলেশনে। সেগুলো হলো— ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদারতা ও মানবিক সহায়তার প্রশংসা এবং ভাসান চর প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়েছে।

মিয়ানমারের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে এটি রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণসমূহ উদ্ঘাটন করতে এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

এটি নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি গৃহীত ২৬৬৯ (২০২২) রেজুলেশনকে স্বাগত জানায়, যাতে পরিষদের সদস্যরা মিয়ানমারে সব ধরনের সহিংসতার অবিলম্বে অবসানের দাবি জানিয়েছে। এতে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে আসিয়ানের ৫ দফা ঐকমত্যের দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি এবং আন্তজার্তিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউশনের তদন্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

সর্বোপরি, রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বার্ডেন শেয়ারিং নীতির আওতায় যাতে জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহ বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখে, সে বিষয়ে জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে এবারের রেজুলেশনে।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »