বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ রুপ নিতে যাচ্ছে ঘূর্ণীঝড় মোখা

দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এই তধ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর

বাংলাদেশ ডেস্কঃ বুধবার (১০ মে) অধিদপ্তর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি বুধবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।

এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ১১ মে পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।এতে আরও বলা হয়, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে নির্দেশনা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক যুগান্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে এবং এটি ১৪ মে নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সরকার সবদিক থেকেই প্রস্তুত আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (১০ মে) বিকালে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী এসব কথা জানান। তিনি বলেন, এটা সুপার সাইক্লোন হবে, এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এটি ১৩ মে রাত থেকে ১৪ মে সকালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সম্ভবত এটি বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আঘাত হানতে পারে। বিশেষ করে সেন্ট মার্টিনের নিচু এলাকায় আঘাত হানতে পারে। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার একটা আশঙ্কা আছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সবদিক থেকেই প্রস্তুত আছি। প্রতিবারের মতো ইনশাআল্লাহ, এবারও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করতে পারব। সেনা, নৌ, কোস্টগার্ড প্রস্তুত আছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তৃতীয় বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটি আজ (বুধবার) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫১৫ কি.মি. দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৩৫ কি.মি. দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫১০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৬৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে আগামীকাল পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কি.মি.। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে৷

এদিকে বুধবার দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘণীভূত হচ্ছে। সেটি পর্যায়ক্রমে ঘূর্ণিঝড় থেকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় ও অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আজকে (বুধবার) সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে তীব্র ঘূর্ণিঝড় এবং দিবাগত ভোররাতে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আমরা দেখছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এখন যে গতি তাতে ১৪ মে সন্ধ্যায় উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে এর মধ্যে গতি বাড়তে বা কমতেও পারে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

ঘূর্ণীঝড় “মোখা” নামকরণ: একদিকে যেমন এই ঝড় নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে, তেমনই সোশ্যাল মিডিয়ায় এর নাম নিয়ে চলছে নানা ধরনের রঙ্গরসিকতা। কেউ বলছেন, এর নাম মোকা, কেউ বলছেন মোচা। কিন্তু এই নামের উৎস আসলে কী? সে সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন না। কীভাবে ঘূর্ণিঝড়টি মোখা নাম পেল? জেনে নিন।

বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে এই অঞ্চলের ১৩টি দেশ। ২০০০ সাল থেকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অন্তর্গত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং ওমান ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে। ২০১৮ সালে ইরান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এই প্যানেলে সামিল হয়। ঝড়ের নাম ঠিক করার জন্যে প্রত্যেক দেশ কিছু নাম প্রস্তাব করে। ‘প্যানেল অন ট্রপিকল সাইক্লোন’-এর কাছে সেই নামগুলো পেশ করা হয় ও একটি তালিকা তৈরি হয়। জানা গেছে, এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে ইয়েমেন।

নাম ঠিক করার সময় যদিও বেশ কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হয় যেমন কোনো গোষ্ঠী বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে আঘাত করে এমন কোনো নাম গৃহীত হবে না। একবার ব্যবহার করা নাম আর ব্যবহার করা যাবে না।

ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের তথ্য অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে ইয়েমেন। সেই দেশের বিখ্যাত শহর মোখার নাম থেকেই রাখা হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম। মোখা এমনিতেই বেশ পরিচিত একটি শহর। সারা বিশ্বের কাছে এই শহরের পরিচিতি তার কফির জন্য। কফির উৎপাদন এবং সারা বিশ্বে সরবরাহের কাজ করা হয় এই শহর থেকে। এটির নামেই নামকরণ হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস/এম আর  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »