অস্ট্রিয়ায় করোনার সংক্রমণের বিস্তারের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। যারা আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছেন তাদের সিংহভাগই গ্রীষ্মকালীন ছুটি থেকে ফেরত আসা লোকজন
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে,এই সপ্তাহে অস্ট্রিয়ার করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশন সরাসরি বা কোন মুখোমুখি বৈঠকে বসেন নি। অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের নিয়মিত করোনার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাজধানী ভিয়েনা সহ পূর্বাঞ্চলের আরও দুই রাজ্য Niederösterreich (NÖ) এবং Burgenland এবং পশ্চিমের রাজ্য Salzburg ও Tirol রাজ্যকে করোনার নতুন সংক্রমণের বিস্তারের অতি ঝুঁকিপূর্ণ কমলা জোন ঘোষণা করেছেন।
অস্ট্রিয়ার করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে বাকী ছয়টি রাজ্য Kärnten, Oberösterreich(OÖ),Steiermark এবং Vorarlberg এই সপ্তাহেও মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হলুদ জোনে থাকছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মেডিকেল এজেন্সির নির্দেশনা অনুযায়ী কোন অঞ্চল, রাজ্য বা
দেশের প্রতি এক লাখ জনপদে যদি ২৫ থেকে ৫০ জনের মধ্যে করোনায় সংক্রামিত থাকে,তখন সে অঞ্চল সংক্রমণ বিস্তারের মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হলুদ
জোনে থাকে।
আর যদি ৫০ থেকে ১০০ জন করোনায় সংক্রামিত থাকে তখন সে অঞ্চল সংক্রমণ বিস্তারের অতি ঝুঁকিপূর্ণ কমলা রঙের জোন হিসাবে গণ্য হবে।
আর প্রতি এক লাখ জনপদে ১০০ জনের বেশী করোনায় সংক্রামিত হলে,তখন সে অঞ্চল বা এলাকা করোনার সংক্রমণ বিস্তারের অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিপদজনক লাল জোন হিসাবে বিবেচিত হবে।
করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশনের তথ্য মতে,হলুদ জোনে থাকা OÖ ও Vorarlberg রাজ্যের বর্তমান অবস্থা প্রতি এক লাখে ৪৮,৪ এবং ৪৮ জন। ফলে
এই রাজ্য দুইটি সহ অস্ট্রিয়ার সমস্ত রাজ্যই আগামী সপ্তাহে করোনার সংক্রমণের বিস্তারের অতি ঝুঁকিপূর্ণ কমলা অঞ্চল বা জোন ঘোষণা সম্ভাবনা আছে।
সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুসারে গতকাল অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের Burgenland রাজ্যের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (I.C.U) শতকরা ১৫ শতাংশ পূর্ণ ছিল। আরস এই রাজ্যের হাসপাতালে করোনার সাধারণ ইউনিটে রোগীর সংখ্যা শতকরা ৪,৩ শতাংশ। ট্র্যাফিক লাইট কমিশনের পূর্বাভাস অনুসারে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে Tirol এবং NÖ রাজ্যে শতকরা চার শতাংশেরও বেশি করোনা আক্রান্ত রোগীর স্খলন বা ভর্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
এদিকে অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য ফেডারেল রাজধানী ভিয়েনায় গত সাত দিনে প্রতি এক লাখ জনপদে করোনার সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ১,১১৭
জন। রাজধানী ভিয়েনার নিকটতম প্রতিবেশী Burgenland রাজ্যে ১,০০৭ জন। একই সংখ্যক জনপদে Steiermark ও Tirol রাজ্যে যথাক্রমে করোনায় আক্রান্ত আছেন ৭,৮২৬ ও ২,৯৫২ জন। অবশ্য এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে রাজধানী ভিয়েনায় করোনা পরীক্ষা তুলনামূলক অনেক কমে গেছে।
অনেকেই বলছেন ভিয়েনায় করোনার পিসিআর টেস্ট বাড়িয়ে দিলে করোনায় আরও অনেকেই আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় করোনায় নতুন করে সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ১২,৫৮৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ৩,৪০৬ জন।
অস্ট্রিয়ার অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ২,৮৩৮ জন, OÖ রাজ্যে ২,০১০ জন, Steiermark রাজ্যে ১,৩৯৭ জন,Tirol রাজ্যে ৮৩৩ জন, Salzburg রাজ্যে ৫৭১ জন,Vorarlberg রাজ্যে ৫৪৯ জন, Kärnten রাজ্যে ৫১৩ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৪৬৮ জন নতুন করে করোনায় সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ায় বর্তমানে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির কোয়ারেন্টাইনের সময় নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানের চলমান নিয়ম হল,কেহ করোনায় পজিটিভ শনাক্ত হলে পাঁচ দিন পর করোনার পিসিআর টেস্টে নেগেটিভ হলে তার কোয়ারেন্টাইন শেষ। আর পজিটিভ অব্যাহত থাকলে আরও পাচঁদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তি যদি করোনার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়া থাকে,তাহলে তাকে আর কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে না। অবশ্য তাকে অবশ্যই করোনার পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ১৪৪ জন এবং করোনার প্রতিষেধক টিকার চতুর্থ ডোজ গ্রহণ করেছেন ১১,১৭৫ জন। এখানে উল্লেখ্য যে, অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত প্রায় দুই লাখের মত মানুষ করোনার প্রতিষেধক টিকার চতুর্থ ডোজ গ্রহণ করেছেন।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫,৮৭,৩০৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৮,৯২৫ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৪৪,৪৬,৩৮২ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১,২২,০০০ হাজার। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৭৮ জন এবং হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন আছেন ১,১৩৩ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ /ইবিটাইমস