অস্ট্রিয়ায় পুনরায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে,নতুন প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

আগামী শরতে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাস থেকে ফিরে আসতে পারে বাধ্যতামূলক FFP2 মাস্ক পড়ার নিয়ম সহ আরও অন্যান্য বিধিনিষেধ

অস্ট্রিয়ায় করোনার সমস্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের এক সপ্তাহের মধ্যেই পুনরায় নতুন সংক্রমণ আবার ক্রমশ বাড়ছে। অস্ট্রিয়ার করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশন তাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে দেশে পুনরায় মাঝারি আকারের সতর্কতা জারির ঈন্গিত দিয়েছেন।

করোনা ট্রাফিক লাইট কমিশন জানিয়েছে রাজধানী ভিয়েনা ও পশ্চিমাঞ্চলীয় তিনটি ফেডারেল রাজ্যে পুনরায় করোনার নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
তাই এই সমস্ত ফেডারেল রাজ্যগুলি অন্তত মাঝারি ঝুঁকিতে ফিরে যেতে পারে বা শীঘ্রই পুনরায় হলুদ জোন থেকে কমলা জোনে ফেরত যেতে পারে।

করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশনের মতে,সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি থাকলেও বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণাধীন। কমিশন অস্ট্রিয়ার পশ্চিমের রাজ্য সমূহ পুনরায় করোনার মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ফিরে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। উল্লেখ্য যে, অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার গণপরিবহন ও স্বাস্থ্য পরিসেবায় FFP2 বা N মাস্ক পড়ার নিয়ম ছাড়া অস্ট্রিয়ার আর কোথাও করোনার কোন প্রকার বিধিনিষেধ নাই।

অস্ট্রিয়ার বেসরকারি সংস্থা “স্বাস্থ্য অস্ট্রিয়া” জিএমবিএইচ এবং সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রনালয় অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে বর্তমানে করোনার পরীক্ষা কমে যাওয়ায় এবং উপসর্গবিহীন করোনায় সংক্রামিত বেশী থাকায় আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

এপিএ আরও জানিয়েছে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) অস্ট্রিয়ার করোনার ট্র্যাফিক লাইট কমিশন এক সংক্ষিপ্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে যে “বর্তমান অস্ট্রিয়ান অভিজ্ঞতাবাদ এবং সাম্প্রতিক অধ্যয়ন পরিস্থিতি” এর ভিত্তিতে স্প্রেড এবং সিস্টেম ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য মূল্যায়নের মানদণ্ড আবার সংশোধন করা হয়েছে। বিশেষ করে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপকভাবে হ্রাসকৃত সিস্টেম ঝুঁকির মতো কারণগুলিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল এবং অনাক্রম্যতার বর্তমান ফলাফলগুলিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। কমিশন এই সপ্তাহে কোন রাজ্যকে নতুন কোন রংয়ে রঞ্জিত করে নি। গত সপ্তাহে আশা করা হয়েছিল এই সপ্তাহে সম্ভবত কয়েকটি রাজ্য সবুজ জোন ঘোষিত হতে পারে।

এদিকে অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোহানেস রাউখ (গ্রিনস) অস্ট্রিয়ায় আবারও করোনার প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করছেন।”আমাদের মাঝে করোনার তরঙ্গ থাকবে, শুধুমাত্র এই বছরই নয়, ভবিষ্যতেও,” স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের একথা বলেছেন: “তবে আমরা হাসপাতালগুলির উপর চাপ কমাতে আমরা
করোনার প্রতিষেধক টিকার সাহায্য নিতে পারি।

তিনি আরও বলেন, “কোভিডের সংক্রমণকে আমাদের জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। ভাইরাসটি চিরন্তন থাকতে এসেছে।” মহামারী শুরুর দুই বছর পর এখন আমরা এটির সাথে কিভাবে মোকাবিলা করবো তা কিছুটা শিখেছি, যার অর্থ এই নয় যে আপনাকে ব্যবস্থাগুলি বাদ দিতে হবে বা টিকা দিতে হবে না। এই বৈশ্বিক মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী হাতিয়ার হল প্রতিষেধক টিকাদান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাউখের মতে, বিশেষ করে টিকাদান মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কারণ এটি গুরুতর অসুস্থতা এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রতিরোধ করে, যার সাহায্যে যে কোনও তরঙ্গের শিখরগুলি স্যাঁতসেঁতে হতে পারে।

টিকাটি অসম্মানিত হয়েছে কারণ এটি – যেমন প্রত্যাশিত – সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে না, স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন: “কিন্তু এটি বার্তা নয়।” অবশ্যই আপনি সংক্রামিত হতে পারেন, তবে টিকা গুরুতরভাবে অসুস্থ হওয়া, হাসপাতালে বা নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে শেষ হওয়া থেকে রক্ষা করে। দুর্বল গোষ্ঠীর জন্য করোনা টিকা দেওয়ার সুপারিশ, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অস্ট্রিয়ার জনস্বাস্থ্যের মহাপরিচালক ক্যাথারিনা রাইখ জোর দিয়ে বলেছেন, সুপারিশ হল যে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী, দুর্বল এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের গ্রীষ্মের আগে চতুর্থ টিকা দেওয়া উচিত। এই বিষয়ে, নার্সিং হোমগুলিতেও সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তিনি ঘোষণা করেছেন।

মৌসুমী বোনাস শেষ হয়ে গেলে, অর্থাৎ শরৎকালে অন্য সকলের নিজেকে সতেজ করা উচিত। রাইখ গ্রীষ্মের আগে জাতীয় টিকাদান কমিটির কাছ থেকে একটি অনুরূপ সুপারিশ আশা করে: “যাতে সবাই পরিকল্পনা করতে পারে।” যাই হোক না কেন, পুনরুদ্ধারের স্থিতি গুরুত্ব হারাচ্ছে, রিচের মতে: “কারণ ছোটখাটো অসুস্থতাগুলি কেবলমাত্র একটি সামান্য অনাক্রম্যতা রেখে যায়।”

অস্ট্রিয়ার সিমুলেশন গবেষক নিকি পপারের মতে, ভ্যাকসিনেশন পরিস্থিতি এবং নতুন রূপের সংক্রমণের মাত্রার উপর নির্ভর করে ভিন্নভাবে উচ্চারিত শিখর সহ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে গণনা করেছেন, তিনিও টিকা দেওয়ার জন্য একটি ল্যান্স ভেঙেছেন। কারণ মডেলগুলির সাথে আপনি দেখতে পারেন যে টিকা সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, যথাযথ টিকাদানের মাধ্যমে, হাসপাতালে ভর্তির সর্বোচ্চ সংখ্যা শতকরা ২৫ শতাংশ হ্রাস করা যেতে পারে।

অস্ট্রিয়ার সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞরা আগামী শরতে অস্ট্রিয়ায় করোনার নতুন প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করছেন। ফলে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে অস্ট্রিয়ায় পুনরায় বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়া সহ আরও বিধিনিষেধ ফিরে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ৫,১৪৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ২,০৬৪ জন।

অস্ট্রিয়ার অন্যান্য ফেডারেল রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ১,০৬০ জন,OÖ রাজ্যে ৬১৫ জন,Steiermark রাজ্যে ৪১৯ জন,Salzburg রাজ্যে ৩৫১ জন,Tirol রাজ্যে ২৬১ জন,Vorarlberg রাজ্যে ১৫৯ জন,Burgenland রাজ্যে ১১৪ জন এবং Kärnten রাজ্যে ১০১ জন নতুন করে করোনায় সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪২,৮০,০৪৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৮,৬৮৭ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৪২,২১,৬৫০ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৯,৭১২ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৩৯ জন এবং হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন আছেন ৪৭০ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »