সীতাকুন্ডের ক্যামিক্যাল কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩,আহত কয়েক শতাধিক!

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে, বেসরকারি বিএম কন্টেইনার ডিপো বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আহত তিন শতাধিকের উপরে

বাংলাদেশ ডেস্কঃ রাস্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সীতাকুন্ডের ক্যামিক্যাল ডিপোতে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা পৃথক পৃথক বার্তায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দ্রুত সুচিকিৎসার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।

বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী সীতাকুন্ডের এই বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সাতজন কর্মী রয়েছে। গতকাল শনিবার (৪ জুন) রাতের এই দুর্ঘটনায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ কারখানার প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম আরও জানিয়েছে নিহতদের মধ্যে মমিনুল হক (২৪) নামে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি বাঁশখালীর ছনুয়া মধুখালী গ্রামের ফরিদুল আলমের ছেলে। বাকীদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। খবরে প্রকাশ গতকাল রাত অনুমানিক রাত ১০টার দিকে সোনাইছড়ির কেশবপুরে অবস্থিত বিএম (প্রাইভেট) কন্টেইনার ডিপোতে (সাবেক কাসেম জুট মিলস) আগুন লাগে।

খবর পেয়ে, ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ফায়ার স্টেশন ও সীতাকুণ্ডের কুমিরা থেকে অন্তত আটটি গাড়ি আগুন নির্বাপণের কাজ করার সময়ৎ, রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে, সেখানে কর্মরত কয়েকশ শ্রমিক, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা আহত হন। ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরপরই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং একের পর এক কন্টেইনারে বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে।

স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে কয়েকজন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, কন্টেইনারগুলোতে ক্যামিকেল ভর্তি ছিল। এ কারণে আগুন লাগার পর সেগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং আহতদের নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসকারি হাসপাতালে ছুটে যায়।

এ বিষয়ে, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন বলেন, “বিস্ফোরণের পর পরই আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। বিস্ফোরণে অনেক মানুষ হতাহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগবে।” ফায়ার সার্ভিস জানায়, “শনিবার রাত ১০টায় লাগা আগুন, রবিবার (৫ জুন) ভোর ৬টা পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রথমে ৮টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট কাজ করলেও, পরে ২৪টি ইউনিট এক যোগে কাজ করেও আগুন নিয়েন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে।”

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ডিপোতে প্রায় দেড়শো কন্টেইনার আছে। রাসায়নিক দ্রব্য থাকায়, কন্টেইনার বারবার বিস্ফোরিত হচ্ছে। যে কারণে আগুনের কাছেও ঘেঁষতে পারছি না আমরা। প্রায় ১০০ গজ দূর থেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে।”

পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণের সময় দায়িত্বে থাকা সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের কনস্টেবল তুহিনের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া অন্তত ৯ জন পুলিশ আহত হয়েছেন।এর মধ্যে একজন পরিদর্শক, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও সাত জন কনস্টেবল রয়েছেন।

ভয়াবহ বিস্ফোণে ক্ষতিগ্রস্থ বিএম কনটেইনার ডিপোর মালিক, শিল্প প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের এমডি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। এক বিবৃতিতে বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, “কি কারনে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কন্টেইনার থেকেই আগুন ধরেছে বলে ধারণা করছি। নৈতিকতা ও মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে হতাহতদের পাশে থাকব আমরা। আহতরা যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার আমরা বহন করবো। এ দুর্ঘটনায় যারাই হতাহত হয়েছে, তাদেরকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরন দেয়া হবে। পাশাপাশি, সকল হতাহতের পরিবারের দায়িত্ব নেয়া হবে। প্রশাসন যেভাবে সিদ্ধান্ত দিবে সেভাবেই সহায়তা করা হবে।”

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিঃ সীতাকুণ্ডে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লেগে বিস্ফোরণের ঘটনায়, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এই কমিটি করেছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক শিপন চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে, শ্রম পরিদর্শক (স্বাস্থ্য) শুভংকর দত্তকে। আরেক সদস্য হলেন শ্রম পরিদর্শক (নিরাপত্তা) মো. শামীম হোসেন।

রবিবার ( ৫ জুন) দুপুরে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (চলতি দায়িত্ব) আব্দুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত তদন্ত কমিটির গঠনের কথা জানান।

গঠিত কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করে, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে, জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, একই ঘটনা তদন্তে, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তবে আগে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে প্রশাসন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, “মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দিকেই এখন আমাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ। আমরা আগে উদ্ধার অভিযান শেষ করি। এরপর সব পক্ষকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। পাশপাশি হতাহতদের আর্থিক সহায়তাও দেয়া হবে। কত টাকা করে দেয়া হবে সেটি শিগগির নির্ধারণ করা হবে।”

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ মাধ্যম ও ভয়েস অফ আমেরিকা

কবির আহমেদ /ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »