সহজ শর্ত ও মিষ্টি কথায় মাত্র ১০ দিনে শৈলকুপায় ২ কোটি টাকারও বেশী হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা এনজিও

শেখ ইমন,ঝিনাইদহ-প্রতিনিধি: শৈলকুপা পৌর এলাকার কবিরপুরের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার। সিরাক বাংলাদেশ নামক এক এনজিও থেকে ক্ষ্রুদ্র ঋণ নেওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা জামানত জমা দিয়েছিলেন। হঠাৎ সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন অফিসের ভিতরে লাইট জ¦ললেও অফিসের প্রধান ফটকে তালা। পরে জানতে পারেন এনজিও উধাও। শুধু মৌসুমী আক্তারই না লোনের নামে টাকা হারিয়ে স্বল্প আয়ের কয়েক শত মানুষ হা -হতাশ করছেন অফিসের সামনে দাড়িয়ে।

তারা জানান, আনুমানিক ২ কোটি টাকারও বেশী জামানতের টাকা নিয়ে রাতের আধারে পালিয়েছে এনজিওটির সদস্যরা।ঘটনাটি ঝিনাইদহের শৈলকুপার কবিরপুরে। পৌর এলাকার মধ্যে সাইনবোর্ড টানিয়ে এনজিওর নামে এমন আর্থিক লেনদেন করলেও নজরদারী ছিল না স্থানীয় প্রশাসনের।

সমিতির সদস্যদের অভিযোগ এ ঘটনার পর তারা থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও শুধু সমিতির নাম ঠিকানা নিয়েই বিদায় করেন তাদের।

কবিরপুরের মৌসুমী আক্তার বলেন, গত মাসের ২৫ তারিখে তাদের বাসার সামনে প্রবাসী আকবর আলীর বাসায় সিরাক বাংলাদেশ নামের একটি এনজিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের জন্য বাসা ভাড়া নেয়। এসেই তাদের এক নারী সদস্য সহ ১০/১২ জন পাড়ায় পাড়ায় দ্রত ঋণ দেওয়ার জন্য সদস্য সংগ্রহ করতে থাকে। ঋণের সুবিধা ছিল অন্য এনজিও থেকে অনেক সহজ।এ কারনে তিনি তার স্বামীর ব্যবসা আরো প্রসারিত করতে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা জামানত জমা রাখেন তিনি।কিন্ত সোমবার জানতে পারেন এনজিওটি টাকা নিয়ে উধাও।

৬নং সারুটিয়া ইউনিয়নের চর মৌকুড়ি গ্রামের মসলেম মোল্যার ছেলে শফিকুল ইসলাম, নাদপাড়া গ্রামের বজলু মোল্যা, চরমৌকুড়ি গ্রামের ইদ্রিস আলী জানান, তারা ১ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা জামানত রেখেছিলেন সিরাক বাংলাদেশে।কিন্ত তারা লোন না দিয়ে রাতের আধারে পালিয়ে যায়।

তাদের অভিযোগ প্রতারনার পর তারা থানায় অভিযোগ দিতে গেলে শুধু এনজিও’র নাম ঠিকানা নিয়ে তারা বলেন তদন্ত করে দেখবেন। কিন্ত কোন অভিযোগ নেয়নি।সহজ ঋণ শর্ত দেখিয়ে তারা স্বল্প সময়ে ২ কোটিরও বেশী টাকা নিয়ে লাপাত্তা বলে জানান। তাদের অভিযোগ স্থানীয় কোন প্রতারক চক্র এরসাথে জড়িত থাকতে পাওে বলে তাদের ধারনা।

সাতগাছি গ্রামের ফিরোজ বিশ্বাস জানান, তিনি সিরাক বাংলাদেশ থেকে লোন নেওয়ার জন্য ৫ হাজার টাকা জামানত জমা দেন।কিন্ত লোন না দিয়ে পালিয়ে গেছে এনজিওটি। তিনি আরো বলেন, তাদের মত স্বল্প আয়ের কম পক্ষে ৩ শত সদস্য এ প্রতারনার শিকার বলে জানতে পারেন।ঋণের সহজ শর্ত ও মিষ্টি কথা ছিল প্রতারকদের প্রধান হাতিয়ার।

সরেজমিনে কবিরপুরে এনজিওটির অফিস ঘুড়ে দেখা যায় প্রধান ফটকে তালা দেওয়া থাকলেও ভিতরে জ¦ালিয়ে রেখে গেছে বাতি।সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত।সিরাক বাংলাদেশ। ক্ষুদ্রঋণ দান ও কুঠির শিল্প প্রকল্প। যার সনদ নং ০০৩৫৬- ০০৮৯৪ – ০০০৯১। ঋণের পাশ বইয়ে দেখা গেছে ‘‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’’ এবং কিছু শর্তের কথা।

কবিরপুরে এনজিওটির ভাড়া বাসার মালিক প্রবাসী আকবর আলীর কন্যা আয়শা আক্তার জানান, তাদের বাসা সিরাক বাংলাদেশ নামের একটি এনজিও ভাড়া নেয়। তাদের সাথে চলতি মাসের ৫ তারিখে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত তার আগেই অনেক গ্রাহকের টাকা নিয়ে তারা পালিয়ে গেছে।

কবিরপুরের বাসিন্দা উজ্জল হোসেন জানান, তিনি প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন এরা প্রতারক। তার আপন ভাগনিও প্রতারনার স্বীকার হয়েছেন বলে জানান।

কবিরপুরের সিরাক বাংলাদেশ নামের এনজিওটি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, প্রতারনার স্বীকার কোন গ্রাহক হয়ত সিরাক বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানের ঢাকা অফিসে যোগাযোগের পর ঢাকা অফিস থেকে তারা তাকে টেলিফোনে জানান তাদের প্রতিষ্ঠানের কোন ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম নাই। শৈলকুপাতে যারা এ কাজটি করেছে তারা প্রতারক চক্র।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিরাক বাংলদেশ নামের এনজিও’র কোন গ্রাহক তাদের কাছে কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মেদ জানান, শৈলকুপাতে সিরাক বাংলাদেশ নামের কোন এনজিও নিবন্ধিত না ঋণ কার্যক্রমের জন্য।

ঝিনাইদহ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »