আমাদের একটাই শ্লোগান “লকডাউন আর নয়, সকলকে করোনার প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে”- চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন ফেডারেল সরকার বুধবার নয়টি ফেডারেল রাজ্যের গভর্নরদের সাথে এক পরামর্শের পর দেশে চলমান করোনার চতুর্থ প্রাদুর্ভাবে নতুন বিধিনিষেধ উপস্থাপন করেছে। যেমনটি আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল যে নতুন এই বিধিনিষেধ ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং তা আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
নির্দিষ্ট সংখ্যক নিবিড় পরিচর্যা শয্যার (I.C.U) উপর ভিত্তি করে অর্থাৎ অস্ট্রিয়ার হাসপাতালে করোনা রোগীর আইসিইউ বেড ও করোনার সাধারণ ইউনিটে রোগীর ভর্তির উপর ভিত্তি করে বিধিনিষেধ পরিবর্তন করা হবে।
রাজ্য গভর্নর ও মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকের পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ (ÖVP) বলেন,আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য হল করোনার এই নতুন চতুর্থ প্রাদুর্ভাবে দেশে আরেকটি লকডাউন প্রতিরোধ করা।
তিনি আরও বলেন, লকডাউন প্রতিহত করতে উত্তর হল টিকা দিতে হবে, লকডাউন নয়। আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.ভল্ফগাং মুকস্টাইন (Grüne) এবং পর্যটন মন্ত্রী এলিজাবেথ কস্টিঙ্গার(ÖVP)।
সরকারের উপস্থাপিত ধাপে ধাপে পরিকল্পনাটি আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন সরকার প্রধান সেবাস্তিয়ান কুর্জ। তিনি বলেন,এই দিন থেকে অস্ট্রিয়ার সর্বত্র কেনাকাটায় নাক ও সুরক্ষার বন্ধনি বা মাস্ক পড়তে হবে। তবে যারা করোনার টিকা গ্রহণ করেন নি তাদের জন্য এফএফপি-২ (FFP2-MASK) পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
১৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাতের গ্যাস্ট্রোনোমি সহ অন্যান্য সকল রাতের ইভেন্টে কেবলমাত্র তারাই প্রবেশ করতে পারবেন যারা করোনার প্রতিষেধক টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেছেন এবং যারা করোনা থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন। কারণ হিসাবে তিনি বলেন,রাতের ইভেন্টে একটি বিশেষ স্থানে বিপুল সংখ্যক মানুষ একটি ছোট জায়গায় মিলিত হয়।সংক্ষিপ্তভাবে তিনি জোর দিয়ে বলেন,”এটা স্পষ্ট যে টিকা দেওয়া মানুষের জন্য আমাদের কোন বিধিনিষেধ নেই।” টিকাদানকারীদের এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়তে হবে না।
কুর্জ আবারও জনগণের কাছে এক বিশেষ অনুরোধে বলেন,”দয়া করে টিকা নিন।” এখন পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে কমপক্ষে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। “আমাদের লক্ষ্য হল সমস্ত ফেডারেল রাজ্যে করোনার প্রতিষেধক টিকাদান কার্যক্রম আরও জোরদার করা। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন যে,বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আমাদের দ্রুত ফিরে আসতে করোনার বুস্টার ডোজ বা করোনার তৃতীয় ডোজ দেয়া শুরু করতে হবে। করোনার দ্বিতীয় টিকা দেওয়ার পর এটি অবশ্যই ভালো সময় এখনও দ্রুত শুরু করতে হবে। এটি প্রথম ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের এবং নার্সিংহোমের বাসিন্দাদের দিয়ে শুরু করতে হবে। সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ সবশেষে যারা এখনও করোনার প্রতিষেধক টিকা নেননি তাদেরকে সতর্ক করে বলেন,আপনি যদি করোনার প্রতিষেধক টিকা না নিয়ে থাকেন তাহলে আপনি অতি দ্রুত করোনায় সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন।
আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.ভল্ফগাং মুকস্টাইন (Grüne) বলেন, বর্তমানে এই নতুন সংক্রমণের বিস্তার রোধে করোনার প্রতিষেধক টিকার কোন বিকল্প নাই। এখন আমাদের কাছে দেশের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে করোনার প্রতিষেধক টিকা মজুত আছে। তিনি বলেন,বর্তমানে যারা করোনার প্রতিষেধক টিকা নেননি তারাই বেশী মাত্রায় নতুন সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। টিকা সুরক্ষা ছাড়া মানুষের দ্বারা সৃষ্ট বিশেষ ঝুঁকির উপর জোর দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভল্ফগ্যাং মুকস্টাইন বলেন, “ভাইরাসটি টিকা দেওয়া এবং টিকা ছাড়ানো মানুষের মধ্যে পার্থক্য করে।” কিন্তু তিনি নিজেই এই পার্থক্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “অস্ট্রিয়াতে কোন টিকা নেই, অসংক্রামক অস্ট্রিয়াও নেই, শুধুমাত্র একটি অস্ট্রিয়া আছে।” তাই যাদের টিকা দেওয়া হয়নি তাদের সবাইকে রক্ষা করতে হবে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যা পুনরায় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবস্থাগুলি এখন প্রয়োজনীয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুকস্টাইন নিশ্চিত করেছেন যে, অস্ট্রিয়ার বর্তমান করোনার সংক্রমণের বিস্তারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগামী সপ্তাহেই করোনার জন্য নির্ধারিত আইসিইউর দশ শতাংশ ভরে যাবে। তিনি আরও জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনার এন্টিজেন পরীক্ষার মেয়াদ ৪৮ ঘন্টার পরিবর্তে ২৪ ঘন্টা এবং পিসিআর পরীক্ষা ৭২ ঘন্টার পরিবর্তে ৪৮ ঘন্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই নিয়মটি বর্তমানে ভিয়েনায় চলমান আছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান,এক সাথে ২৫ জন বা তার বেশী মানুষ একসাথে হলে সেখানে ৩-জি নিয়ম বাধ্যতামূলক মানতে হবে। তিনি আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সমগ্র অস্ট্রিয়ায় পুনরায় মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছেন এবং যারা করোনার প্রতিষেধক টিকা নেয় নি তাদের জন্য এফএফপি-২ মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, গত জুন মাস থেকে ভিয়েনা রাজ্য ব্যতীত অন্য কোথাও মাস্ক পড়ার আইন তুলে নেয়া হয়েছিল।
অস্ট্রিয়ার পর্যটনমন্ত্রী এলিজাবেথ কস্টিঙ্গার (ÖVP) তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন,গ্যাস্ট্রনমির সকলকে করোনার ৩-জি নিয়ম মেনে চলতে হবে। তাছাড়াও তিনি সকলকে দ্রুত টিকা গ্রহনের অনুরোধ করেন।তিনি আরও বলেন,”এটি আমাদের এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বলে জানান তিনি।
অস্ট্রিয়ার নয়টি রাজ্যের গভর্নরদের আজকের বৈঠকের চেয়ারম্যান Tirol রাজ্যের গভর্নর গুন্থার প্ল্যাটার (ÖVP) বলেন,”অস্ট্রিয়ায় আর লকডাউন নেই”। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখন আমাদের কাছে করোনার প্রতিষেধক টিকা যথেষ্ট পরিমাণে মজুত আছে। করোনার সংক্রমণের বিস্তার রোধে আমাদের লকডাউনের পরিবর্তে টিকাদান কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে এবং সাথে সাথে যারা এখনও টিকা গ্রহণ করেন নি তাদের জন্য আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের কথা জানান তিনি ।
কবির আহমেদ /ইবিটাইমস