দেশের পূর্বাঞ্চলে আরও কিছুটা বিধিনিষেধ আসছে
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ায় বর্তমানে করোনার তৃতীয় প্রাদুর্ভাব চলছে তাই গতকাল সোমবার সরকারের নীতিনির্ধারকরা দেশের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ, রাজ্য গভর্নর ও বিরোধীদলের সাথে আলোচনার পর আপাতত করোনার বিধিনিষেধ শিথিলতার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। সরকার দেশের পূর্বাঞ্চলের ৩ টি রাজ্য Vienna,Niederösterreich(NÖ)এবং Burgenland রাজ্যকে সবচেয়ে বেশী সংক্রমিত অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
এই উপদ্রুত ৩ টি রাজ্যে শীঘ্রই স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ৩ টি রাজ্যের প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন, কোনও চূড়ান্ত ফলাফল বা সিদ্ধান্ত ছাড়াই আজকের এই করোনার শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন যে,যেহেতু সবেমাত্র করোনার তৃতীয় প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে এবং বর্তমানে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে তাই সমগ্র দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ থেকে সরকার আপাতত সরে এসেছেন। তবে সবাই এই ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে,কমপক্ষে এপ্রিলের মাঝামাঝির পূর্বে যেন আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খোলা না হয়। অনেকে আবার বলেছেন এখন যেভাবে আছে।সেভাবেই থাকুক অর্থাৎ এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিধিনিষেধ বেশী সহজতর বা অতিরিক্ত কঠোর করার দরকার নেই। শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হোক।
সোমবার অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জের নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতিনির্ধারকরা সারাদিন ব্যাপী কয়েকদফা বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ (ÖVP)।দেশের পূর্বাঞ্চলীয় উপরোক্ত ৩ টি রাজ্যকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে পূর্বাঞ্চলের রাজ্য প্রশাসনের সাথে শীঘ্রই ব্যাপক আলাপ আলোচনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংবাদ মাধ্যম।
অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন, সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ জানিয়েছেন যে পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে কেবল ইস্টারের পরে আরও খোলার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ আশা প্রকাশ করে বলেন,আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে অস্ট্রিয়ায় বসবাসকারী সকলেরই করোনার ভ্যাকসিন প্রদান নিশ্চিত করা হবে।ফলে আমরা আরও আশা করছি আগামী গ্রীষ্ম থেকেই আমরা স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরে আসতে পারবো।
অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল “Heute”জানিয়েছেন,সোমবারের করোনার শীর্ষ সম্মেলনে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে না পাড়লেও বিধিনিষেধ শিথিল না করতে সকলেই মত প্রকাশ করেছেন।Heute গতকাল সোমবার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জের বক্তব্যের সারাংশ লিখেছেন যে,বর্তমান চলমান লকডাউনটি অব্যাহত থাকবে, আগামী ২৭ শে মার্চ থেকে আবাসিক হোটেল,রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য বন্ধ ইভেন্ট খোলার পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। কোন রাজ্য,অঞ্চল,জেলা বা শহরের প্রতি ১,০০,০০০ লাখ জনপদে যদি করোনার সংক্রমণ ৪০০ শত হয়,তাহলে সেই এলাকা সাথে সাথে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত। আপাতত স্কুল অব্যাহত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,তবে সপ্তাহে ৩ বার করোনা টেস্টের ব্যবস্থা এবং কোন স্কুলের কমপক্ষে ২ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হলে সেই স্কুল ২ সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী ইস্টারের পর অর্থাৎ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের পূর্বে সকল প্রকার শিথিলতার পরিকল্পনা স্থগিত। তবে অস্ট্রিয়ার পশ্চিমের রাজ্য Vorarlberg বর্তমানে করোনার কমলা জোনে এবং সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে থাকায় এই রাজ্যে গত ১৫ ই মার্চ থেকে হোটেল, রেস্টুরেন্ট সহ সবকিছু খোলার সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকবে। অবশ্য রাজ্য সরকারকে সর্বদা সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান অস্ট্রিয়ার করোনার হটস্পট পূর্বাঞ্চলের ৩ টি রাজ্য ভিয়েনা,লোয়ার অস্ট্রিয়া (NÖ) এবং Burgenland এর মধ্যে পারস্পরিক আলাপ আলোচনা এবং একসাথে কাজ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।ভিয়েনায় নিবিড় সক্ষমতা (আইসিইউ)ওভারলোড হওয়া থেকে রোধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৃথক “পূর্ব সম্মেলন” রয়েছে। ফেডারেল রাজ্য ভিয়েনা, লোয়ার অস্ট্রিয়া এবং বুর্গেনল্যান্ড এই সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাথে এই পদক্ষেপগুলি নিয়ে আলোচনা করবে।
এই ৩ রাজ্যের গ্যাস্ট্রনোমি শিল্প, আবাসিক হোটেল, ফিটনেস সেন্টার সহ অন্যান্য বন্ধ ইভেন্ট অব্যাহত বন্ধই থাকছে। কারফিউ বা প্রস্তান নিষেধাজ্ঞা পূর্বের মতোই রাত ৮ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। রাতে আপনি কেবল সুপরিচিত ব্যতিক্রমী কারণে (ডাক্তারের কাছে যান, জরুরী, কাজের জন্য) বাড়িটি ছেড়ে যেতে পারবেন। গণ পরিবহণ, সুপারমার্কেট,পোস্ট অফিস সহ যেকোন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করলে এফএফপি ২ মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে, দুটি পরিবারের লোকজনের সাথে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে,তবে একই সাথে সর্বোচ্চ ৪ জন প্রাপ্ত বয়স্কদের মিলিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দোকান এবং দেহ পরিষেবা(সেলুন) সরবরাহকারী এখনকার মতোই খোলা থাকছে। তবে দেহ-আলিঙ্গন পরিষেবাগুলির জন্য, গ্রাহকদের একটি করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রদর্শন করতে হবে,যা অবশ্যই ৭২ ঘন্টার মধ্যে হতে হবে। যেখানেই সম্ভব, লোকদের বেশী হোম অফিসে কাজ করার উপর গুরুত্ব ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস