অষ্ট্রিয়ার উজ্জ্বল নক্ষত্র শাহ এম ফরহাদের আজ ২য় মৃত্যু বার্ষিকী, “স্মৃতির পাতায় তিনি আজও অম্লান”

মাহবুবুর রহমানঃ “লিখতে বসেছি আজ অশ্রু ভেজা চোখে, মনের মানুষটিকে আর কখনো পাবো নাকো খুঁজে ” কোন দিন ভাবিনি শাহ এম ফরহাদ কে নিয়ে এভাবে লিখতে হবে । ১৯৮৪ ইং সনের ২৭ মার্চ আমি ভিয়েনা আসি । ঐ দিন বিকেলে ফরহাদ সাহেব আমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আমার খালাতো ভাই ডঃ শাহ মোঃ উল্লাহ ভাইর বাসায় আসেন । সঙ্গে ছিল কয়েকটা বই আর বাংলাদেশ অষ্ট্রিয়া সমিতির সদস্য ফরম । প্রথম দেখাতেই ওনাকে খুব ভাল লেগে গেল । কিছুক্ষন আলাপের পর নাস্তা খাওয়ার সময় উনি হাত বাড়িয়ে আমাকে অষ্ট্রিয়া সমিতির একটা ফরম দিলেন পূরণ করার জন্য । বললাম ভাই সংগঠন বা রাজনীতি এগুলি ছেড়ে দিয়েই ভিয়েনা আসছি, তাই সংগঠন করার মানষিকতা আমার নাই । মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, যারা সংগঠন করার লোক তারা সংগঠন  ছাড়া বাচতে পারেনা, ওনার কাছে হেরে গেলাম । সেই ভিয়েনার প্রথম দিন থেকে ওনার একান্ত কাছের লোক এবং পরম বন্ধু হয়ে গেলাম । দীর্ঘদিন একসাথে থেকেছি, এক বিছানায় ঘুমিয়েছি এবং এক সাথে খেয়েছি, যা আজও আমাকে চোখের জ্বল জড়ায় । ফরহাদ সাহেবের মতো মানুষ একবারই আসে বার বার না।

      

মরহুম শাহ এম ফরহাদ অস্ট্রিয়ায় বসবাসকারী  বাংলাদেশী কমিউনিটির এক কিংবদন্তীর নাম। মরহুম শাহ মোহাম্মদ ফরহাদ সাহেব ১৮ ই নভেম্বর ১৯৪৮ সালে ময়মনসিংহের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ১৯৮০ সালের  ২১শে নভেম্বর অস্ট্রিয়ায় আসেন। যদিও ওনার ল্যান্ড করার কথাছিল ভিয়েনা কিন্তু ঐ দিন ভিয়েনা এয়ারপোর্ট এলাকায় প্রচণ্ড কুয়াশা থাকায় তিনি ল্যান্ড করেন Salzburg এয়ারপোর্ট ।

অস্ট্রিয়া আসার পূর্বে তিনি ময়মনসিংহ শহরের তাঁর নিজের এলাকার নির্বাচিত কাউন্সিলর (ওয়ার্ড কমিশনার) ছিলেন। তিনি শিক্ষা জীবনে বাংলাদেশ এগ্রিকালচার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছিলেন। তারঁ বাবা ময়মনসিংহ শহরের একজন প্রভাবশালী উকিল ছিলেন। মরহুম ফরহাদ সাহেব তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন।

ফরহাদ সাহেবের বড় ভাই বাংলাদেশ এগ্রিকালচার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। তিনি ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন। মেজ ভাই  বাংলাদেশ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের(প্ল্যানিং কমিশন) সচিব ছিলেন। একমাত্র ছোট বোন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং গণিত বিভাগের একজন শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত আছেন।

তিনি ভিয়েনা ইন্টারনেশনাল সেন্টারে দীর্ঘ দিন ধরে চাকুরী করেছেন।  বিশেষ করে ভিয়েনাতে বাংলাদেশী  কমিউনিটি এবং বাংলাদেশ অস্ট্রিয়া সমিতির বিভিন্ন সময়ের ক্রান্তিলগ্নে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেছিলেন। শাহ মোহাম্মদ ফরহাদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সমাজ সেবক হিসেবে কাজ করেছেন। বিশেষ করে  ভিয়েনাস্থ যেসব  বাংলাদেশি রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে  বসবাস করেছেন তাদের বৈধ ভাবে থাকার পিছনে শাহ মোহাম্মদ ফরহাদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ভিয়েনায় বসবাসরত বাংলাদেশীরা শাহ এম ফরহাদের কাছ থেকে সাহায্য নেননি এমন লোক পাওয়া যাবেনা ।

তিনি তার জীবদ্দশায় প্রচুর বই পড়তেন। এই কারণে তিনি যে কোন বিষয়ে প্রচুর জ্ঞ্যান রাখতেন এবং সেই অনুযায়ী বিপদাগ্রস্ত বা সাহায্যপ্রার্থী সকলকে সঠিক পরামর্শ বা তথ্য দিতে পারতেন। সে হিসাবে তাঁর বাসা এক সময় মিনি লাইব্রেরি এবং অস্ট্রিয়ায় আগমনকারী নতুনদের জন্য একটি প্রাথমিক পরামর্শ ও শেল্টার কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

আজ ১০ মে,২০১৯ ইং সালের এই দিনে অষ্ট্রিয়া প্রবাসীদেরকে চোখের জ্বলে ভাসিয়ে উনি পরপারে চলে গেছেন । আজ এই দিনে আমরা ওনার রুহের মাগফেরাৎ কামনা করছি, মহান রাব্বুল আলামিন ওনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন, আমিন ।

 মাহবুবুর রহমান, এডিটর-ইন চিফ /ইবি টাইমস 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »