অস্ট্রিয়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ভারতের সাথে বিমান চলাচল স্থগিতের ঘোষণা
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ায় বর্তমানে বেশ জোড়েসোড়েই চলছে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন প্রদান। এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০,০০০ হাজারের উপরে ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভল্ফগাং মুকস্টাইন গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশে।করোনার প্রতিদিনের ভ্যাকসিন প্রদানের ডোজ ১ লক্ষ ৩০ হাজারে উন্নতি করা হবে।
গতকাল ভিয়েনায় একটি সংবাদ মাধ্যমের সাথে এক অনলাইন ভার্চুয়াল আলোচনায় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার একজন শীর্ষ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং ভ্রমণ ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ডা. হারভিগ কল্লারিটস (Herwig Kollaritsch) বলেন,অস্ট্রিয়ায় বর্তমানে করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের গতি বেশ ভালো। তিনি করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক এই ভ্যাকসিন প্রদানের এই দ্রুত গতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এই ভ্যাকসিন প্রদানের সুফল আমরা আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেখতে পাবো। তিনি জোড় দিয়েই বলেন, এইভাবেই চলতে থাকলে আগামী মধ্য জুনের মধ্যে অস্ট্রিয়ায় করোনায় স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরে আসবে।
তিনি আরও জানান,দেশের জনসংখ্যার এক বিরাট সংখ্যক মানুষ যখন করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করে ফেলবে,তখন স্বাভাবিকভাবেই করোনার কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের বিস্তার কমে আসবে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে নিলে প্রায় শতকরা ৯০% শতাংশ রোগ প্রতিরোধ করবে এবং শতকরা প্রায় ৭০% শতাংশ সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে।
এই ভার্চুয়াল আলোচনাটি অস্ট্রিয়ান সোসাইটি ফর ভ্যাকসিনোলজির উদ্যোগে ভিয়েনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে “মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোভিড ভ্যাকসিনেশন” শীর্ষক শিরোনামে এই সিম্পোজিয়ামটির আয়োজন করা হয়েছিল।
Herwig Kollaritsch ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে প্রচুর বিদ্যমান অধ্যয়নের ফলাফল তালিকাভুক্ত করেছে যা এসএআরএস-কোভি -২ টি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে ভর টিকা দেওয়ার কার্যকারিতার প্রমাণ সরবরাহ করে। ক্লিনিকাল স্টাডিতে, বিভিন্ন ভ্যাকসিনগুলি আগে ৯৫ % পর্যন্ত সুরক্ষা হার দেখিয়েছিল, বিশেষত গুরুতর কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে।

এদিকে আজ অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন যে,অস্ট্রিয়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২৯ এপ্রিল থেকে করোনার জন্য ভারতের সাথে বিমান চলাচল বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছে।বৃহস্পতিবার থেকে অস্ট্রিয়ায় ল্যান্ডিং নিষেধাজ্ঞা এবং পুনরায় কোয়ারেন্টাইনের বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে- আপনি যদি অস্ট্রিয়ায় বাসিন্দা না হন,আগমন ও প্রস্থানের পূর্বে অবশ্যই করোনার পিসিআর পরীক্ষার সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
অস্ট্রিয়া বৃহস্পতিবার থেকে ভারত থেকে আগত বিমানের জন্য প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে এবং কোভিড ওষুধের দ্বারা কঠোরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ দেশটিকে সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে। অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওল্ফগ্যাং মুকস্টাইন আজ এপিএ এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন,ভারত থেকে আগত সরাসরি বিমানের জন্য অবতরণ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। যারা কেবল অস্ট্রিয়াতে বাস করেন তাদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে এবং আগমনের পর অবশ্যই পৃথক অবস্থায় থাকতে হবে অর্থাৎ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন,ভারতের বর্তমান মিউট্যান্ট ভাইরাস যাতে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুকস্টাইন আরও জানান, ভারত থেকে বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় সরাসরি কোনও নির্ধারিত ফ্লাইট নেই। তবে তারা অন্যান্য ইইউ দেশগুলিতে অবতরণ নিষিদ্ধকরণের ফলে বিভিন্ন বেসরকারী এবং চার্টার বিমানে করে যাতে ট্রানজিট হিসাবে অস্ট্রিয়ায় অবতরণ করতে না পারে তার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা। মন্ত্রী অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞা কতদিনের জন্য তা উল্লেখ করেন নি।

আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ২,৩৪০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৬ জন। রাজধানী অস্ট্রিয়ায় আজ নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৫৭৮ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৪০৯ জন,OÖ রাজ্যে ৩৫০ জন,Steiermark রাজ্যে ৩০৫ জন,Tirol রাজ্যে ২২৮ জন,Salzburg রাজ্যে ১৬০ জন,Kärnten রাজ্যে ১৫৫ জন, Vorarlberg রাজ্যে ১২৩ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৩২ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে আজ সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনার ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ৫২,৫৭৩ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার মোট ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ২৯,১৫,৫৬২ ডোজ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬,১৪,৫১০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ১০,১৫২ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৫,৮০,৩৩০ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২৪,০২৮ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৫১৬ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,৭০৬ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস





















