ভিয়েনা ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক হাতে দিয়ে জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে লালমোহনের নয়ন

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০২:৩৭:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ১১৪ সময় দেখুন

ভোলা দক্ষিণ প্রতিনিধি: প্রায় ২৭ বছর বয়সী মো. নয়ন। পাঁচ বছর বয়সে টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হয়ে তার শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে যায়। তবুও থেমে থাকেনি নয়ন। চালিয়ে গেছেন জীবন সংগ্রাম, যা চলছে এখনো। বর্তমানে ডান হাতে দিয়েই চলে তার আয়-রোজগারের কাজ। এক হাতের আয়ের টাকায় চলে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার। নয়ন ভোলার লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব চরউমেদ এলাকার মফিজ মেম্বার বাড়ির মো. ছলেমানের ছেলে।

নয়ন জানান, আমার বয়স যখন ৫ বছর তখন টাইফয়েড জ¦র হয়েছিল। যার ফলে আমার শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে যায়। তখন থেকে বরণ করি পঙ্গুত্ব। সংসারে আমার মা-বাবা, ভাই-বোনসহ রয়েছে স্ত্রী ও দুই সন্তান। শরীর ঠিক মতো চলছে না। তবুও বসে থাকি না। বাবার সহযোগিতায় প্রায় ১০ বছর আগে স্থানীয় বাজারে পানের দোকান দিয়ে নিজেই কাজ শুরু করি। সেখানে বেচাকেনা কম হওয়ায় চিন্তা করি- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বসে আমড়া বিক্রি করার। সেই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর ধরে সকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বসে আমড়া বিক্রি করছি।

তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে বাংলাবাজার মাহমুদিয়া দাখিল মাদরাসার সামনে বসে এক হাত দিয়ে আমড়া পরিস্কার করে লবন, মরিচ দিয়ে মিশিয়ে বিক্রি করি। এতে করে প্রতিদিন খরচ বাদে আমার দুই থেকে আড়াইশত টাকা লাভ হয়। যা সংসারে চালাতে সহযোগি হচ্ছে। তবে আমি প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্ত্রীসহ দুই সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে বাবা এবং ভাইয়েরাও কিছুটা সহযোগিতা করেন।

দাবি জানিয়ে প্রতিবন্ধী নয়ন আরো জানান, প্রতিবন্ধী হয়ে কারও বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। সরকার থেকে আমি নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছি। তবে সংসারে আরেকটু স্বাচ্ছন্দ ফেরাতে একটি মুদি দোকান দেওয়ার চিন্তা করছি। একটি মুদি দোকান দিতে যে পরিমাণ টাকার দরকার তা আমার কাছে নেই। তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ করছি; প্রয়োজনীয় মালামালসহ আমাকে একটি মুদি দোকানের ব্যবস্থা করে দিলে মা-বাবা এবং স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবন আল্লাহর রহমতে ভালোভাবে পার করতে পারবো।

প্রতিবন্ধী নয়নের বিষয়ে বাংলা বাজার মাহমুদিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মতিউল ইসলাম বলেন, নয়ন একজন প্রতিবন্ধী। তিনি অনেক বছর পর্যন্ত আমাদের মাদরাসার সামনে বসে আমড়া বিক্রি করছে। প্রতিবন্ধী হয়েও তিনি ভিক্ষাবৃত্তি না করে কাজ করছে, এটি সত্যিই প্রশংসণীয় ও অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুকরণীয়। তবে তার পাশে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে আরো সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারবে নয়ন।

এ বিষয়ে লালমোহনের রমাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তফা জানান, নয়ন নামের ওই যুবক শরীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে সরকারিভাবে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এছাড়া সামনে কোনো সুযোগ-সুবিধা আসলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া হবে।

জাহিদুল ইসলাম দুলাল/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

এক হাতে দিয়ে জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে লালমোহনের নয়ন

আপডেটের সময় ০২:৩৭:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভোলা দক্ষিণ প্রতিনিধি: প্রায় ২৭ বছর বয়সী মো. নয়ন। পাঁচ বছর বয়সে টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হয়ে তার শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে যায়। তবুও থেমে থাকেনি নয়ন। চালিয়ে গেছেন জীবন সংগ্রাম, যা চলছে এখনো। বর্তমানে ডান হাতে দিয়েই চলে তার আয়-রোজগারের কাজ। এক হাতের আয়ের টাকায় চলে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার। নয়ন ভোলার লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব চরউমেদ এলাকার মফিজ মেম্বার বাড়ির মো. ছলেমানের ছেলে।

নয়ন জানান, আমার বয়স যখন ৫ বছর তখন টাইফয়েড জ¦র হয়েছিল। যার ফলে আমার শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে যায়। তখন থেকে বরণ করি পঙ্গুত্ব। সংসারে আমার মা-বাবা, ভাই-বোনসহ রয়েছে স্ত্রী ও দুই সন্তান। শরীর ঠিক মতো চলছে না। তবুও বসে থাকি না। বাবার সহযোগিতায় প্রায় ১০ বছর আগে স্থানীয় বাজারে পানের দোকান দিয়ে নিজেই কাজ শুরু করি। সেখানে বেচাকেনা কম হওয়ায় চিন্তা করি- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বসে আমড়া বিক্রি করার। সেই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর ধরে সকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বসে আমড়া বিক্রি করছি।

তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে বাংলাবাজার মাহমুদিয়া দাখিল মাদরাসার সামনে বসে এক হাত দিয়ে আমড়া পরিস্কার করে লবন, মরিচ দিয়ে মিশিয়ে বিক্রি করি। এতে করে প্রতিদিন খরচ বাদে আমার দুই থেকে আড়াইশত টাকা লাভ হয়। যা সংসারে চালাতে সহযোগি হচ্ছে। তবে আমি প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্ত্রীসহ দুই সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে বাবা এবং ভাইয়েরাও কিছুটা সহযোগিতা করেন।

দাবি জানিয়ে প্রতিবন্ধী নয়ন আরো জানান, প্রতিবন্ধী হয়ে কারও বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। সরকার থেকে আমি নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছি। তবে সংসারে আরেকটু স্বাচ্ছন্দ ফেরাতে একটি মুদি দোকান দেওয়ার চিন্তা করছি। একটি মুদি দোকান দিতে যে পরিমাণ টাকার দরকার তা আমার কাছে নেই। তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ করছি; প্রয়োজনীয় মালামালসহ আমাকে একটি মুদি দোকানের ব্যবস্থা করে দিলে মা-বাবা এবং স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবন আল্লাহর রহমতে ভালোভাবে পার করতে পারবো।

প্রতিবন্ধী নয়নের বিষয়ে বাংলা বাজার মাহমুদিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মতিউল ইসলাম বলেন, নয়ন একজন প্রতিবন্ধী। তিনি অনেক বছর পর্যন্ত আমাদের মাদরাসার সামনে বসে আমড়া বিক্রি করছে। প্রতিবন্ধী হয়েও তিনি ভিক্ষাবৃত্তি না করে কাজ করছে, এটি সত্যিই প্রশংসণীয় ও অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুকরণীয়। তবে তার পাশে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে আরো সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারবে নয়ন।

এ বিষয়ে লালমোহনের রমাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তফা জানান, নয়ন নামের ওই যুবক শরীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে সরকারিভাবে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এছাড়া সামনে কোনো সুযোগ-সুবিধা আসলে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে দেওয়া হবে।

জাহিদুল ইসলাম দুলাল/ইবিটাইমস