প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে বিধ্বস্ত পশ্চিম ইউরোপ

অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের বুর্গেনল্যান্ড রাজ্যের লেক Neusiedl এর পানি ১৯৬৫ সালের পর এই প্রথম পানির স্তর সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে

ইউরোপ ডেস্কঃ রাজধানী ভিয়েনার ফ্রি মেট্রো পত্রিকা Heute অস্ট্রিয়ার সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর মেটিওরোলজি অ্যান্ড জিওডাইনামিকস (জেডএএমজি) এর উদ্ধৃতি দিয়ে তাদের অনলাইন প্রকাশনায় জানিয়েছে,পূর্বাঞ্চলের বুর্গেনল্যান্ডের লেক Neusiedl am See এর পানি এই বছর ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে।

পত্রিকাটি আরও জানায় ১৯৬৫ সালের পর এই প্রথম গতকাল সোমবার (১৮ জুলাই) পানির স্তর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের পৃষ্ঠ থেকে ১১৫,০৪ মিটার উচ্চতায় থাকা পানির স্তর বুর্গেনল্যান্ডের হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভিসের মতে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পানির সর্বনিম্ন স্তর থেকে গতকাল এক সেন্টিমিটার কম ছিল। লেকের পানি পুনরায় দ্রুত স্বাভাবিক স্তরে আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কেননা পশ্চিম ইউরোপের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সাহারা মরুভূমির তীব্র তাপদাহ প্রবাহিত এখন অস্ট্রিয়ার দিকে ধেয়ে আসছে।

অস্ট্রিয়ার আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামীকাল বুধবার এবং পরের দিন বৃহস্পতিবার অস্ট্রিয়ায় এই বছরের সবচেয়ে গরমের দিন থাকতে
পারে। এই সময় প্রায় সমগ্র অস্ট্রিয়ার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। বুর্গেনল্যান্ডের রাজ্যের রেকর্ড থেকে জানা যায় যে, ১৮৬৫ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই রকমই এক খরা মৌসুমে এই লেকটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে গিয়েছিল। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় লেকটির পানি প্রায় ২০ সেন্টিমিটার শুকিয়ে গেছে।

এদিকে বিবিসি জানিয়েছে,বৃটেন,ফ্রান্স,স্পেন ও পর্তুগালে তাপপ্রবাহের কারণে দাবানল দেখা দিয়েছে। তীব্র এবং নজিরবিহীন এক তাপপ্রবাহে এখন রীতিমত পুড়ছে ব্রিটেন সহ পশ্চিম ইউরোপ । ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগালে প্রচণ্ড গরম ছাড়াও ব্যাপক জায়গা জুড়ে দাবানল দেখা দিয়েছে। ব্রিটেনের ইতিহাসে এই প্রথম তাপপ্রবাহের কারণে ‘রেড এলার্ট’ বা লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে, বলা হচ্ছে দেশটিতে গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবারের তাপমাত্রা ১০০ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িযে যাবে।

স্পেনে কয়েকদিন ধরেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে অবস্থান করছে। এই চলমান তাপপ্রবাহে পর্তুগালে ইতিমধ্যেই তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি
সেলসিয়াসে উঠেছিল। বিবিসি আরও জানায়,পশ্চিম ফ্রান্সের বিস্তীর্ণ এলাকা, পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি সহ আরও অনেক দেশে দাবানলের আগুনে হাজার হাজার হেক্টর জমি ও বাড়িঘর পুড়ে গেছে, সব মিলিয়ে ২০ হাজারেরও বেশি লোককে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা বলছেন বৃটেন সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিশাল অংশ জুড়ে এখন খরা পরিস্থিতি চলছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এসব দেশে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, স্কুল বন্ধ রাখা হচ্ছে, লোকজনকে এমনকি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতেও নিষেধ করা হচ্ছে।

বৃটেনের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে – লন্ডনসহ ইংল্যান্ডের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে মঙ্গলবার তাপমাত্রা কোথাও কোথাও ৪১ ডিগ্রি বা তারও বেশি হতে পারে – যা সাহারা মরুভূমির কিছু অঞ্চলের তাপমাত্রার চাইতে বেশি। আজ মঙ্গলবার লন্ডন শহর হতে যাচ্ছে পৃথিবীর উষ্ণতম স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি।

বৃটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসির ভাষ্য অনুযায়ী ব্রিটেনের ইতিহাসে তাপমাত্রা কখনো ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে বলে রেকর্ডে নাই। ব্রিটেনে এর আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ৩৮.৭ ডিগ্রি যা হয়েছিল ২০১৯ সালে কেমব্রিজে। সেখানে আবহাওয়া দফতর ইতোমধ্যেই চরম তাপমাত্রার জন্য লাল সংকেত জারি করেছে – এটাও বৃটেনের ইতিহাসে আগে কখনো আর হয়নি।

ব্রিটেনের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এজেন্সি ইংল্যান্ডের জন্য চতুর্থ স্তরের সতর্কবার্তা জারি করেছে – যাকে বলা হচ্ছে জাতীয় জরুরি অবস্থা।আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটা এক নজিরবিহীন ঘটনা কারণ ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং ইউরোপ একটি শীতপ্রধান এলাকা বলেই চিরকাল পরিচিত।

তাপপ্রবাহের ফলে ব্রিটেন ও ইউরোপের জীবনযাত্রায় কি প্রভাব পড়ছে? ব্রিটেন ও ইউরোপ শীতপ্রধান অঞ্চল বলে এখানকার বাড়িঘর-দোকানপাট-অফিস-স্কুল ইত্যাদি ভবনগুলো এরকম প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ার উপযোগী করে তৈরি নয়। এগুলো এমনভাবে বানানো যাতে ভবনের ভেতরে তাপ ধরে রাখা যায়। কাজেই এগুলোতে যারা বাস করেন – তাদের জন্য এই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ হতে যাচ্ছে এক চরম ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »