সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতি

সুনামগঞ্জ জেলার পর এবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সিলেট জেলায়। সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রে বন্যার পানি উঠায় সমগ্র সিলেট জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে

বাংলাদেশ ডেস্কঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রে বন্যার পানি উঠায় পুরো সিলেট জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার (১৮ জুন) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর আগে, শুক্রবার (১৭ জুন) থেকে সুনামগঞ্জ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রৌকশলী ফজলুল করীম জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বন্যার পানি উঠে যাওয়ার কারণে উপকেন্দ্রটি আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। পানি নেমে গেলে উপকেন্দ্রটি আবার চালু করা হবে। তবে পানি সেচে দ্রততম সময়ের মধ্যে এটি আবার চালু করার চেষ্টা করছি।’

এদিক সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি বন্যার পানি চলে আসায় বিমান চলাচল তিনদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার (১৭ জুন) সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আগামী সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত সকল ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ থাকবে।’

বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম আরও জানান, বাংলাদেশের সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে, সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুর থেকে বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ শুরু করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

জানা গেছে, সরকার সিলেট ও সুনামগঞ্জে উদ্ধার কাজে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে নিয়োজিত করার কথা জানিয়েছে।

বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছে, “বন্যায় জেলায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ। পরিস্থিতি ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।”

জেলার প্রতিটি উপজেলেই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ ঘরেই হাঁটু থেকে কোমর পানি। নৌকার অভাবে অনেকে ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যেতে পারছে না। এমন অবস্থায় পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধারে, জেলার তিন উপজেলায় সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে।

সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “সুনামগঞ্জ জেলা সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায়, পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে সেনাবাহিনী। শুক্রবার দুপুর থেকে এ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়।”

গত বুধবার থেকে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে, বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। শুক্রবার পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। জেলার প্রায় সব উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে পাঁচটি উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।

উকিলপাড়া এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, “সুনামগঞ্জে এর আগে এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। জেলা শহরের সড়কে চলছে নৌকা, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে গত তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সুনামগঞ্জের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত সুনামগঞ্জ জেলা। তবে প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে মানুষের পাশে দাঁড়াতে।”

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, “পৌর শহরের সব রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মানুষ উঁচু এলাকা খুঁজে খুঁজে আশ্রয় নিচ্ছে। এক ভয়াবহ দুর্যোগে পড়েছে জেলা শহরের বাসিন্দারা।”

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিকালে বলেন, “দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলা সীমান্তের যাদুকাটা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সার্বক্ষণিক খোলা রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ ওঠেননি।”

উপজেলার সদর বাজার, সুলেমানপুর বাজার, বালিজুরি বাজার, পাতারগাঁও বাজার, কাউকান্দি বাজার, একতা বাজার, নতুন বাজার ও শ্রীপুর বাজার পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “বৈর আবহাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ নেই। এছাড়া, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পানিতে তলিয়ে গেছে।” সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বানভাসি মানুষদের সহায়তা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে অঝোর বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জে। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, “মেঘালয়ে প্রায় সাড়ে ছয়শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। আগামী ৭২ ঘণ্টায় সুরমায় পানি বাড়তে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।”

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »