বিশেষ প্রতিবেদক: জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং হলফনামায় বিভিন্ন তথ্য গোপন করে নির্বাচন কমিশনে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে নেত্রকোনা দুর্গাপুরের বর্তমান পৌর মেয়র আলা উদ্দিন আলালের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে দায়ের করা হলফনামায় তথ্য থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও সেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও তথ্য দেয়া হয়নি হলফনামায়। এমনকি বেশ কয়েকবার বিদেশ ভ্রমণ করলেও সে সব তথ্য দেননি তিনি। ২০১৯ সালে স্ত্রী সন্তানসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভারত এবং থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু হলফনামায় এসব তথ্য তিনি দেননি। বিদেশ ভ্রমণের এ তথ্য তিনি এড়িয়ে গেছেন। এছাড়াও পাসপোর্টে বৈদেশিক মুদ্রা এন্ডোর্স না করে কিভাবে তিনি বিদেশ গেলেন তাও রহস্যের সৃষ্টি করেছে। এছাড়া আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনএবং অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
হলফনামার তথ্যে দেখা গেছে, তারই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যা ময়মনসিংহে রয়েছে আরিফ এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠান কোন তথ্য তিনি হলফনামায় দাখিল করেননি। হলফনামায় তার ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার হিসাব তিনি দেখিয়েছিলেন এবং কোন এফডিআর নেই বলেও উল্লেখ করেন। তবে হলফনামা জমা দেয়ার চারদিন পর ৩ জানুয়ারি ২০২১ সালে অগ্রণী ব্যাংকে আরিফ এন্টারপ্রাইজের হিসাব নম্বর থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা তোলেন। এছাড়া হলফনামা জমা দেয়ার পর জানুয়ারি মাসে দুর্গাপুর সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে ২ কোটি টাকার এফডিআর নগদায়ন করেন। কিন্তু এসব কোনো তথ্যই তিনি হলফনামায় যুক্ত করেন নি। এসব অর্থের উৎস জানা যায়নি। হলফনামা দেয়ার তিনদিন আগে ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর দুর্গাপুর অগ্রণী ব্যাংক থেকে আলিফ এন্টারপ্রাইজ অ্যাকাউন্ট থেকে এক কোটি টাকা জমা দেয়া হয় এবং মতিঝিলের শাপলা চত্বর অগ্রণী ব্যাংক থেকে তা তোলা হয়। এ টাকা তিনি মনোনয়ন পাবার পেছনে খরচ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব অনিয়ম জানেন মেয়রের ম্যানেজার দীপক পত্রনবিশ এবং আরো দুই-একজন। ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বর্তমানে তিনি দুর্গাপুর তেরি বাজার এলাকায় ৫ শতাংশ জমিতে আদিব ভিলা নামে যে ভবনটি তিনি তৈরি করেছেন সেখানে আড়াই শতাংশ সরকারি খাসজমি দখল করেছেন। হলফনামায় বালি উত্তোলন ও যৌথ মালিকানার হোটেল ব্যবসার কথা উল্লেখ থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি।
এ সব বিষয় জানতে যোগাযোগ করা হলে নেত্রকোনা দুর্গাপুর পৌরসভার মেয়র আলাউদ্দিন আলাল স্বীকার করেন বিদেশ যাওয়ার তথ্য তিনি হলফনামায় দেননি। কেন দেননি এ বিষয়টি সম্পর্কেও কোনো তথ্য দিতে রাজি নন তিনি। আয়কর জমা দেয়ার ব্যাপারেও তথ্য দিতে নারাজ মেয়র আলাউদ্দিন। তিনি জানান, এসব বিষয়ে একটু কাগজপত্র দেখে পরবর্তীতে জানাতে হবে। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন ধরনের কাগজপত্র কিংবা তথ্য জানাতে পারেননি।
এদিকে, হলফনামায় জালিয়াতি প্রতারণার শামিল উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটি বড় ধরণের একটি অপরাধ। তথ্য গোপন করার বিষয়টি নির্বাচন কমিশন অবগত হলে এবং তদন্তে প্রমাণিত হলে মেয়র পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিধান রয়েছে। অপরাধের শাস্তি অনুযায়ী মেয়র পদে থাকতে পারবেন না তিনি।
এসএটি/ইবিটটাইমস/আরএন