জার্মানিতে করোনা টিকাদান কার্যক্রমে গতি আনতে বিশেষ উদ্যোগ

ইউরোপের অন্যান্য দেশের মত জার্মানিতেও করোনার প্রতিষেধক টিকা গ্রহণের গতি হ্রাস পেয়েছে

ইউরোপ ডেস্কঃ জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে (DW) জানিয়েছে জার্মানির সরকার সপ্তাহব্যাপী প্রচার ও সহজে করোনা টিকা নেবার ব্যবস্থার মাধ্যমে আরও বেশি মানুষকে টিকা দেবার চেষ্টা শুরু হচ্ছে৷ কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দিয়ে মহামারির চতুর্থ প্রাদুর্ভাবের মোকাবিলার চেষ্টা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা জানায় অন্যান্য অনেক শিল্পোন্নত দেশের মতো জার্মানিতেও করোনা টিকা কর্মসূচি থমকে গেছে৷ প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ টিকার প্রয়োজনীয় ডোজ পাবার পর নতুন করে অনাগ্রহী, অলস, সংশয়ী অথবা কট্টর টিকা-বিরোধীদের কিছুতেই এই কর্মসূচির আওতায় আনা যাচ্ছে না৷ লাল ফিতের ফাঁস ছাড়াই শহরের কেন্দ্রস্থলে মোবাইল ভ্যানে করোনা টিকার ‘ওয়াক ইন’  ব্যবস্থা সত্ত্বেও কর্মসূচির গতি বাড়ছে না৷

অথচ জার্মানির বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা আসন্ন শীতের মাসগুলির আগে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও বেশি মানুষকে টিকা দেবার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছেন৷ কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ মানুষ সব প্রয়োজনীয় ডোজ পেলে তবেই চতুর্থ ঢেউ মোকাবিলা করা যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন৷ উল্লেখ্য, জার্মানিতে বর্তমানে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণের গড় সংখ্যা প্রায় ৮২ হতে চলেছে৷ ফলে সমগ্র জার্মানি করোনার লাল জোনের একেবারেই সন্নিকটে।এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে বর্তমানে জার্মানিতে হাসপাতালে ভর্তি করোনায় আক্রান্ত মানুষের প্রায় কেউই টিকা নেন নি৷

টিকাদান কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও মানুষকে উৎসাহ দিতে সরকার আজহসোমবার থেকে গোটা দেশে নতুন এক প্রচার অভিযান শুরু করেছে ৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ‘এখানে টিকা দেওয়া হচ্ছে’ হ্যাশট্যাগ সম্বল করে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। একটি ওয়েবসাইটেই দেশের সব টিকাকেন্দ্রের হদিস পাওয়া যাবে৷ এর আওতায় এক সপ্তাহ ধরে শপিং মল, লাইব্রেরি, মসজিদ থেকে শুরু করে মানুষের সমাগম হয় এমন অসংখ্য জায়গায় বিনা অ্যাপয়েন্টমেন্টে ও বিনামূল্যে করোনা টিকা নিতে পারবেন৷

স্থায়ী ও অস্থায়ী কেন্দ্রে সহজেই সেই সুযোগ পাওয়া যাবে৷ সাপ্তাহিক প্রচার অভিযানের শেষেও সে সব জায়গায় টিকা নেবার ব্যবস্থা রাখা হবে৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার আজ সোমবার বার্লিনের একটি স্কুলে গিয়ে টিকা কর্মসূচির অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন।

বিদায়ী জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রবিবার সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করার আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, এর আগে এত সহজ ও দ্রুত গতিতে করোনা টিকা পাওয়ার সুযোগ ছিল না৷ জার্মানির প্রায় পাঁচ কোটি মানুষকে করোনা টিকা দেবার সাফল্য তিনি এ প্রসঙ্গে তুলে ধরেন৷ অবশিষ্ট মানুষদের উদ্দেশ্যে তিনি আত্মরক্ষা ও অন্যদের রক্ষার স্বার্থে করোনা টিকা নেবার ডাক দেন৷

এদিকে ১২ বছরের কমবয়সিদের জন্যও করোনা টিকা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছে বায়োনটেক কোম্পানি৷ কোম্পানির দুই প্রতিষ্ঠাতা উগুর শাহিন ও ওজলেম ত্যুরেচি জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর মাসের শেষেই পাঁচ থেকে এগারো বছর বয়সিদের উপর এই টিকার প্রভাব সংক্রান্ত তথ্য পেশ করা হবে৷ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় টিকার ডোজ এক-তৃতীয়াংশ রেখে এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে৷ চলতি বছরের শেষের আগেই আরও ছোট শিশুদের উপর করোনা টিকা প্রয়োগ সংক্রান্ত তথ্যও পেশ করা হবে বলে তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন৷ সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন ও অনুমতি পেলেই টিকা দেবার কাজ শুরু হতে পারে৷

তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে

কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস /এম আর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »