জাহিদ দুলাল, ভোলা দক্ষিণ : প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ ও গবাদিপশু রক্ষায় সারাদেশের ন্যায় ভোলার লালমোহন উপজেলার তেতুলিয়া নদীর গর্ভে অবস্থিত বিচ্ছিন্ন চর শাহাজালালে শেষ ধাপে ২ কোটি ৫০ লক্ষ ৬২ হাজার ৯৩০ টাকা ব্যয়ে দুর্যোগ আশ্রয়ণ কেন্দ্র কাম মুজিব কিল্লা স্থাপন করার প্রকল্প হাতে নেন সরকার। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার সময়সীমা থাকায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তরি গড়ি করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাতের আঁধারে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চর শাহাজালালে দুর্যোগ আশ্রয়ণ কেন্দ্র কাম মুজিব কিল্লার কাজে মেয়াদ উত্তীর্ণ সিমেন্ট, নিম্নমানের খোয়া, রড এবং লাল বালির সাথে লোকাল বালি মিক্স করে ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বলা হয়েছিল দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে এসব ভবন সামাজিক অনুষ্ঠান কমিউনিটি উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি ভবনের সামনে খোলা জায়গা ব্যবহার করা হবে খেলাধুলায়। সরকারিভাবে এই প্রকল্পের নাম দিয়েছেন দুর্যোগে আশ্রয়ণ কেন্দ্র কাম মুজিব কিল্লা। তবে এই ধরনের নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মিত আশ্রায়ণ কেন্দ্রটি ওই এলাকার মানুষের দুর্যোগকালীন সময়ে উপকারের পরিবর্তে ধসে পড়ে মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
ওই চরে বসবাসকারী স্থানীয় মো. সবুজ নামের এক উপকারভোগী অভিযোগ করে বলেন, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্নিঝড়ের সময় উপকূলের গবাদি পশু এবং মানুষের জীবন রক্ষার জন্য এই আশ্রয়ণটি নির্মাণ হলেও উলটো এটি আমাদের জন্য মরণ ফাঁদ তৈরী করা হচ্ছে। যেহেতু আশ্রয়ণের বেশির ভাগ কাজ ঢালাইসহ রাতের আধারে করেছেন ঠিকাদার।
মো. মাকছুদ নামের আরেক উপকারভোগী অভিযোগ করে বলেন, ভবনটি যেভাবে বালি দিয়ে ভরাট করে নির্মাণ করছে তবে বন্যা ও সামান্য বাতাসে ভবনের চারপাশের বালি উড়ে গিয়ে অথবা জোয়ারের পানির স্রোতে নিচ থেকে বালি চলে গিয়ে ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও, দুর্যোগে এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রটিকে মানুষের উপকারের জন্য তৈরি করা হলেও এটি মানুষের উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে অশাংকা করেছেন এই উপকারভোগী।
পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের চরশাহাজালালের নাজিম নামের একজন জানান, এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি তৈরি করতে ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের তদারকির গাফিলতির কারণে ঠিকাদার নয়ছয় করে কাজ বাস্তবায়ন করছে। এককথায় সব মিলিয়ে এই পুরো প্রকল্পটি প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঈদ্রিস আলী কনস্ট্রাকশনের বাস্তবায়নকারী ফজলুল কবিরের মুঠোফোনে আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণে মানহীন সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহ আজিজ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের চরশাহাজলালে নির্মিত দুর্যোগ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে নিম্নমানের সামগ্রী ও মেয়াদ উত্তীর্ণ সিমেন্ট ব্যবহার এবং রাতের আধাঁরে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পূর্ণ করার বিষয়ে ভোলা জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আজিম উদ্দিন এর জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি সরেজমিনে গিয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ঢাকা/ইবিটাইমস/এসএস




















