ইবিটাইমস ডেস্ক : ইসরাইল রোববার তাদের সেনাবাহিনী লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে হামলা আরও জোরদার করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এর একদিন আগে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি বিমান হামলায় দেশটিতে চারজন নিহত হয়েছেন।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে লেবাননের এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরাইল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে পাঁচটি এলাকায় সেনা মোতায়েন রেখেছে এবং নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
জেরুজালেম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হিজবুল্লাহ আগুন নিয়ে খেলছে, আর লেবাননের প্রেসিডেন্ট গড়িমসি করছেন।’
তিনি বলেন, লেবানন সরকার হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র এবং লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে এবং হামলা আরও জোরদার হবে। আমরা উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য কোনো হুমকি সহ্য করব না।’
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, হিজবুল্লাহ ‘পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহের’ চেষ্টা করছে।
রোববার মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা আশা করি, লেবানন সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে— হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করবে। তবে এটা স্পষ্ট, আমরা যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লেবাননকে আমাদের বিরুদ্ধে নতুন ফ্রন্টে পরিণত হতে দেব না এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।’ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হিজবুল্লাহ ইসরাইলে রকেট হামলা শুরু করে। এতে লেবাননের উত্তর সীমান্তবর্তী হাজার হাজার ইসরাইলি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। এর ফলে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে সংঘাত চলে। দুই মাসের প্রকাশ্য যুদ্ধের পর গত বছর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
ইরান-সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে এখনও তারা সশস্ত্র এবং আর্থিকভাবে সক্ষম।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইসরাইল এই গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে এবং যুদ্ধ চলাকালে আরও অনেক শীর্ষ নেতাকে হত্যা করে।
যুদ্ধবিরতির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র লেবানন কর্তৃপক্ষের ওপর হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য চাপ বাড়িয়েছে। লেবানন সরকার অস্ত্রের ওপর রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ আরোপের একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে এবং জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে সেনাবাহিনী তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
ইসরাইল যুদ্ধবিরতির পরও লেবাননে বিমান হামলা চালানো বন্ধ করেনি। তারা হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে এবং সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হামলা আরও বাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইসরাইলের স্থলভাগের সেনারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে একটি প্রাণঘাতী অভিযান চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন সেনাবাহিনীকে এসব অনুপ্রবেশ মোকাবিলার নির্দেশ দেন।
গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহায়তায় আউন ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান।
তবে পরে আউন অভিযোগ করেন, তার আলোচনার প্রস্তাবের জবাবে ইসরাইল হামলা আরও জোরদার করেছে। সর্বশেষ হামলায় শনিবার নাবাতিয়েহ জেলায় চারজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, এতে হিজবুল্লাহর রাদওয়ান ফোর্সের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন।
সেনাবাহিনী জানায়, ‘এই ব্যক্তি অস্ত্র পরিবহনে জড়িত ছিল এবং লেবানের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর সন্ত্রাসী অবকাঠামো পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় অংশ নিচ্ছিল।’
সেনাবাহিনী জানায়, ‘হিজবুল্লাহর কর্মকাণ্ড ইসরাইলি রাষ্ট্র ও এর নাগরিকদের জন্য হুমকি এবং ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে সমঝোতার লঙ্ঘন।’
ঢাকা/এসএস















