ভিয়েনা ১০:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তাকাইচি হচ্ছেন জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০২:৩৭:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ৭২ সময় দেখুন

ইবিটাইমস ডেস্ক : জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন সানায়ে তাকাইচি। তিনি সামাজিকভাবে বেশ রক্ষণশীল। টোকিও থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মার্গারেট থ্যাচারকে নিজের আদর্শ মানা তাকাইচি শনিবার ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)’র প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন এবং সম্ভবত এই মাসের শেষের দিকে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

তাকাইচি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি তার মন্ত্রিসভায় নারীর সংখ্যা বাড়িয়ে ‘নর্ডিক’ দেশগুলোর মতো করবেন।

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিগিরু ইশিবার মন্ত্রিসভায় মাত্র দু’জন নারী মন্ত্রী ছিলেন।

৬৪ বছর বয়সী তাকাইচি নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে ‘সচেতনতা বাড়ানোর আশা’ প্রকাশ করেছেন এবং নিজের মেনোপজের অভিজ্ঞতা নিয়েও খোলাখুলি কথা বলেছেন।

এই ধরনের ইঙ্গিত দেওয়া সত্ত্বেও, লিঙ্গ সংক্রান্ত নীতিতে তার অবস্থান রক্ষণশীল এলডিপি’র দিকেই ঝুঁকে রয়েছে।

তিনি ১৯ শতকের একটি আইন সংস্কারের বিপক্ষে। আইনটিতে বিবাহিত দম্পতিকে একই পদবি গ্রহণ করতে হয়। এ আইনের ফলে অধিকাংশ জাপানি নারী স্বামীর পদবি গ্রহণ করতে বাধ্য হন।

তাকাইচি চান, জাপানের রাজপরিবারে যেন শুধু পুরুষরাই উত্তরাধিকারী হন।
তিনি সমকামী বিবাহেরও ‘ঘোরতর বিরোধী’।

টোকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও লিঙ্গ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইউকি সুজি এএফপি’কে বলেন, তাকাইচির ‘নারী অধিকার বা জেন্ডার সমতা নীতিতে কোনো আগ্রহ নেই। সুতরাং, পূর্ববর্তী এলডিপি সরকারের তুলনায় এই নীতিগত ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।’

তবে সুজি আরও বলেন, একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতীকী গুরুত্ব ‘খুবই তাৎপর্যপূর্ণ’। কিন্তু ফল অর্জনের চাপ থাকবে অনেক বেশি এবং যদি তিনি ব্যর্থ হন, তবে এটি ‘নারী প্রধানমন্ত্রীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা’ তৈরি করতে পারে।

টোকিওর একজন অফিস কর্মী, ইউকা, তাকাইচির জয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ইউকা’র বয়স ৫০-এর কোঠায়।

ইউকা এএফপি’কে বলেন, ‘আমরা গর্বের সঙ্গে বিশ্বকে বলতে পারবো যে জাপানে একজন নারী নেতা আসতে চলেছেন।’

তবে তিনি মনে করেন, তাকাইচির অধীনে লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতি হবে কি-না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

গত বছর সাবেক বিমানবালা মিৎসুকো তোত্তোরি জাপান এয়ারলাইন্সের প্রধান হন। কর্পোরেট জগতে এটি একটি বিরল ঘটনা। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও সীমিত শিশু পরিচর্যার সুযোগ নারীদের পিছিয়ে রাখে।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জাপানে ২০২১ সালে ব্যবস্থাপনা পদে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে কম— মাত্র ১৩ দশমিক ২ শতাংশ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৫ সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-এ জাপান ১৪৮টি দেশের মধ্যে ১১৮তম অবস্থানে ছিল।

ইউকা বলেন, ‘এখানে অনেক যোগ্য নারী আছেন, কিন্তু নেতৃত্বের জায়গায় থাকেন পুরুষরাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক নারী তাদের কর্মজীবনের শিখরে পৌঁছেও ইস্তফা দিতে বাধ্য হন, কারণ তাদের সন্তান বা বয়স্ক বাবা-মাকে দেখাশোনা করতে হয়।’

রাজনীতিতেও নারীদের প্রতিনিধিত্ব কম। সংসদের নিম্নকক্ষে নারী আইনপ্রণেতার সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ মাত্র।

এর একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হলেন তিন মেয়াদের টোকিওর গভর্নর য়ুরিকো কোইকে, যিনি প্রি-স্কুল শিশুদের জন্য বিনামূল্যে ডে-কেয়ার কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি নারী-বান্ধব নীতি ঘোষণা করেছেন।

নারী সংসদ সদস্যরাও গৃহিণীর দ্বৈত দায়িত্ব পালনের কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছেন— যা পুরুষদের ভাবনায়ও আসে না।

এই অল্পসংখ্যক নারীও নিয়মিতভাবে লিঙ্গ-বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হন। যেমন- ২০২৪ সালে সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী তারো আসো তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়াকে ‘আন্টি’ ও ‘তেমন সুন্দরী নন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

জাপানে ‘হ্যাশট্যাগ মি ট’ু আন্দোলনও তেমন সাড়া ফেলেনি। কারণ যৌন নিপীড়নের শিকার নারীরা সামনে আসতে ভয় পান।

যারা সাহস করে এসেছেন— তারা প্রশংসা পেয়েছেন ঠিকই, তবে অনলাইনে ঘৃণার মুখেও পড়েছেন।

এমন সাহসী নারীদের মধ্যে সাবেক সৈনিক রিনা গোনোই ও সাংবাদিক শিওরি ইতো রয়েছেন।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিচর্যাকারী ২৩ বছর বয়সী রিউকি তাতসুমি এএফপি’কে বলেন, ‘আমাদের দেশে অতীতে নারী সম্রাট ছিলেন। কিন্তু কোনো নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।’

তিনি বলেন, ‘তাই, আমি মনে করি, এটি জাপানের অগ্রগতির জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে।’
ঢাকা/এসএস

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

তাকাইচি হচ্ছেন জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী

আপডেটের সময় ০২:৩৭:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

ইবিটাইমস ডেস্ক : জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন সানায়ে তাকাইচি। তিনি সামাজিকভাবে বেশ রক্ষণশীল। টোকিও থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মার্গারেট থ্যাচারকে নিজের আদর্শ মানা তাকাইচি শনিবার ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)’র প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন এবং সম্ভবত এই মাসের শেষের দিকে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

তাকাইচি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি তার মন্ত্রিসভায় নারীর সংখ্যা বাড়িয়ে ‘নর্ডিক’ দেশগুলোর মতো করবেন।

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিগিরু ইশিবার মন্ত্রিসভায় মাত্র দু’জন নারী মন্ত্রী ছিলেন।

৬৪ বছর বয়সী তাকাইচি নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে ‘সচেতনতা বাড়ানোর আশা’ প্রকাশ করেছেন এবং নিজের মেনোপজের অভিজ্ঞতা নিয়েও খোলাখুলি কথা বলেছেন।

এই ধরনের ইঙ্গিত দেওয়া সত্ত্বেও, লিঙ্গ সংক্রান্ত নীতিতে তার অবস্থান রক্ষণশীল এলডিপি’র দিকেই ঝুঁকে রয়েছে।

তিনি ১৯ শতকের একটি আইন সংস্কারের বিপক্ষে। আইনটিতে বিবাহিত দম্পতিকে একই পদবি গ্রহণ করতে হয়। এ আইনের ফলে অধিকাংশ জাপানি নারী স্বামীর পদবি গ্রহণ করতে বাধ্য হন।

তাকাইচি চান, জাপানের রাজপরিবারে যেন শুধু পুরুষরাই উত্তরাধিকারী হন।
তিনি সমকামী বিবাহেরও ‘ঘোরতর বিরোধী’।

টোকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও লিঙ্গ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইউকি সুজি এএফপি’কে বলেন, তাকাইচির ‘নারী অধিকার বা জেন্ডার সমতা নীতিতে কোনো আগ্রহ নেই। সুতরাং, পূর্ববর্তী এলডিপি সরকারের তুলনায় এই নীতিগত ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।’

তবে সুজি আরও বলেন, একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতীকী গুরুত্ব ‘খুবই তাৎপর্যপূর্ণ’। কিন্তু ফল অর্জনের চাপ থাকবে অনেক বেশি এবং যদি তিনি ব্যর্থ হন, তবে এটি ‘নারী প্রধানমন্ত্রীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা’ তৈরি করতে পারে।

টোকিওর একজন অফিস কর্মী, ইউকা, তাকাইচির জয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ইউকা’র বয়স ৫০-এর কোঠায়।

ইউকা এএফপি’কে বলেন, ‘আমরা গর্বের সঙ্গে বিশ্বকে বলতে পারবো যে জাপানে একজন নারী নেতা আসতে চলেছেন।’

তবে তিনি মনে করেন, তাকাইচির অধীনে লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতি হবে কি-না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

গত বছর সাবেক বিমানবালা মিৎসুকো তোত্তোরি জাপান এয়ারলাইন্সের প্রধান হন। কর্পোরেট জগতে এটি একটি বিরল ঘটনা। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও সীমিত শিশু পরিচর্যার সুযোগ নারীদের পিছিয়ে রাখে।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জাপানে ২০২১ সালে ব্যবস্থাপনা পদে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে কম— মাত্র ১৩ দশমিক ২ শতাংশ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৫ সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-এ জাপান ১৪৮টি দেশের মধ্যে ১১৮তম অবস্থানে ছিল।

ইউকা বলেন, ‘এখানে অনেক যোগ্য নারী আছেন, কিন্তু নেতৃত্বের জায়গায় থাকেন পুরুষরাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক নারী তাদের কর্মজীবনের শিখরে পৌঁছেও ইস্তফা দিতে বাধ্য হন, কারণ তাদের সন্তান বা বয়স্ক বাবা-মাকে দেখাশোনা করতে হয়।’

রাজনীতিতেও নারীদের প্রতিনিধিত্ব কম। সংসদের নিম্নকক্ষে নারী আইনপ্রণেতার সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ মাত্র।

এর একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হলেন তিন মেয়াদের টোকিওর গভর্নর য়ুরিকো কোইকে, যিনি প্রি-স্কুল শিশুদের জন্য বিনামূল্যে ডে-কেয়ার কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি নারী-বান্ধব নীতি ঘোষণা করেছেন।

নারী সংসদ সদস্যরাও গৃহিণীর দ্বৈত দায়িত্ব পালনের কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছেন— যা পুরুষদের ভাবনায়ও আসে না।

এই অল্পসংখ্যক নারীও নিয়মিতভাবে লিঙ্গ-বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হন। যেমন- ২০২৪ সালে সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী তারো আসো তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়াকে ‘আন্টি’ ও ‘তেমন সুন্দরী নন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

জাপানে ‘হ্যাশট্যাগ মি ট’ু আন্দোলনও তেমন সাড়া ফেলেনি। কারণ যৌন নিপীড়নের শিকার নারীরা সামনে আসতে ভয় পান।

যারা সাহস করে এসেছেন— তারা প্রশংসা পেয়েছেন ঠিকই, তবে অনলাইনে ঘৃণার মুখেও পড়েছেন।

এমন সাহসী নারীদের মধ্যে সাবেক সৈনিক রিনা গোনোই ও সাংবাদিক শিওরি ইতো রয়েছেন।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিচর্যাকারী ২৩ বছর বয়সী রিউকি তাতসুমি এএফপি’কে বলেন, ‘আমাদের দেশে অতীতে নারী সম্রাট ছিলেন। কিন্তু কোনো নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।’

তিনি বলেন, ‘তাই, আমি মনে করি, এটি জাপানের অগ্রগতির জন্য এটি একটি সুযোগ হতে পারে।’
ঢাকা/এসএস