ভিয়েনা ০৯:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভাঙন রোধে জোটে শুধু ‘জিও’ ব্যাগ’

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ১১:৫৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
  • ৫ সময় দেখুন

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : যে গ্রামটিতে খাসসহ মোট জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৬শ’ বিঘা। সেই গ্রামটিতে এখন জমির পরিমাণ নেমে এসেছে ২শ’ ৫০ বিঘায়। গ্রামটিতে বসতিও ছিল আনুমানিক ৭শ’ পরিবারের। কিন্তু নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেকেই অন্যত্র বসতি স্থাপন করেছেন, কেউ বসবাস করছেন সরকারি জমিতে। ফলে ওই এলাকায় বর্তমানে বসতির পরিমাণ প্রায় ২শ’।
বড়ুরিয়া নামক গ্রামটিতে একসময় অসংখ্য মানুষের বসবাস থাকলেও গড়াই নদীর ভাঙ্গনে এখন পাল্টেছে সেই চিত্র। অনেকেই হারিয়েছেন সহায় সম্বল, হয়েছেন নি:স্ব, ছেড়েছেন গ্রাম।
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গড়াই নদীর অব্যাহত ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে জনবহুল এই গ্রামটি। এরই মধ্যে দুই তৃতীয়াংশের বেশী চলে গেছে নদী গর্ভে। ভাঙ্গনে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার অংশের জেগে ওঠা চরেও চাষাবাদে যেতে পারেনা এই গ্রামের মানুষ।
তবে বর্ষার শুরুতে ভাঙ্গন রোধে অস্থায়ী ভিত্তিতে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্ষার শুরুতে ভাঙ্গন শুরু হয়। পানি বৃদ্ধিতে ভাঙনও বৃদ্ধি পায় এবং পানি কমে যাওয়ার সময় তা তীব্র আকার ধারন করে।
ভাঙনে সহায়-সম্বলহীনরা বলছেন,নদীর এরকম ভয়াবহ ভাঙ্গন আর কোথাও নেই। কিন্তু ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ এ যাবৎ কেউ নেয়নি। দুর্ভোগ রয়েই গেছে।

জানা যায়, উপজেলায় নদীর বহমান অংশ ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬ কিলোমিটার ভাঙ্গনপ্রবন হলেও সব থেকে বেশী ভাঙ্গন তীব্রতা বড়ুরিয়া গ্রামের দেড় কিলোমিটার অংশে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, কোথাও বেশী ,কোথাও কম। সেই হিসাবে প্রতি বছর গড়ে ৫ মিটার অর্থাৎ ১৫ ফিট নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে।

বড়ুরিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নদীর ওপারে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গনেশপুর আদর্শ গ্রাম। আমাদের জমি ভেঙে ওপাশে জেগে ওঠা চরে কুষ্টিয়ার মানুষ যেতে দেয় না। আমাদের চর উদ্ধারেও কেউ ব্যবস্থা নেয় না। ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী উদ্যোগ নিলে এই দুর্ভোগ কমে যেত।’

ইসহাক মন্ডল বলেন, ‘দুই দশকে তাঁদের গ্রামের আনসার আলী,আজাদ হোসেন,তারেক আলী,আবদুল মান্নান,রবিউল ইসলাম,সামছুল আলমসহ অসংখ্য পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। একই ভাবে কৃষ্ণনগর গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। কেউ অন্যত্র জমি কিনে ঘর করেছেন। আবার কেউ সব হারিয়ে যাযাবরের মতো বসবাস করছেন। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়া হলে নদীর তীরে এখনও যারা বসবাস করছেন তাদেরও অন্যত্র চলে যেতে হবে।’

কৃষ্ণনগর গ্রামের আবদুর রহিম মণ্ডল বলেন, ‘ভাঙনের কারণে বসতবাড়ির জায়গা পাল্টেছেন ছয়বার। তাঁর আটবিঘা জমি ছিল। পাকা ভিতের ওপর টিনের ঘর ছিল। গরু-ছাগল পালতেন। এখন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। সবকিছু চলে গেছে এই গড়াই নদে।’

একই গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন,‘গড়াই নদ আগে অনেকটা উত্তরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে দক্ষিণে কৃষ্ণনগর গ্রামের মাঝে চলে এসেছে। আগে তাঁদের ঘর-বাড়ি নদের যে স্থানে ছিল,সেখানে এখন চর। সেখানে কুষ্টিয়া থেকে কিছু পরিবার এসে বসবাস করছে। তাঁরা দক্ষিণে সরে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন।’

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন,‘বর্তমানে বর্ষার শুরুতে ভাঙ্গন রোধে অস্থায়ী সমীক্ষা কাজ চলমান আছে। আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে জিও ব্যাগ ফেলার এই কাজটি চলবে। এরপর স্থায়ী কাজ করা হবে বরাদ্দের ভিত্তিতে। নদীর এই অংশটুকু অবতল হওয়াতে পানির চাপ বৃদ্ধিতে পলি সরে ভাঙ্গন দেখা দেয়। পূর্বে হয়তো উদ্দোগের অভাবে স্থায়ী ব্যবস্থা হয়নি।
ঢাকা/ইবিটাইমস/এসএস

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

ভাঙন রোধে জোটে শুধু ‘জিও’ ব্যাগ’

আপডেটের সময় ১১:৫৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : যে গ্রামটিতে খাসসহ মোট জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৬শ’ বিঘা। সেই গ্রামটিতে এখন জমির পরিমাণ নেমে এসেছে ২শ’ ৫০ বিঘায়। গ্রামটিতে বসতিও ছিল আনুমানিক ৭শ’ পরিবারের। কিন্তু নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেকেই অন্যত্র বসতি স্থাপন করেছেন, কেউ বসবাস করছেন সরকারি জমিতে। ফলে ওই এলাকায় বর্তমানে বসতির পরিমাণ প্রায় ২শ’।
বড়ুরিয়া নামক গ্রামটিতে একসময় অসংখ্য মানুষের বসবাস থাকলেও গড়াই নদীর ভাঙ্গনে এখন পাল্টেছে সেই চিত্র। অনেকেই হারিয়েছেন সহায় সম্বল, হয়েছেন নি:স্ব, ছেড়েছেন গ্রাম।
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গড়াই নদীর অব্যাহত ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে জনবহুল এই গ্রামটি। এরই মধ্যে দুই তৃতীয়াংশের বেশী চলে গেছে নদী গর্ভে। ভাঙ্গনে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার অংশের জেগে ওঠা চরেও চাষাবাদে যেতে পারেনা এই গ্রামের মানুষ।
তবে বর্ষার শুরুতে ভাঙ্গন রোধে অস্থায়ী ভিত্তিতে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্ষার শুরুতে ভাঙ্গন শুরু হয়। পানি বৃদ্ধিতে ভাঙনও বৃদ্ধি পায় এবং পানি কমে যাওয়ার সময় তা তীব্র আকার ধারন করে।
ভাঙনে সহায়-সম্বলহীনরা বলছেন,নদীর এরকম ভয়াবহ ভাঙ্গন আর কোথাও নেই। কিন্তু ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ এ যাবৎ কেউ নেয়নি। দুর্ভোগ রয়েই গেছে।

জানা যায়, উপজেলায় নদীর বহমান অংশ ২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬ কিলোমিটার ভাঙ্গনপ্রবন হলেও সব থেকে বেশী ভাঙ্গন তীব্রতা বড়ুরিয়া গ্রামের দেড় কিলোমিটার অংশে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, কোথাও বেশী ,কোথাও কম। সেই হিসাবে প্রতি বছর গড়ে ৫ মিটার অর্থাৎ ১৫ ফিট নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে।

বড়ুরিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, ‘নদীর ওপারে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গনেশপুর আদর্শ গ্রাম। আমাদের জমি ভেঙে ওপাশে জেগে ওঠা চরে কুষ্টিয়ার মানুষ যেতে দেয় না। আমাদের চর উদ্ধারেও কেউ ব্যবস্থা নেয় না। ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী উদ্যোগ নিলে এই দুর্ভোগ কমে যেত।’

ইসহাক মন্ডল বলেন, ‘দুই দশকে তাঁদের গ্রামের আনসার আলী,আজাদ হোসেন,তারেক আলী,আবদুল মান্নান,রবিউল ইসলাম,সামছুল আলমসহ অসংখ্য পরিবার গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। একই ভাবে কৃষ্ণনগর গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। কেউ অন্যত্র জমি কিনে ঘর করেছেন। আবার কেউ সব হারিয়ে যাযাবরের মতো বসবাস করছেন। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়া হলে নদীর তীরে এখনও যারা বসবাস করছেন তাদেরও অন্যত্র চলে যেতে হবে।’

কৃষ্ণনগর গ্রামের আবদুর রহিম মণ্ডল বলেন, ‘ভাঙনের কারণে বসতবাড়ির জায়গা পাল্টেছেন ছয়বার। তাঁর আটবিঘা জমি ছিল। পাকা ভিতের ওপর টিনের ঘর ছিল। গরু-ছাগল পালতেন। এখন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। সবকিছু চলে গেছে এই গড়াই নদে।’

একই গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন,‘গড়াই নদ আগে অনেকটা উত্তরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে দক্ষিণে কৃষ্ণনগর গ্রামের মাঝে চলে এসেছে। আগে তাঁদের ঘর-বাড়ি নদের যে স্থানে ছিল,সেখানে এখন চর। সেখানে কুষ্টিয়া থেকে কিছু পরিবার এসে বসবাস করছে। তাঁরা দক্ষিণে সরে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন।’

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন,‘বর্তমানে বর্ষার শুরুতে ভাঙ্গন রোধে অস্থায়ী সমীক্ষা কাজ চলমান আছে। আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে জিও ব্যাগ ফেলার এই কাজটি চলবে। এরপর স্থায়ী কাজ করা হবে বরাদ্দের ভিত্তিতে। নদীর এই অংশটুকু অবতল হওয়াতে পানির চাপ বৃদ্ধিতে পলি সরে ভাঙ্গন দেখা দেয়। পূর্বে হয়তো উদ্দোগের অভাবে স্থায়ী ব্যবস্থা হয়নি।
ঢাকা/ইবিটাইমস/এসএস