শহিদুল ইসলাম জামাল, চরফ্যাশন : ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নে গরু-মহিষ চোর চক্রের সরদার দুই সহোদর মন্নান (৪০) ও মজিদের (২৮) বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গ্রামবাসী।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে উপজেলার ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুরালিয়া সেন্টার বাজারে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
মিছিলটি বাজারের উত্তর মাথা থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ মাথায় গিয়ে শেষ হয়।
অভিযুক্ত মন্নান ও মজিদ একই ওয়ার্ডের মৃত কাদের হাওলাদারের ছেলে।
জানা যায়, মন্নান ও মজিদ নামের দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিমল, শাহেব আলী, আবুল কালাম, সাহাগ ও পারভেজ দীর্ঘদিন ধরে গরু-মহিষ চুরি করে আসছেন। তারা নিজ এলাকার প্রতিটি বাড়ি থেকে গরু-মহিষ চুরি করে অন্যত্র পাচার করে। এছাড়াও এ সংঘবদ্ধ চোরচক্রটি এলাকার বাহিরে বিভিন্ন এলাকায় গরু-মহিষ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে এবং জেল খেটেছে। জেল থেকে বের হয়েও তারা থেমে থাকেন না, পুনরায় চুরির কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েন। সম্প্রতি একই ওয়ার্ড থেকে ১৫ জন কৃষকের ৫০ টি গরু-মহিষ চুরি করে চক্রটি। গত ১৭ মে শনিবার ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৈয়দ আলী ও সাগর নামের দুই ব্যক্তির ২টি গরু নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় জনতা তাদেরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা গরু চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন এবং গরু এনে দেওয়ার কথা বলে ছাড়া পান। তবে চোর চক্রটি গরু না দিয়ে বিভিন্ন তালবানা শুরু করেন এবং স্থানীয় জনতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায়।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার স্থানীয় জনতা চোর চক্রের প্রধান মন্নান ও মজিদ এর বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
এদিকে একই এলাকার বাসিন্দা দেলু সর্দারের ৪ টি, কামাল ফরাজীর ৫টি, ইউনুছ হাওলাদারের ২টি, ইদ্রিস হাওলাদারের ২টি, শাহাজানের ২টি, নুরে আলম হাজীর ৩টি, সাগর চৌকিদারের ১টি, মোশারেফ ফকিরের ১টি, কবির হাওলাদারের ২টি, হাসান সর্দারের মহিষ ৫টি, সেলিমের ৪টি গরু, জসিম সিকদারের ৩টি, জনুফকিরের ৩টি, মাইনুদ্দিন সর্দারের ২টি, আকতারের ১টি, সোরাব হাওলাদারের ১টি ও চর মানিকার চর ফারুকির আমজাদ ফকিরের ৩টি গরু নিয়ে গেছে এই চোর চক্রটি।
মহিষ মালিক মনির হোসেন জানান, দক্ষিণ আইচা থানার চরপাতিলার চরে আমার একটি মহিষের পাল রয়েছে। প্রায় এক মাস পূর্বে নৌকাযোগে নদী পথে আমার পালিত ২টি মহিষ নিয়ে যায় মন্নান ও মজিদ। তারা এলাকায় সংঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন মানুষের গরু ও মহিষ নিয়ে যায়। তাদের অত্যাচারের মানুষ এখন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। তাই তাদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।
গরু মালিক সেলিম জানান, তার চারটি গরু ছিল। সেগুলো লালন-পালন করে পরিবারের ভরণ-পোষণ যোগাতেন। গত ১৬ এপ্রিল রাতের আঁধারে তার গরুর গোয়াল ঘর থেকে ৪ টি গরু নিয়ে যায় মন্নান ও মজিদ সহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। আমি চোর মন্নান ও মজিদের বিচার চাই।
স্থানীয় একাধিক নারী-পুরুষ বলেন, চোর চক্রের প্রধান মন্নান ও তার ভাই মজিদের চুরির করার কারণে রাতে ঘুম হয় না। রাতে ঘরের দরজা আটকিয়ে ঘুমাতে চাইলে ঘুম হয় না। মনে হয় তারা আমার গোয়াল ঘর থেকে গরু নিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রশাসনের কাছে চোরের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
নজরুল নগর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল সরদার ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি ইউনূস জানান, আমরা দেখে এসেছি মন্নান ও মজিদ তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে এলাকা ও এলাকার বাহিরে অনেক গরু-মহিষ চুরি করছেন এবং বহু স্থানে তারা ধরা পড়েছিল। তারা এলাকার গরু-মহিষ চুরি করে পার পেয়ে যায়। এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে তারা গরু-মহিষ চুরি করছেন। অনেক অসহায় পরিবারের আছে যাদের আয় রোজগারের একমাত্র মাধ্যম হলো গরু লালন-পালন। এরকম কিছু অসহায় পরিবারের গরু নিয়ে যাওয়ার ফলে ওইসব পরিবারর অসহায়ত্বে হয়ে পরেন। তাদের এসব চুরির উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে ৫ শতাধিক গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে তাদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। চোর চক্রের প্রধান মন্নান ও মজিদকে আইনের আওয়তার আনার দাবী করেন তিনি।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্নান ও মজিদ জানান, আমাদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসির অভিযোগগুলো সঠিক নয়। আমরা এলাকার বাহিরে রয়েছি। পরে কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন।
দক্ষিণ আইচা থানার ওসি এরশাদুল হক ভূইয়া জানান, শুনছি মঙ্গলবার দুপুরে গ্রামবাসি গরুচোর মন্নান ও মজিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ওই চোর চক্রের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।