লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধিঃ অটো টেম্পু মালিক সমিতির নামে শতাধিক মালিকের জমানো কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন ভোলার লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের চাচা দিদারুল ইসলাম অরুণ পঞ্চায়েত। এমন অভিযোগ করেন লালমোহন পৌর শহরের থানার মোড়স্থ অটো টেম্পু মালিক সমিতির সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৩-৯৪ সালে ২৮টি টেম্পুর মালিক নিয়ে গঠিত হয়েছিল লালমোহন অটো টেম্পু মালিক সমিতি। তখন থেকে প্রায় ৫বছর এ সমিতির সভাপতি ছিলেন ডা: মো: জাহাঙ্গীর আলম, সম্পাদক ছিলেন পৌরসভা ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল জলিল মিয়া।
ডা: মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমার সময়ে মালিক সমিতির কর্মচারী ও অফিস খরচ নির্ণয় করে পরিমাণ মত টাকা নেয়া হয়েছিল। ফলে তখন কোনো মালিকের টাকা জমানো থাকেনি।
পরে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ সমিতির সভাপতি ছিলেন পৌরসভার ততকালীন ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির, সম্পাদক ছিলেন আবদুল জলিল।
আবদুল জলিল মিয়া জানান, ২০০৬সালে বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পরপরই জোরপূর্বক ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অটো টেম্পু মালিক সমিতির স্বঘোষিত সভাপতি হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দিদারুল ইসলাম অরুণ। তখন সমিতিতে শতাধিক মালিকের জমানো নগদ সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা এবং আমার দুটি গাড়ি আটক রেখে ৪লক্ষ টাকা মুক্তিপণ নেয় সে। পরে আমাকে আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়ে প্রায় ৫মাস পরে গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়। অবশেষে দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা গাড়ি কেজির ওজনে বিক্রি করতে বাধ্য হই।
আবদুল জলিল মিয়া আরও বলেন, সভাপতির আসনে বসে বিএনপিপন্থী ও নিরীহ মালিকদের গাড়ি আটক করে এভাবেই অর্থ হাতিয়ে নেন অরুণ পঞ্চায়েত। পাশাপাশি প্রতিটি গাড়ি ভর্তির জন্য ৫০/৬০ হাজার টাকা, নাম পরিবর্তনের নামে ৩০/৪০হাজার টাকা, কাগজপত্র না থাকলে থানা-পুলিশের মাধ্যমে আটক দেখিয়ে ৫০/৬০হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিতেন অরুণ।
লালমোহন অটো টেম্পু মালিক সমিতির সদস্য মো. ওলিউল্লাহ, আবুল কালাম বেপারি, মো. আলমগীর, আবদুর রহমান, নুরুজ্জামান, আলী হোসেনসহ আরও কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান, দিদারুল ইসলাম অরুণ সভাপতির আসনে বসেই পূর্বের ভর্তিকৃত গাড়ীগুলো থেকে নতুন করে ৫/১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। আবার এসব গাড়ীগুলো কেউ ক্রয় করলে নতুনভাবে নতুন ভর্তি ৩০-৫০ হাজার, নাম পরিবর্তন ১৫/২০হাজার টাকা করে নিতেন। কোনো গাড়ীর বডি বড় কিংবা রঙ করলেও টাকা দিতে হতো তাকে। তবে কোনোদিনই এসব টাকার হিসেব চাইতে পারিনি আমরা। কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলে তার ওপর চালানো হতো নির্মম নির্যাতন।
মালিকরা আরও অভিযোগ করে বলেন, অরুণ পঞ্চায়েতের খামখেয়ালির কারণে তাকে বাদ দিতে প্রায় ৭০/৮০জন মালিকের স্বাক্ষরিত অনাস্থাপত্র নিয়ে ততকালীন এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের গেলে চাচার পক্ষ নিয়ে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করেন তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গাড়ীর মালিক ও লালমোহন বাজারের এক ইলেক্ট্রনিকস ব্যবসায়ী জানান, অরুণ পঞ্চায়েত নতুন ঘর করার সময় আমার গাড়ী ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে তার বাসায় যাই। এসময় গাড়ী ভর্তির ৩০হাজার টাকা ও নতুন বাসার জন্য ৫টি ফ্যান দাবি করেন তিনি। পরে গাড়ী চালানোর স্বার্থে তার কথা মেনে নিতে বাধ্য হই।
এছাড়া, দুই উপজেলার ৪টি রুটে প্রতিদিন চলাচল করা ৪০/৫০টি গাড়ি থেকে মালিক সমিতির নামে ১৮০/২৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা উঠানো হতো। গড়ে দৈনিক ১০হাজার টাকা হলে মাসে ৩ লক্ষ টাকা এবং বছরে ৩৬ লক্ষ টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে ৫কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা দাঁড়ায়। তবে এসব টাকার হিসেব আজও কোনো মালিক পায়নি।
এদিকে দিদারুল ইসলাম অরুণ পঞ্চায়েতের সময়ে অটো টেম্পু মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো: জামাল উদ্দিন। তাঁর বিরুদ্ধেও সমিতির টাকা লোপাটের অভিযোগ অটো টেম্পু মালিকদের।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জামাল উদ্দিন বলেন, ওই স্টান্ডের ইজারা বাবদ যে টাকা আসতো, শুধু সেটাই আমাকে দেয়া হতো। আর বাকি সব টাকা দিদারুল ইসলাম অরুণ পঞ্চায়েত নিয়ে যেতেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও অটো টেম্পু মালিক সমিতির সভাপতি দিদারুল ইসলাম অরুণ পঞ্চায়েতের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
লালমোহন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মাহবুব উল আলম বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাইনি।
সালাম সেনটু/ইবিটাইমস