ভিয়েনা ১১:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার অথচ পরিচয় দেন গাইনি বিশেষজ্ঞ

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৯:৫০:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ১৬ সময় দেখুন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ গাইনি বিভাগের চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত না হয়েও একের পর এক সিজার অপারেশন চালিয়ে আসছেন সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার, পরিচয় দেন গাইনি বিশেষজ্ঞ। এতে বাড়ছে আরো জটিল রোগ, মারা যাচ্ছে রোগীও। শহর-গ্রামাঞ্চলের অবৈধ ও নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-প্রাইভেট হাসপাতালে এমন বানিজ্যিক চিকিৎসা দিয়ে আসছেন খোদ সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার। এমন দৃশ্য ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

শহরের হাসপাতাল গেইটের সামনে শৈলকুপা প্রাইভেট হাসপাতাল নামের এক নিবন্ধনহীন ক্লিনিকে গত সপ্তাহে সুখজান নামের এক প্রসূতির মৃত্যু ঘটে সিজার অপারেশনের কয়েকদিনের মধ্যে। শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার(সার্জারি) সোহেলী ইসলাম ওই ক্লিনিকে তার অপারেশন করেন।

অভিযোগ ওঠেছে, পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়া ও গাইনি প্রশিক্ষিত না হয়েও এমন অপারেশন করায় রোগীর মৃত্যু ঘটে। তার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুবই কম ছিল। সিজার অপারেশনের পর স্বজনদের জানানো হয় রোগী ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল।

গত মাসের ৩১ জানুয়ারী শৈলকুপার কুমড়েদাহ গ্রামের দরিদ্র শাহিন হোসেনের স্ত্রী সুখজান খাতুনের সিজার অপারেশন করা হয়েছিল। শাহিন জানান, ১সপ্তাহের মধ্যে রোগীর পা ফোলা সহ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং ১৫ ফেব্রæয়ারী মৃত্যু ঘটে। রোগী মরার পরে ক্লিনিক আর ডাক্তারদের দৌড়ঝাপ করতে দেখা গেছে, বিষয়টির মিমাংসার জন্যে। মেডিকেল অফিসার সোহেলী ইসলাম অবৈধ, নিবন্ধনহীন ক্লিনিকগুলোতে হরদম বানিজ্যিক সিজার অপারেশন চালিয়ে আসছেন। তাদের বিরুদ্ধে আরোও অভিযোগ হাসপাতালে এসেই বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন ক্লিনিকে।

ডাক্তার, নার্স, জনবল সহ পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকা ক্লিনিকটির মালিক তোজাম হোসেন জানান, তার ক্লিনিকের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে তবে এখনো নিবন্ধন পাওয়া যায়নি।

ডাক্তার সোহেলী ইসলাম ২০২২ সালের ফেব্রয়ারী মাসে শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসাবে যোগদান করেন । অবশ্য ডাক্তার সোহেলী ইসলাম বলছেন, তিনি গাইনী বিশেষজ্ঞ না হলেও এ ব্যাপারে তার একাধিক প্রশিক্ষণ রয়েছে । তিনি বলেন যে রোগী মারা গেছে বেশ কয়েকদিন পরে, তার শারিরীক পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হয়েছিল, অপারেশনে ভ’ল ছিল না। নিবন্ধনহীন ক্লিনিকে অপারেশনের ব্যাপারে জানান, অনেকেই অপারেশন করে আসছে।

প্রশ্ন উঠেছে, সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকগন এভাবে অবৈধ-নিবন্ধনহীন ক্লিনিকগুলোতে সিজার অপারেশন করতে পারেন কি না। আর গাইনি বিশেষজ্ঞ না হয়েও কিভাবে ক্লিনিকগুলোতে ডাক্তাররা নিজেদের ‘গাইনি বিশেষজ্ঞ’ হিসাবে পরিচয় দেন রোগীদের কাছে ।

গাইনিতে প্রশিক্ষণ ও বিশেষজ্ঞ না হয়েও সিজার করার ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহফুজা খাতুন বলেছেন, গাইনির প্রশিক্ষণ ছাড়া সিজারিয়ান অপারেশন বৈধ নয় তাও আবার নিবন্ধনহীন ক্লিনিক, প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করার কোন সুযোগ নেই, এটা আইনবহির্ভূত। ডাক্তার সোহেলী ইসলাম তাদের হাসপাতালের একজন মেডিকেল অফিসার।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রারাণী জানান, কোন অবস্থাতেই হাসপাতালের ডাক্তার নিবন্ধনহীন ক্লিনিক বা প্রাইভেট হাসপাতালে সিজার অপারেশন করতে পারেন না, গাইনি ডাক্তার না হয়ে এমন পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালানো অপরাধ, তিনি বলেন বিষয়টির তদন্ত করা হবে।

শেখ ইমন/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার অথচ পরিচয় দেন গাইনি বিশেষজ্ঞ

আপডেটের সময় ০৯:৫০:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ গাইনি বিভাগের চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত না হয়েও একের পর এক সিজার অপারেশন চালিয়ে আসছেন সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার, পরিচয় দেন গাইনি বিশেষজ্ঞ। এতে বাড়ছে আরো জটিল রোগ, মারা যাচ্ছে রোগীও। শহর-গ্রামাঞ্চলের অবৈধ ও নিবন্ধনহীন ক্লিনিক-প্রাইভেট হাসপাতালে এমন বানিজ্যিক চিকিৎসা দিয়ে আসছেন খোদ সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার। এমন দৃশ্য ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

শহরের হাসপাতাল গেইটের সামনে শৈলকুপা প্রাইভেট হাসপাতাল নামের এক নিবন্ধনহীন ক্লিনিকে গত সপ্তাহে সুখজান নামের এক প্রসূতির মৃত্যু ঘটে সিজার অপারেশনের কয়েকদিনের মধ্যে। শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার(সার্জারি) সোহেলী ইসলাম ওই ক্লিনিকে তার অপারেশন করেন।

অভিযোগ ওঠেছে, পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরিক্ষা ছাড়া ও গাইনি প্রশিক্ষিত না হয়েও এমন অপারেশন করায় রোগীর মৃত্যু ঘটে। তার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুবই কম ছিল। সিজার অপারেশনের পর স্বজনদের জানানো হয় রোগী ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল।

গত মাসের ৩১ জানুয়ারী শৈলকুপার কুমড়েদাহ গ্রামের দরিদ্র শাহিন হোসেনের স্ত্রী সুখজান খাতুনের সিজার অপারেশন করা হয়েছিল। শাহিন জানান, ১সপ্তাহের মধ্যে রোগীর পা ফোলা সহ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং ১৫ ফেব্রæয়ারী মৃত্যু ঘটে। রোগী মরার পরে ক্লিনিক আর ডাক্তারদের দৌড়ঝাপ করতে দেখা গেছে, বিষয়টির মিমাংসার জন্যে। মেডিকেল অফিসার সোহেলী ইসলাম অবৈধ, নিবন্ধনহীন ক্লিনিকগুলোতে হরদম বানিজ্যিক সিজার অপারেশন চালিয়ে আসছেন। তাদের বিরুদ্ধে আরোও অভিযোগ হাসপাতালে এসেই বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন ক্লিনিকে।

ডাক্তার, নার্স, জনবল সহ পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকা ক্লিনিকটির মালিক তোজাম হোসেন জানান, তার ক্লিনিকের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে তবে এখনো নিবন্ধন পাওয়া যায়নি।

ডাক্তার সোহেলী ইসলাম ২০২২ সালের ফেব্রয়ারী মাসে শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসাবে যোগদান করেন । অবশ্য ডাক্তার সোহেলী ইসলাম বলছেন, তিনি গাইনী বিশেষজ্ঞ না হলেও এ ব্যাপারে তার একাধিক প্রশিক্ষণ রয়েছে । তিনি বলেন যে রোগী মারা গেছে বেশ কয়েকদিন পরে, তার শারিরীক পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হয়েছিল, অপারেশনে ভ’ল ছিল না। নিবন্ধনহীন ক্লিনিকে অপারেশনের ব্যাপারে জানান, অনেকেই অপারেশন করে আসছে।

প্রশ্ন উঠেছে, সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকগন এভাবে অবৈধ-নিবন্ধনহীন ক্লিনিকগুলোতে সিজার অপারেশন করতে পারেন কি না। আর গাইনি বিশেষজ্ঞ না হয়েও কিভাবে ক্লিনিকগুলোতে ডাক্তাররা নিজেদের ‘গাইনি বিশেষজ্ঞ’ হিসাবে পরিচয় দেন রোগীদের কাছে ।

গাইনিতে প্রশিক্ষণ ও বিশেষজ্ঞ না হয়েও সিজার করার ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহফুজা খাতুন বলেছেন, গাইনির প্রশিক্ষণ ছাড়া সিজারিয়ান অপারেশন বৈধ নয় তাও আবার নিবন্ধনহীন ক্লিনিক, প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করার কোন সুযোগ নেই, এটা আইনবহির্ভূত। ডাক্তার সোহেলী ইসলাম তাদের হাসপাতালের একজন মেডিকেল অফিসার।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রারাণী জানান, কোন অবস্থাতেই হাসপাতালের ডাক্তার নিবন্ধনহীন ক্লিনিক বা প্রাইভেট হাসপাতালে সিজার অপারেশন করতে পারেন না, গাইনি ডাক্তার না হয়ে এমন পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালানো অপরাধ, তিনি বলেন বিষয়টির তদন্ত করা হবে।

শেখ ইমন/ইবিটাইমস