রুয়ান্ডা বিল দ্রুত পাসে হাউস অব লর্ডসের প্রতি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী সুনাকের আহ্বান

ইউরোপ ডেস্কঃ বিলটি দ্রুত অনুমোদন দেয়ার উদ্যোগ নিতে উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের অনির্বাচিত সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ৷

উল্লেখ্য যে,ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা যুক্তরাজ্যে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আফ্রিকান দেশ রুয়ান্ডা পাঠানোর ‘বিতর্কিত’ বিলটি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনসে পাস হওয়ার পর উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের অনির্বাচিত সদস্যদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে৷

গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) হাউস অব লর্ডসের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘’উচ্চকক্ষ যদি এ বিষয়ে দেরি করে তাহলে হাউস অব কমনসের সদস্যের এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতি সুবিচার হবে না৷”

ডাউনিং স্ট্রিটের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঋষি সুনাক বলেছেন, ‘‘এখন আমাদের সামনে শুধু একটিই প্রশ্ন৷’’ আর সেটি হলো, ‘‘হাউস অব লর্ডসে বিরোধী দল মনোনীত সদস্যেরা কি এই বিলের বিরোধিতা করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছাপূরণে বাধা দেবে? নাকি তারা সঠিক সিদ্ধান্তটি নেবেন?’’

পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে সুনাকের রক্ষণশীল সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়েই এটি গঠিত৷ এখন হাউস অব লর্ডস চাইলে বিলটি অনুমোদন দিতে দেরিও করতে পারে অথবা সেখানে সংশোধনীও আনতে পারে৷ কিন্তু নিম্নকক্ষের সিদ্ধান্তকে একেবারে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগও তাদের নেই৷

ইতিমধ্যে, হাউস অব লর্ডসের অনেক সদস্যরাই রুয়ান্ডা পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ তাদের একজন অ্যালেক্স কার্লাইল এটিকে ‘সর্বগ্রাসীবাদের পথে এক ধাপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ৷ হাউস অব লর্ডস যদি বিলটি অনুমোদন দিতে দেরি করে তাহলে সুনাকের পরিকল্পনা আরো এক দফা ভেস্তে যেতে পারে৷ কারণ, যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের আগে অর্থাৎ আগামী বসন্তে আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর ফ্লাইট চালু করতে চান রক্ষণশীল সুনাক ৷

জনমত জরিপগুলোতে বিরোধী দল লেবার পার্টির চেয়ে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন রক্ষণশীলেরা৷ কিন্তু নির্বাচনে জিততে বিতর্কিত এবং ব্যয়বহুল অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নের পথে হাঁটছেন সরকারপ্রধান সুনাক ৷

আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর প্রকল্পটি সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দিলেও দমে যাননি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ আশ্রয়প্রার্থীদের আফ্রিকার দেশটিতে পাঠাতে নতুন বিল ‘দ্য সেফটি অব রুয়ান্ডা বিল’ নিয়ে সংসদে গেছেন তিনি৷ নিজ দলের রক্ষণশীল আইনপ্রণেতাদেরও বাধার মুখেও পড়েও শেষ পর্যন্ত হাউস অব কমনসে পাস হয়েছে এটি ৷

২০২৩ সালে ২৯ হাজারেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থী ছোট নৌকা নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন৷ অবশ্য, ২০২২ সালের তুলনায় সংখ্যাটি কিছুটা কমেছে৷ সেই বছর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অন্তত ৪২ হাজার আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন ৷

১৭ জানুয়ারি এই ভয়ঙ্কর সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে অন্তত ৩৫৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী দেশটিতে পৌঁছেছেন৷ তার আগের সপ্তাহে তীব্র ঠান্ডার মধ্যে রাতের আঁধারে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে ফ্রান্স উপকূলে নৌকাডুবে পাঁচ জন মারা গেছেন ৷

সুনাক বলেন, ‘‘রুয়ান্ডায় ফ্লাইট চালু করতে আমি প্রতিদিন লড়াই করে যাচ্ছি৷’’তিনি আরো বলেন, ‘‘এটি এখন জাতীয় অগ্রাধিকার৷’’ সুনাকের এমন নীতি নিয়ে আপত্তি করে আসছে বিরোধী রাজনীতিবিদেরা৷ এই পরিকল্পনাকে ‘গিমিক’ বা ‘চটকদারি’ সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্ট্র্যামার৷ বলেছেন, ক্ষমতায় এলে তিনি সেটি পাল্টে ফেলবেন ৷

কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যপন্থিরাও এটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ কারণ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, রুয়ান্ডা পরিকল্পনা ‘আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷’ রক্ষণশীল দলের ডানপন্থি অনেকেই মনে করেন বিলটি নিয়ে খুব বেশি এগুনো যাবে না এবং আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ৷

গত বুধবার ভোটে কিছুটা বিরোধিতার মুখে পড়েও জয় পেয়েছেন সুনাক৷ এরপরও অবশ্য সুনাক বলেছেন, তার দল ‘‘ঐক্যবদ্ধ’’ ছিল৷ ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠাতে যুক্তরাজ্য সরকারের করা প্রথম চুক্তিটি দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে খারিজ হয়ে যায়৷ আদালতের রায়ের পর বিকল্প সিদ্ধান্ত হিসাবে আশ্রয়প্রার্থীদের পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠাতে দেশটির সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করেছে যুক্তরাজ্য সরকার৷

২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে নতুন চুক্তিতে সই করেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি ও রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিনসেন্ট বিরুটা৷ এর মাধ্যমে আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর নীতি বাস্তবায়নে নতুন করে মাঠে নামলো সুনাক সরকার৷ নতুন চুক্তিতে রুয়ান্ডা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, “দুই দেশের অংশীদারত্ব কাঠামোর মধ্যে স্থানান্তরিত আশ্রয়প্রার্থীদের এমন কোনো দেশে ফেরত পাঠানো হবে না, যেখানে তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে৷’’

তথ্যসূত্র: এপি, রয়টার্স ও ইনফোমাইগ্রেন্টস

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »