ভিয়েনা ০৩:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানী মুদ্রা রুপির রেকর্ড অমূল্যায়ন

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৫:০১:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৩
  • ১০ সময় দেখুন

পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশটির মুদ্রার মূল্য ডলারের বিপরীতে ৩০০ রুপির বেশী নেমে এসেছে

ইবিটাইমস ডেস্কঃ দেশটির মুদ্রার এই রেকর্ড পতনের ফলে ভোক্তারা ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হওয়ায় দৈনন্দিন পণ্যগুলির মূল্য আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রুপির মূল্য দুই দিনের রেকর্ড পতনের পরে বৃহস্পতিবার সর্বসাম্প্রতিক এই পতন ঘটে। গত বছর পাকিস্তানি রুপি আমেরিকান ডলারের বিপরীতে তার মূল্যের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি হারিয়েছে এমন এক সময়ে যখন পাকিস্তান তার ক্রমবর্ধমান ঋণ সংকট নিয়ে লড়ে যাচ্ছে।

দেশটির অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানে ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সরকার গত বছর আরোপিত আমদানি বিধিনিষেধ জুনে তুলে নেওয়ার ফলে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেলে রুপির অবমূল্যায়ন ঘটে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৩০০ কোটি ডলারের বেইল আউট বা ঋণ মওকুফ পাওয়ার জন্য ইসলামাবাদকে আমদানি উন্মুক্ত করার শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। বেশ কয়েক দফা কঠোর আলোচনার পরে জুলাই মাসে এই চুক্তিটি সম্পাদন করা হয় , আর সেই সময় ঋণদাতা ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবি করেছিল।

তবে মুদ্রাস্ফীতি ২৯ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছানোর ফলে সাধারণ পাকিস্তানিরা জীবনধারণের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে। আইএমএফ তহবিল সুরক্ষিত করার জন্যভর্তুকি হ্রাসের ফলে জ্বালানির দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং চাহিদা হ্রাস সত্ত্বেও বিদ্যুৎ-এর দাম আরও বেড়েছে।

এদিকে দেশটির ইংরেজী দৈনিক ডন জানিয়েছে, পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে মাত্র ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে এটি তাদের সর্বনিম্ন রিজার্ভ। সম্প্রতি বিপুল বৈদেশিক ঋণের কিছু কিস্তি পরিশোধের পর পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য থেকে অবশিষ্ট রিজার্ভের পরিমাণ জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান (এসবিপি) জানিয়েছে, দেশটির বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট ৫৮০ কোটি ডলার রয়েছে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ১০ কোটি ডলার রয়েছে পাকিস্তানে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) আটকে থাকা ১১৭ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছ থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গিয়েছিলেন। এসময় উপসাগরীয় দেশটি ১০০ কোটি ডলার অতিরিক্ত ঋণের পাশাপাশি ২০০ কোটি ডলার ঋণছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এছাড়া, চলতি মাসে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ অসিম মুনির। তাদের বৈঠকের একদিন পরেই পাকিস্তানে বিনিয়োগ-সহায়তা বাড়ানোর নির্দেশ দেন সৌদি যুবরাজ। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা আর্থিক দুর্দশা এবং সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি লাঘবে এ পদক্ষেপ নিচ্ছে পুরোনো মিত্র সৌদি আরব।

পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট চলছে কয়েক বছর ধরেই। তার ওপর গত বছর ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল দেশটি। এতে প্লাবিত হয় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা, প্রাণ হারান ১ হাজার ৭০০’র বেশি মানুষ, ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩০ লাখের বেশি। ভয়ংকর এ বন্যায় আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার কোটি ডলারেরও বেশি।

গত বছরের আগস্টে পাকিস্তানের জন্য ১১৭ কোটি ডলার ঋণের একটি কিস্তি ছেড়েছিল আইএমএফ। কিন্তু জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ট্যাক্সের আওতা বাড়ানোসহ সংস্থাটির দেওয়া বিভিন্ন শর্তে পাকিস্তান এখনো রাজি না হওয়ায় ঋণের বাকি কিস্তিগুলো অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের সহযোগিতায় জেনেভায় একটি আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলন আয়োজন করেছিল পাকিস্তান। সেখানে দেশটিকে আগামী তিন বছরে এক হাজার কোটি ডলারের বেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বৈশ্বিক সম্প্রদায়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের সাময়িক সমাধানে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিবর্তে পাকিস্তান সরকারকে স্থায়ী সংস্কারে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস 

জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

পাকিস্তানী মুদ্রা রুপির রেকর্ড অমূল্যায়ন

আপডেটের সময় ০৫:০১:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৩

পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশটির মুদ্রার মূল্য ডলারের বিপরীতে ৩০০ রুপির বেশী নেমে এসেছে

ইবিটাইমস ডেস্কঃ দেশটির মুদ্রার এই রেকর্ড পতনের ফলে ভোক্তারা ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হওয়ায় দৈনন্দিন পণ্যগুলির মূল্য আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রুপির মূল্য দুই দিনের রেকর্ড পতনের পরে বৃহস্পতিবার সর্বসাম্প্রতিক এই পতন ঘটে। গত বছর পাকিস্তানি রুপি আমেরিকান ডলারের বিপরীতে তার মূল্যের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি হারিয়েছে এমন এক সময়ে যখন পাকিস্তান তার ক্রমবর্ধমান ঋণ সংকট নিয়ে লড়ে যাচ্ছে।

দেশটির অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানে ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সরকার গত বছর আরোপিত আমদানি বিধিনিষেধ জুনে তুলে নেওয়ার ফলে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেলে রুপির অবমূল্যায়ন ঘটে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৩০০ কোটি ডলারের বেইল আউট বা ঋণ মওকুফ পাওয়ার জন্য ইসলামাবাদকে আমদানি উন্মুক্ত করার শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। বেশ কয়েক দফা কঠোর আলোচনার পরে জুলাই মাসে এই চুক্তিটি সম্পাদন করা হয় , আর সেই সময় ঋণদাতা ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবি করেছিল।

তবে মুদ্রাস্ফীতি ২৯ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছানোর ফলে সাধারণ পাকিস্তানিরা জীবনধারণের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে। আইএমএফ তহবিল সুরক্ষিত করার জন্যভর্তুকি হ্রাসের ফলে জ্বালানির দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং চাহিদা হ্রাস সত্ত্বেও বিদ্যুৎ-এর দাম আরও বেড়েছে।

এদিকে দেশটির ইংরেজী দৈনিক ডন জানিয়েছে, পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে মাত্র ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে এটি তাদের সর্বনিম্ন রিজার্ভ। সম্প্রতি বিপুল বৈদেশিক ঋণের কিছু কিস্তি পরিশোধের পর পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য থেকে অবশিষ্ট রিজার্ভের পরিমাণ জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান (এসবিপি) জানিয়েছে, দেশটির বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট ৫৮০ কোটি ডলার রয়েছে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ১০ কোটি ডলার রয়েছে পাকিস্তানে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) আটকে থাকা ১১৭ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছ থেকেও তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গিয়েছিলেন। এসময় উপসাগরীয় দেশটি ১০০ কোটি ডলার অতিরিক্ত ঋণের পাশাপাশি ২০০ কোটি ডলার ঋণছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এছাড়া, চলতি মাসে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ অসিম মুনির। তাদের বৈঠকের একদিন পরেই পাকিস্তানে বিনিয়োগ-সহায়তা বাড়ানোর নির্দেশ দেন সৌদি যুবরাজ। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা আর্থিক দুর্দশা এবং সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি লাঘবে এ পদক্ষেপ নিচ্ছে পুরোনো মিত্র সৌদি আরব।

পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট চলছে কয়েক বছর ধরেই। তার ওপর গত বছর ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিল দেশটি। এতে প্লাবিত হয় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা, প্রাণ হারান ১ হাজার ৭০০’র বেশি মানুষ, ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩০ লাখের বেশি। ভয়ংকর এ বন্যায় আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার কোটি ডলারেরও বেশি।

গত বছরের আগস্টে পাকিস্তানের জন্য ১১৭ কোটি ডলার ঋণের একটি কিস্তি ছেড়েছিল আইএমএফ। কিন্তু জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ট্যাক্সের আওতা বাড়ানোসহ সংস্থাটির দেওয়া বিভিন্ন শর্তে পাকিস্তান এখনো রাজি না হওয়ায় ঋণের বাকি কিস্তিগুলো অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের সহযোগিতায় জেনেভায় একটি আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলন আয়োজন করেছিল পাকিস্তান। সেখানে দেশটিকে আগামী তিন বছরে এক হাজার কোটি ডলারের বেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বৈশ্বিক সম্প্রদায়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের সাময়িক সমাধানে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিবর্তে পাকিস্তান সরকারকে স্থায়ী সংস্কারে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস