বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এত উতলা কেন, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা প্রতিনিধি: বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বিদেশিদের পছন্দ নয়, এত উন্নয়ন তারা নিতে পারছে না বলেই আজ মানবাধিকার-নির্বাচন নিয়ে আমাদের সবক দিতে আসছে। এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হত্যায় উদ্বেগ দেখিনি, খালেদা জিয়ার ভোট চুরিতে উদ্বেগ দেখিনি; আর এখন নির্বাচন নিয়ে তারা খুব উতলা হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত আওয়ামী লীগের স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশ খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে, তারা যখন আমাদের কাছে আসে মানবাধিকারের কথা বলে, তারা নির্বাচনের কথা বল, স্বচ্ছতার কথা বলে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে খুব উতলা হয়ে পড়েছে; তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, ২০০১ সালের নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে অত্যাচার কারা করল? কত মানুষকে খুন করেছে? হাত কেটে, চোখ তুলে নিয়েছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, পুড়িয়ে ফেলেছে, তখন তাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? সেই নির্বাচনে আমাদের হারার কথা ছিল না, আমাদেরকে জোর করে হারানো হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ তারা মানবাধিকার-নির্বাচনের সবক নিয়ে আসছে; আমাদের কথা শোনাচ্ছে। এরশাদ ৪৮ ঘণ্টা ভোটের ফলাফল স্থগিত করেছিল; তখন তো তাদের উদ্বেগ দেখিনি। ’৯৬ সালে খালেদা জিয়ার ভুয়া ভোটার নিয়েও তো তাদের কোনো উদ্বেগ দেখিনি। আর এখন নির্বাচন নিয়ে তারা খুব উতলা হয়ে উঠল।’ ‘কারণ হলো, এই বিএনপি তাদের চোখের মণি। শেখ হাসিনা বলেন, এই বিএনপি মানুষ খুন করেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এ দেশে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাল, তাদের সঙ্গে বসতে হবে কেন? আমার মনে হয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা তাদের পছন্দ নয়। এদের উদ্দেশ্য নির্বাচন বা গণতন্ত্র নয়, এরা উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমেরিকার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে নির্বাচন নয়, তাদের উদ্দেশ্য অন্যকিছু। গণতন্ত্রের নাম দিয়ে, নির্বাচনের নাম দিয়ে, নানান নাম দিয়ে আমাদের দেশে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়, যাতে করে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগরের জায়গাটা তারা ব্যবহার করতে পারে। এটা ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা এবং দেশগুলোকে ধ্বংস করা, এটাই হচ্ছে কারো কারো উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য নিয়েই তাদের এত তালবাহানা। এই এলাকাটাকে নিয়ে নানানভাবে খেলার চক্রান্ত চলছে। যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। আর তা হলে এই অঞ্চল হয়ে উঠবে অস্থিতিশীল।

শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থার দিক দিয়ে বাংলাদেশের একদিকে ভারত মহাসাগর অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগর। এদিকে আমাদের বে অব বেঙ্গলের গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রাচীন যুগ থেকে এ জায়গাতে সকল ব্যবসাবাণিজ্য চলে আসছে। ভারত মহাসাগরের যতগুলো দেশ আছে, কারো সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব নেই। সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক একটা যোগাযোগ পথ। এই জলপথে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে নির্বিঘ্নে পণ্য পরিবহন হয়।

সরকার প্রধান আরও বলেন, আজকে তাদের কাছ থেকে মানবাধিকারের কথা আমাদের শুনতে হয়। আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? যেখানে আমার মা-বাবার হত্যার বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করার অধিকার ছিল না। ১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় জীবনে কত বড় একটা দুর্ভাগ্যের ক্ষত চিহ্ন রেখে গেছে; যে মুক্তিযুদ্ধের জন্য লাখো মানুষ জীবন দিয়েছে, সেই মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত আদর্শ, সমস্ত চেতনা, সবকিছু পরিবর্তন করে ফেলেছিল তারা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজ আমরা গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন মনে হয় তাদের পছন্দ না। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাটাই পছন্দ না। আজকের ডেমোক্রেসির কথা বলে, ডেমোক্রেসি কী? আমি আমেরিকা যখন গিয়েছিলাম, তখন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমি একটা লেখা দেখে এসেছি, যেখানে লেখা, গর্ভমেন্ট অব দ্য পিপল বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। আমি একটা দেশ থেকে এসেছি, যেখানে একটা গর্ভমেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য আর্মি। আপনারা তাদের সাপোর্ট দেন কীভাবে? আপনাদের গণতন্ত্র কি আটলান্টিকের পার পর্যন্ত থাকে? আটলান্টিক পার হলেই আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি বদলে যায়? একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের দেশে এত নেতাকর্মীদের হত্যা করল, শুধু একবার নয়; বারবার আমাদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। আজকে তাদেরকেই ক্ষমতা বসাতে হবে?

স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ।

ঢাকা/ইবিটাইমস/এনএল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »