বিরোধী দলের নেতাদের ফোন হ্যাক করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বাংলাদেশ ডেস্কঃ শনিবার (৮ জুলাই) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, নিজের পকেটের মোবাইল ফোনই এখন বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। তিনি বলেন, ইসরায়েলি প্রযুক্তি পেগাসাস ব্যবহার করে সরকারবিরোধী দলের সব নেতাদের ফোন হ্যাক করা হচ্ছে। বিরোধী দলকে দমনের জন্য এবং বিরোধী মতকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে তারা এটা করছে। এটা কোনও গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খবর পাচ্ছি সরকারবিরোধী দলকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া জন্য আবার পুরনো চক্রান্তে মেতেছে। তারা আবারও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়, পুরনো যেসব মামলা রয়েছে; সেগুলো ২ মাসের মধ্যে চার্জশিট দিয়ে শেষ করতে হবে। এছাড়াও আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিচারকদের বলা হচ্ছে, ২ মাসের মধ্যে সব রায় দিয়ে দিতে।
তিনি আরও বলেন, তাদের পরিষ্কার লক্ষ্য; তারা আবারও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে পুরোপুরি বিরাজনীতিকরণ করবে। নির্বাচন করবে বিরোধী দল ছাড়াই এবং বিরোধী দলের নেতারা যেন কেউ নির্বাচন করতে না পারে। এ রকম একটি ব্যবস্থায় কি বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে যেতে পারে? তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে না। আমরা তো বাংলাদেশ কাউকে লিজ দিয়ে দেইনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের কাজ হলো কীভাবে বিরোধী দলকে আটকে রাখা যায়, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে বেআইনি ঘোষণা করা যায়; কীভাবে দেশে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করা যায় যাতে করে বিরোধী দল নির্বাচনে না আসতে পারে। তবে, এবার জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
সাংবিধানিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন আওয়ামী লীগের চেহারা বদলে যাচ্ছে। যার ভালো ঘর ছিল না তার এখন ৫ তলা বাড়িতে থাকছে। যারা সাইকেল চালাতে পারতো না, তারা এখন দামি দামি গাড়িতে চড়ছে। তাদের ছেলে একটা, মেয়ে আরেকটি গাড়ি চালায়।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকারপ্রধান সবসময় একটি কথা বলছেন যে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আমি বাতিল করিনি’। আদালত বাতিল করেছেন। আদালতের রায়কে অস্বীকার করা কখনও সম্ভব নয়। আইনের শাসন মানতে আদালতের রায় মেনে চলতে হবে। কিন্তু রায় পর্যবেক্ষণ অংশে বলা হয়েছে, সংসদ মনে করলে পরবর্তী ২ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আসতে পারে।
তবে বিচার বিভাগকে জড়িত করা যাবে না। প্রকৃত ঘটনা হলো, প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ১০ মে একটি সংক্ষিপ্ত আদেশে ভবিষ্যতের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। কিন্তু ডকট্রিন অব নেসেসিটি ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন। এসব বিবেচনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকরা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের অনুমতি দেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৪টি নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ওঠেনি। জনগণ মেনে নিয়েছে। ২০০৮ সালে কারচুপির মধ্য দিয়ে যখন আওয়ামী লীগ সরকারে এলো, ২০১৪-এর নির্বাচনে আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো হলো। দেখা গেল ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা লক্ষাধিক ভোটে জয় লাভ করেছে। তারা নিশ্চিত হয়ে গেল, যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয় তাহলে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
বিচারপতি খায়রুল হক ভিন্ন একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এটা নিয়ে অ্যামিকাস কিউরি বলেছিলেন- ৯ জনের মধ্যে ১ জন বাদ দিয়ে সবাই কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে সংসদে একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে ১০৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির মতামত নেওয়া হয়েছিল। তারা সবাই বলেছেন, বাংলাদেশের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখা উচিত।
তথ্যসূত্র: বিভিন্ন বাংলা সংবাদ মাধ্যম
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস