অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় ইতালির রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির সক্ষমতা নিয়ে ফরাসি মন্ত্রী প্রশ্ন তোলায় নতুন করে বিবাদে জড়িয়েছে দেশ দুইটি
ইউরোপ ডেস্কঃ ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত অনলাইন পোর্টাল ইনফোমাইগ্র্যান্টস জানায়,প্যারিসকে কড়া জবাব দিতেই তড়িঘড়ি করে নিজের পূর্ব নির্ধারিত সফর বাতিল করেন ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি৷ চলমান সংকট নিরসনে ফ্রান্সকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে বলেও হুংকার দিয়েছেন তিনি৷
গত বৃহস্পতিবার (৪ মে) প্যারিসের একটি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাৎকার ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা বলেন,ইতালির অভিবাসন সমস্যা সমাধানে সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির৷ জেরাল্ড দারমানার এই বক্তব্যকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে বৃহস্পতিবার নিন্দা জানান ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি। সেই সঙ্গে নিজের প্যারিসে সফরও বাতিল করেন তিনি৷ তাজানি বলেন, “ইউরোপের মৌলিক চ্যালেঞ্জগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে, এমন মনোভাব প্রকাশ করা উচিত নয়।”
রোমের কড়া প্রতিবাদের পর চলমান উত্তেজনা প্রশমনে প্যারিস জানিয়েছে, “আমরা আশা করছি, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আমাদের শীঘ্রই
বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।এই ইস্যুতে ইতালীয় ভাষায় টুইট করেছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাথেরিন কোলোনা৷ সেখানে তিনি লিখেছেন, “আমি ফোনে আমার ইতালীয় সহকর্মী আন্তোনিও তাজানির সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তাকে বলেছি ইতালি এবং ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।”
অপরদিকে, ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, “ক্রমবর্ধমান অভিবাসন প্রবাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইতালির সঙ্গে দ্রুত কাজ শুরু করতে চায় ফ্রান্স সরকার।” তবে ইইউর দুই প্রতিবেশীর উত্তেজনা প্রশমনে প্যারিসের নানা চেষ্টার পরেও শুক্রবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে আন্তোনিও তাজানি বলেছেন, নৌকায় আসা অভিবাসন ও অন্যান্য বিষয়ে অবমাননাকর মন্তব্য নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের অবসান করতে ফরাসি সরকারকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে।
এদিকে ইতালীয় দৈনিক কুরিয়েরে দেলা সেরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী বলেন, “জেরাল্ড দারমানার মন্তব্য পিঠে ছুরিকাঘাতের মত। তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সাহস করতে পারেন না। যদি কেউ অকারণে আপত্তিকর মন্তব্য করে, তারা অন্তত ক্ষমা চাইতে পারে। এ বক্তব্যে সব ইতালীয়দের পাশাপাশি সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকেও ক্ষুব্ধ করেছেন ফরাসি মন্ত্রী।”
জেরাল্ড দারমানা ফরাসি রেডিও আরএমসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে, জর্জা মেলোনিকে ফ্রান্সের মধ্যপন্থি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মারিন লো পেনের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। দারমানা আরও বলেছিলেন, “কট্টর ডানপন্থিদের একটি মিল রয়েছে। সেটি হচ্ছে তারা সবসময় মিথ্যা কথা বলে।”
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি ফরাসি সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসন নিয়ে ইতালীয় মন্ত্রিসভার সঙ্গে বারবার বিরোধে লিপ্ত হয়েছে। সর্বশেষ গত নভেম্বরে ২৩০ অভিবাসীকে নিয়ে আসা মানবিক উদ্ধার জাহাজকে উপকূলে ভিড়তে অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল ইতালির অতি ডানপন্থি নতুন সরকার৷ সেই সময় রোমের আচরণকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে ওশান ভাইকিং জাহাজটিকে ফ্রান্সে আসার অনুমতি দিয়েছিল প্যারিস। পাশাপাশি, ইতালি থেকে পূর্বপরিকল্পিত সাড়ে তিন হাজার অভিবাসী গ্রহণের পরিকল্পনা স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রতিউত্তরে ফ্রান্সের প্রতিক্রিয়াকে আক্রমণাত্মক এবং অযৌক্তিক বলে নিন্দা করেছিলেন জর্জা মেলোনি৷ এই ঘটনার পর চলতি বছরের মার্চে ব্রাসেলসে বৈঠক করে সম্পর্ক উষ্ণ করেন এমানুয়েল ম্যাক্রঁ এবং জর্জা মেলোনি। কিন্তু অভিবাসন ইতালি সরকারের জন্য এখনও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম রোমের ক্ষমতায় এসেছে কট্টর ডানপন্থি কোন সরকার। নির্বাচনের আগে অভিবাসী নৌকার আগমন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো জর্জা মেলোনির জোট।
চলমান কূটনৈতিক বিবাদে অংশ নিয়েছেন ইতালির কট্টর ডান নেতা ও উপ-প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি। তিনি বলেন, “ফ্রান্সে মারিন লো পেনের বন্ধু হতে পেরে এবং জর্জা মেলোনির সরকারে থাকতে পেরে তিনি গর্বিত।” উল্লেখ্য যে,মাত্তেও সালভিনি অভিবাসনবিরোধী নেতা হিসেবে ইউরোপে বেশ সমালোচিত।
চলতি বছর উত্তর আফ্রিকা থেকে ইতালির উপকূলে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে৷ ইতালীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় জানিয়েছে, ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৪২ হাজারেরও বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষ ইতালিতে প্রবেশ করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের মধ্যে প্রায় চারগুণ।
ইতালির সঙ্গে থাকা ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অভিবাসনের চাপ মোকাবেলায় ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন গত মাসে ১৫০ জন অতিরিক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স,এএফপি, ইনফোমাইগ্রেন্টস
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস