ইইউ সীমান্তে বেড়া বা প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনার সমালোচনায় এনজিও

অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঠেকাতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের যে পরিকল্পনা ইউরোপীয় নেতারা করছেন, তার কড়া সমালোচনা করেছে বলকান রুটে সক্রিয় এনজিও ও অভিবাসন সংস্থাগুলো

ইউরোপ ডেস্কঃ ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত অভিবাসন সংক্রান্ত অনলাইন পোর্টাল ইনফোমাইগ্র্যান্টস তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছ, ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের যে পরিকল্পনা ইউরোপীয় নেতারা করছেন, তার কড়া সমালোচনা করেছে বলকান রুটে সক্রিয় এনজিও ও অভিবাসন সংস্থাগুলো।

এটিকে ব্রেক্সিটের সঙ্গে তুলনা করে তারা বলছে, কাজের কাজ তো কিছুই হবে না, উল্টো ব্রেক্সিটের মতো ক্ষতির কারণ হবে। এনজিওগুলো বলছে, পানি যেমন নিজের পথ খুঁজে নিতে পারে, তেমনি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে প্রাচীর কোনো বাধা হতে পারে না। বলকান রুটে কাজ করা এনজিওগুলোর মতে, অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে সীমানা প্রাচীর স্থাপনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রীদের প্রস্তাবটি ব্যয়বহুল এবং অপ্রয়োজনীয়। তারা বলছে, এই প্রাচীর কেবল একটি অস্থায়ী বাধা তৈরি করবে, যা অল্পসময়ের মধ্যেই অকার্যকর হয়ে যাবে।

কিছু এনজিও এই ধারণাটিকে ব্রেক্সিটের সঙ্গে তুলনা করছে। তাদের দাবি, ব্রিটেন আলাদা হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ইউরোপে আবারও সীমানার বিষয়টি ফিরে এসেছে। আর এখন যদি অভিবাসীদের ঠেকাতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়, তা হবে ইউরোপের চেতনার পরিপন্থি। কারণ সীমানা দূর করতেই গঠিত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইইউ বহিঃসীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স-এর পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ইউরোপীয় সীমানায় প্রবেশের পরিমাণ ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরে তিন লাখ ৩০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ইউরোপে প্রবেশ করেছে।

এর মধ্যে পশ্চিম বলকান রুটটি সবচেয়ে জনপ্রিয়। ওই রুট দিয়ে এক লাখ ৪৫ হাজার অনিয়মিত অভিবাসী ইউরোপে এসেছেন। অবশ্য ফ্রন্টেক্সের পরিসংখ্যান সঠিক মনে করেন না বসনিয়াভিত্তিক এনজিও ইপসিয়া-অ্যাক্লির সমন্বয়কারী সিলভিয়া মারাওন। তার মতে, “যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আটকানো হয়েছে শুধু তাদের গণনা করা হয়েছে। যাদের গণনা করা হয়নি তাদের যোগ করা হলে সংখ্যাটি দ্বিগুণ হতে পারে।”

সিলভিয়া মারাওন বলেন, ‘জল বা স্থলসীমান্তকে শক্তিশালী করে অভিবাসীদের আটকানোর প্রচেষ্টা বছরের পর বছর ধরে করা হয়েছে। কিন্তু এটি কাজ করছে না৷ ২০১৫ সাল থেকে সার্বিয়া এবং হাঙ্গেরির মধ্যে একটি সীমানা প্রাচীর রয়েছে, তবুও এটি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপে ঢোকার প্রধান পথ।” সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হলে পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক বড় হবে আর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে বলেও মনে করেন এই এনজিওকর্মী।

তিনি বলেন, “কাঁটাতার এড়াতে নারী-পুরুষ, শিশুরা সবাই তখন নদী পার হওয়ার চেষ্টা করবে। আমরা প্রতিদিন তা দেখতে পাচ্ছি, প্রতিদিনই ঘটছে এসব। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি ক্রোয়েশিয়ার কথা। দেশটি সীমান্ত সুরক্ষিত করতেই দুর্ঘটনা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে চোরাচালানকারীদের উৎপাত।” ইন্টারসোস নামের অপর একটি এনজিওর ইউরোপীয় প্রধান সিজার ফার্মি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যখন সীমান্ত পাহারা দেবে, সেখানে দুর্নীতি স্থান করে নিতে পারে। আর যেখানে দেয়াল আছে, সেখানে গর্তও আছে।”

ইন্টারন্যাশনাল পলিসি সেন্টারের পরিচালক ড্যানিয়েল ফ্রিগেরি বলেন, “প্রাচীর নির্মাণ করে সমস্যাটির সমাধান হবে না। এটি আবার ফিরে আসবে। কারণ অভিবাসন প্রবাহ জলের মতো, এটি একটি উপায় খুঁজে বের করে ফেলে।” অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি নিয়মিত রুট তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ইটালীয় সলিডারিটি কনসোর্টিয়ামের প্রেসিডেন্ট জিয়ানফ্রাঙ্কো শিয়াভোন।

অভিবাসী ও শরণার্থীদের জন্য সীমানা বন্ধ করে দেয়া ইউরোপের নিজের জন্য ক্ষতিকর বলেও মনে করেন শিয়াভোন। তিনি বলেন, “এটি এমন একটি মহাদেশ যা বাকি বিশ্বের সঙ্গে খোলা সম্পর্ক বজায় রাখলেই বাঁচতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “গত ৩০ বছরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সীমানা মুছে দেয়ার ওপর ভিত্তি করে হয়েছে। ব্রেক্সিটের মধ্য দিয়ে কী হয়েছে, সেদিকে দৃষ্টি দিলে বাকিটাও বোঝা যাবে।”

কবির আহমেদ/ইবিটাইমস 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »