ভিয়েনা ০৭:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরমাণু চুক্তি সংক্রান্ত ইইউর মধ্যস্থতা প্রস্তাব ‘গ্রহণযোগ্য’ হতে পারে-ইরান

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০২:০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২
  • ২৬ সময় দেখুন
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পরমাণু চুক্তি সংক্রান্ত ইইউর মধ্যস্থতা প্রস্তাব ‘গ্রহণযোগ্য’ হতে পারে বলে জানিয়েছে ইরান। ইরান এই নিশ্চয়তা পেতে চাইছে যে, চুক্তিটি যদি পুনরুজ্জীবিত করা হয় তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট তা পরিত্যাগ না করে।
গত শুক্রবার (১২ আগস্ট) ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ একজন উর্ধ্বতন ইরানি কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাব ‘গ্রহণযোগ্য’ হতে পারে, যদি তেহরানের মূল দাবিগুলোর বিষয়ে ‘আশ্বাস’ প্রদান করা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে,২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চুক্তিটি হয়েছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ – যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এবং জার্মানির সঙ্গে। এই পক্ষগুলো পরিচিত “পি৫ + ১” হিসেবে। এই সমঝোতায় ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ও মজুদ করার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। চুক্তি অনুসারে তেহরান তাদের কিছু পরমাণু স্থাপনা বন্ধ করে দিতে অথবা পরিবর্তন করতে সম্মত হয়। এছাড়াও ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের অনুমতিও দেয়া হয়। অন্যদিকে ইরানের ওপর আরোপিত অনেক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পি৫ + ১ বিশ্বাস করেছিল যে, এই চুক্তি পরমাণু অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা থেকে ইরানকে প্রতিহত করবে। ইরান এধরনের চেষ্টার কথা সবসময় অস্বীকার করেছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ইরানের বিরুদ্ধে এধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখার অভিযোগ এনেছে। ইরান আশা করেছিল যে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলে তাদের বিপর্যস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এই সমঝোতার ব্যাপারে দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিক আলোচনার পর চুক্তিটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে কার্যকর হয়।
চুক্তিটি কেন ধসে পড়লো? ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটি এই নিশ্চয়তা পেতে চাইছে যে, চুক্তিটি যদি পুনরুজ্জীবিত করা হয় তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট তা পরিত্যাগ না করেন। যেমনটি ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছিলেন এবং ইরানের ওপর নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ধরনের লৌহ-বর্ম ঘেরা আশ্বাস দিতে পারবেন না; কারণ এটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক কোন চুক্তি নয় বরং একটি রাজনৈতিক বোঝাপড়া।
ওয়াশিংটন বলেছে, চুক্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে তারা ইইউর প্রস্তাবের ভিত্তিতে দ্রুত একটি সমঝোতায় পৌছাতে প্রস্তুত। ইরানের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ইইউ-কে তাদের “ বাড়তি মতামত ও বিবেচনাগুলি ” জানাবেন। তেহরানে বৈঠকের পর ইইউ আলোচনা সমন্বয় করছে। গত মার্চ মাসে মনে হয়েছিল ২০১৫-র চুক্তিটি পুনরজ্জীবিত হতে যাচ্ছে কিন্তু ১১ মাস ধরে তেহরান ও বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় চলা পরোক্ষ আলোচনা একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে পড়ে।প্রধানত, ইরানের এলিট রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরকে ওয়াশিংটনের বিদেশী সন্ত্রাসী সংস্থার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে; ইরানের এমন জেদের কারণেই এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
২০১৫ সালের চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান তাদের বিতর্কিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করেছিল, যা ছিল তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে সম্ভাব্য যাত্রা। তেহরান বলেছে শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তারা পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হতে চায়।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস
জনপ্রিয়
Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

পরমাণু চুক্তি সংক্রান্ত ইইউর মধ্যস্থতা প্রস্তাব ‘গ্রহণযোগ্য’ হতে পারে-ইরান

আপডেটের সময় ০২:০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পরমাণু চুক্তি সংক্রান্ত ইইউর মধ্যস্থতা প্রস্তাব ‘গ্রহণযোগ্য’ হতে পারে বলে জানিয়েছে ইরান। ইরান এই নিশ্চয়তা পেতে চাইছে যে, চুক্তিটি যদি পুনরুজ্জীবিত করা হয় তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট তা পরিত্যাগ না করে।
গত শুক্রবার (১২ আগস্ট) ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ একজন উর্ধ্বতন ইরানি কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাব ‘গ্রহণযোগ্য’ হতে পারে, যদি তেহরানের মূল দাবিগুলোর বিষয়ে ‘আশ্বাস’ প্রদান করা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে,২০১৫ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চুক্তিটি হয়েছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ – যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এবং জার্মানির সঙ্গে। এই পক্ষগুলো পরিচিত “পি৫ + ১” হিসেবে। এই সমঝোতায় ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ও মজুদ করার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। চুক্তি অনুসারে তেহরান তাদের কিছু পরমাণু স্থাপনা বন্ধ করে দিতে অথবা পরিবর্তন করতে সম্মত হয়। এছাড়াও ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের অনুমতিও দেয়া হয়। অন্যদিকে ইরানের ওপর আরোপিত অনেক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পি৫ + ১ বিশ্বাস করেছিল যে, এই চুক্তি পরমাণু অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা থেকে ইরানকে প্রতিহত করবে। ইরান এধরনের চেষ্টার কথা সবসময় অস্বীকার করেছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ইরানের বিরুদ্ধে এধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখার অভিযোগ এনেছে। ইরান আশা করেছিল যে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলে তাদের বিপর্যস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এই সমঝোতার ব্যাপারে দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিক আলোচনার পর চুক্তিটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে কার্যকর হয়।
চুক্তিটি কেন ধসে পড়লো? ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটি এই নিশ্চয়তা পেতে চাইছে যে, চুক্তিটি যদি পুনরুজ্জীবিত করা হয় তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট তা পরিত্যাগ না করেন। যেমনটি ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছিলেন এবং ইরানের ওপর নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ধরনের লৌহ-বর্ম ঘেরা আশ্বাস দিতে পারবেন না; কারণ এটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক কোন চুক্তি নয় বরং একটি রাজনৈতিক বোঝাপড়া।
ওয়াশিংটন বলেছে, চুক্তি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে তারা ইইউর প্রস্তাবের ভিত্তিতে দ্রুত একটি সমঝোতায় পৌছাতে প্রস্তুত। ইরানের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ইইউ-কে তাদের “ বাড়তি মতামত ও বিবেচনাগুলি ” জানাবেন। তেহরানে বৈঠকের পর ইইউ আলোচনা সমন্বয় করছে। গত মার্চ মাসে মনে হয়েছিল ২০১৫-র চুক্তিটি পুনরজ্জীবিত হতে যাচ্ছে কিন্তু ১১ মাস ধরে তেহরান ও বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় চলা পরোক্ষ আলোচনা একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে পড়ে।প্রধানত, ইরানের এলিট রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরকে ওয়াশিংটনের বিদেশী সন্ত্রাসী সংস্থার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে; ইরানের এমন জেদের কারণেই এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
২০১৫ সালের চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান তাদের বিতর্কিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করেছিল, যা ছিল তাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে সম্ভাব্য যাত্রা। তেহরান বলেছে শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তারা পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হতে চায়।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস