বাংলাদেশ ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের শীর্ষ কর্মকর্তা ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীসহ আট আসামিকে পৃথক তিন ধারায় ১১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজধানী ঢাকার একটি আদালত।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় ডা. সাবরিনাসহ আট আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে তাদের কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।
সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী, জেকেজি হেলথ কেয়ারের নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইন্সেসের স্বত্বাধিকারী জেবুন্নেছা রিমা ও বিপ্লব দাস।
প্রতারণার দায়ে আট আসামিকে তিন বছর করে কারাদণ্ড, তিন হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তাদের আরও তিন মাস কারাগারে থাকতে হবে। জালিয়াতির দায়ে তাদের আরও চার বছর কারাদণ্ড, চার হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তাদের আরও চার মাস কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া, আরেক ধারায় তাদের চার বছর কারাদণ্ড, চার হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তাদের আরও চার মাস কারাগারে থাকতে হবে। এই সাজা একটির পর আরেকটি কার্যকর হবে। সেক্ষেতে তাদের ১১ বছর কারাভোগ করতে হবে বলে আদেশে উল্লেখ করেন বিচারক।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু এই রায়কে যুগান্তকারী হিসেবে বর্ণনা করে জানিয়েছেন যে তারা রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। “কারণ, মানুষের জীবন নিয়ে যারা খেলেছেন, ভুয়া সনদ তৈরি করে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে, এই শাস্তি তাদের প্রাপ্য ছিল”।
তবে আসামীপক্ষের আইনজীবী প্রণব কান্তি ভৌমিক বলেছেন, “আজ যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে, এটি একটি ত্রুটিপূর্ণ রায়। যে ধারায় সাজা দেয়া হয়েছে, এই ধারায় কোন ক্রমেই সাজা দেয়ার মতো গ্রাউন্ড ছিল না”।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন, যে সময়ের জন্য আসামীদের কারাদণ্ড হয়েছে, সেই সাজা থেকে সেই দুই বছর বাদ যাবে, কারণ তারা ইতিমধ্যেই দুই বছর কারাগারে কাটিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, দেশে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর এই ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩শে জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতি করা হয়েছে, এমন অভিযোগে কামাল হোসেন নামের একজন ব্যক্তি তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় অভিযুক্তদের বিরৃদ্ধে জালিয়াতি, বিশ্বাসভঙ্গ, অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
সে সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে এই জালিয়াতি ঘটনা প্রকাশ হলে সারা দেশে আলোড়ন তৈরি হয়। জেকেজি হেলথ কেয়ার এবং আরেকটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে যখন পরীক্ষার ভূয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ ওঠে, তখন সরকারি কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কতটা বিবেচনায় আসে- সেই প্রশ্নও উঠে আসে।
এর প্রায় একমাস পরে ১২ই জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ও জেকেজি চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। পরে সেই বছর ২০শে অগাস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এই মামলায় মোট ২৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিল ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ার। কিন্তু পরবর্তীতে অভিযোগ ওঠে যে বিনা মূল্যে নমুনা সংগ্রহের কথা থাকলেও বুকিং বিডি এবং হেলথ কেয়ার নামের দুটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টাকা নেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
থানায় কামাল হোসেন মামলা করার পর জেকেজির সাবেক গ্রাফিক্স ডিজাইনার হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজিলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কম্পিউটারে ৪৩ জনের নামে তৈরি করা ভুয়া করোনা সনদ পাওয়া যায় বলে আদালতে জানানো হয়।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস