ভিয়েনা ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মঠবাড়িয়ায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবূকে নির্দয়ভাবে মারধর করে হাসপাতালে ফেলে গেলেন স্বামী

  • EuroBanglaTimes
  • আপডেটের সময় ০৪:২৫:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
  • ১৯ সময় দেখুন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট;পিরোজপুর: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া অন্তঃসত্ত্বা রাবেয়া বেগম (৩৩) নামের এক গৃহবধূকে যৌতুকের দাবী তুলে নির্দয়ভাবে মারধর করে হাসপাতালে ফেলে রেখে চলে গেছেন স্বামী শামসু মিয়া (৩৫) ও তার বোনের মেয়ে আকলিমা। গুরুতরও আহত গৃহবধূ গত তিন দিন ধরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ অবস্থায় হাসপাতালে বিছানায় কাতরাচ্ছেন।

গত ১৯ জুন মারধরের পর হাসপাতালে অবস্থার অবনতি ঘটলে মুমূর্ষু অবস্থায় বুধবার রাতে গৃহবধূকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

হাসপাতাল ও গৃহবধূর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের ভাইজিদ এলাকার বাসিন্দা লালু মিয়ার মেয়ে গার্মেন্টস কর্মী রাবেয়া বেগমের সাথে ১২ বছর পূর্বে
পরিচয় মাধ্যমে উভয়ের সম্মতিতে উপজেলার বড়হারজী গ্রামের কাঞ্চন মিয়ার ছেলে শ্রমিক শামসু মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে দশ বছরের এক মেয়ে সাথী ও সাত বছরের এক ছেলে মুসার জন্ম হয়। সম্প্রতি শামসুর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে মঠবাড়িয়া নিজ বাড়িতে চলে আসে।

গত ছয় মাস আগে ওই গৃহবধূ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরেন। এর পর থেকে স্বামী শামসু যৌতুকের জন্য ওই গৃহবধূর ওপর চাপের সৃষ্টি করে। গত ১৯জুন তাদের কথা কাটাকাটির এক পর্যায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে বেদম পিটুনি দিয়ে গুরুতরও জখম করে। পরে উপজেলা হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় তার স্বামী পালিয়ে গিয়ে ননদের মেয়েকে ভয়ভীতি দেখালে ননদের মেয়ে আকলিমাও চলে যায়।

এর পর হাসপাতাল কতৃপক্ষ তিন দিন ধরে চিকিৎসা দেয়ার পরেও অবস্থার অবনতি ঘটলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ সারোয়ার হোসেন খান সংবাদ কর্মীদের খবর দেন।

সংবাদ পেয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজু ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাত জাহান মমতাজ ছুটে এসে থানায় খবর দেন। সাংবাদিকরা দশ বছরের সাথীকে মায়ের পাশে কাঁদতে দেখনে এবং দুই ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে সাথে সাথে গৃহবধূর শরীরে দেয়া হয়। সাংবাদিকরা পুলিশে খবর দিলে থানা পুলিশ গৃহবধূর বাড়িতে গেলে স্বামী শামসু পালিয়ে যায়। কাউকে না পেয়ে পুলিশ শামসুর বড় ভাইর ছেলে রহিমকে নিয়ে আসেন।

সংবাদ কর্মীরা তাৎক্ষনিক হাসপাতাল এলাকার সাধারণ মানুষ, হাসপাতালের ডাক্তার, পুলিশ ও নিজেরা নয় হাজার টাকা সংগ্রহ করেন।

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উর্মী ভৌমিককে সাংবাদিক মমতাজ অবহিত করে ইউএনও এর ব্যক্তিগত, দপ্তর ও অন্য দপ্তর থেকে আঠারো হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। সর্ব মোট সাতাশ হাজার দুইশ টাকা সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্সে বুধবার রাতে গৃহবধূকে তার ভাশুরের ছেলে রহিমকে সাথে করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

মঠবাড়িয়ার সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোস্তফা ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, গৃহবধূর চিকিৎশার জন্য বরিশাল সমাজ সেবা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হয়েছে।

হাসপাতালে আবাশিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, তিন দিন ধরে অতিরিক্ত রক্তক্ষণে অন্তঃসত্ত্বা রাবেয়ার অবস্থা সংকটজনক। তাকে তিন দিন আগে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে স্থানন্তর করা হলেও রাবেয়ার স্বামী বা পরিবারে পরিবারের কেউ  এগিয়ে আসেনি।

মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাঃ নুরুল ইসলাম বাদল বলেন, বুধবার বিকেলে খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ গৃহবধূও বাড়িতে গিয়ে শামসুকে না পেয়ে তার ভাইর ছেলে রহিমকে নিয়ে আসেন এবং রাবেয়ার সাথে বরিশালে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এইচ এম  লাহেল মাহমুদ/ইবিটাইমস

Address : Erlaaer Strasse 49/8/16 A-1230 Vienna,Austria. Mob : +43676848863279, 8801719316684 (BD) 8801911691101 ( Ads) Email : eurobanglatimes123@gmail.com
Translate »

মঠবাড়িয়ায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবূকে নির্দয়ভাবে মারধর করে হাসপাতালে ফেলে গেলেন স্বামী

আপডেটের সময় ০৪:২৫:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট;পিরোজপুর: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া অন্তঃসত্ত্বা রাবেয়া বেগম (৩৩) নামের এক গৃহবধূকে যৌতুকের দাবী তুলে নির্দয়ভাবে মারধর করে হাসপাতালে ফেলে রেখে চলে গেছেন স্বামী শামসু মিয়া (৩৫) ও তার বোনের মেয়ে আকলিমা। গুরুতরও আহত গৃহবধূ গত তিন দিন ধরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ অবস্থায় হাসপাতালে বিছানায় কাতরাচ্ছেন।

গত ১৯ জুন মারধরের পর হাসপাতালে অবস্থার অবনতি ঘটলে মুমূর্ষু অবস্থায় বুধবার রাতে গৃহবধূকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

হাসপাতাল ও গৃহবধূর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের ভাইজিদ এলাকার বাসিন্দা লালু মিয়ার মেয়ে গার্মেন্টস কর্মী রাবেয়া বেগমের সাথে ১২ বছর পূর্বে
পরিচয় মাধ্যমে উভয়ের সম্মতিতে উপজেলার বড়হারজী গ্রামের কাঞ্চন মিয়ার ছেলে শ্রমিক শামসু মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে দশ বছরের এক মেয়ে সাথী ও সাত বছরের এক ছেলে মুসার জন্ম হয়। সম্প্রতি শামসুর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে মঠবাড়িয়া নিজ বাড়িতে চলে আসে।

গত ছয় মাস আগে ওই গৃহবধূ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরেন। এর পর থেকে স্বামী শামসু যৌতুকের জন্য ওই গৃহবধূর ওপর চাপের সৃষ্টি করে। গত ১৯জুন তাদের কথা কাটাকাটির এক পর্যায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে বেদম পিটুনি দিয়ে গুরুতরও জখম করে। পরে উপজেলা হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় তার স্বামী পালিয়ে গিয়ে ননদের মেয়েকে ভয়ভীতি দেখালে ননদের মেয়ে আকলিমাও চলে যায়।

এর পর হাসপাতাল কতৃপক্ষ তিন দিন ধরে চিকিৎসা দেয়ার পরেও অবস্থার অবনতি ঘটলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ সারোয়ার হোসেন খান সংবাদ কর্মীদের খবর দেন।

সংবাদ পেয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজু ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাত জাহান মমতাজ ছুটে এসে থানায় খবর দেন। সাংবাদিকরা দশ বছরের সাথীকে মায়ের পাশে কাঁদতে দেখনে এবং দুই ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে সাথে সাথে গৃহবধূর শরীরে দেয়া হয়। সাংবাদিকরা পুলিশে খবর দিলে থানা পুলিশ গৃহবধূর বাড়িতে গেলে স্বামী শামসু পালিয়ে যায়। কাউকে না পেয়ে পুলিশ শামসুর বড় ভাইর ছেলে রহিমকে নিয়ে আসেন।

সংবাদ কর্মীরা তাৎক্ষনিক হাসপাতাল এলাকার সাধারণ মানুষ, হাসপাতালের ডাক্তার, পুলিশ ও নিজেরা নয় হাজার টাকা সংগ্রহ করেন।

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উর্মী ভৌমিককে সাংবাদিক মমতাজ অবহিত করে ইউএনও এর ব্যক্তিগত, দপ্তর ও অন্য দপ্তর থেকে আঠারো হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। সর্ব মোট সাতাশ হাজার দুইশ টাকা সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্সে বুধবার রাতে গৃহবধূকে তার ভাশুরের ছেলে রহিমকে সাথে করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

মঠবাড়িয়ার সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোস্তফা ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, গৃহবধূর চিকিৎশার জন্য বরিশাল সমাজ সেবা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হয়েছে।

হাসপাতালে আবাশিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, তিন দিন ধরে অতিরিক্ত রক্তক্ষণে অন্তঃসত্ত্বা রাবেয়ার অবস্থা সংকটজনক। তাকে তিন দিন আগে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে স্থানন্তর করা হলেও রাবেয়ার স্বামী বা পরিবারে পরিবারের কেউ  এগিয়ে আসেনি।

মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাঃ নুরুল ইসলাম বাদল বলেন, বুধবার বিকেলে খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ গৃহবধূও বাড়িতে গিয়ে শামসুকে না পেয়ে তার ভাইর ছেলে রহিমকে নিয়ে আসেন এবং রাবেয়ার সাথে বরিশালে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এইচ এম  লাহেল মাহমুদ/ইবিটাইমস