আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার জাপানের টোকিওতে কোয়াড নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২৪ মে) ভয়েস অফ আমেরিকার খবরে বলা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকার প্রধানরা একটি অবাধ এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গঠনের জন্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ও কোভিড-১৯ মহামারীর প্রতিক্রিয়ায় সহযোগিতা করার অঙ্গীকার নিয়ে মঙ্গলবার টোকিওতে সমবেত হয়েছিলেন।
কোয়াড নামে পরিচিত অনানুষ্ঠানিক জোটের শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার বক্তৃতায় বলেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন “কেবল একটি ইউরোপীয় সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা”। তিনি আরও বলেন, “আঞ্চলিক অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব,আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকারের নীতিগুলো সর্বদা রক্ষা করা উচিত, সেগুলো বিশ্বের যেখানেই লঙ্ঘিত হোক না কেন।”
যদিও কোয়াডের অন্যান্য সদস্য ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, ভারত তা করেনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার উদ্বোধনী মন্তব্যে ইউক্রেন সংঘাতের কথা উল্লেখ করেননি। গতষসোমবার বাইডেন একটি নতুন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য উদ্যোগ চালু করেছেন। ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১৩টি রাষ্ট্র সে উদ্যোগে স্বাক্ষর করেছে।
বাইডেন প্রশাসন বলেছে, এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা প্রদর্শনের জন্য ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক কাঠামোর সূচনা হচ্ছে ।এর মধ্যে সরবরাহ সুত্র , পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, এবং কর্মী সুরক্ষা সংক্রান্ত বৃহত্তর সহযোগিতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কোয়াড(QUAD) কি ?
চতুর্পক্ষীয় নিরাপত্তা সংলাপ (Quadrilateral Security Dialogue) বা সংক্ষেপে কোয়াড হল একটি অনানুষ্ঠানিক কৌশলগত নিরাপত্তা ফোরাম। কোয়াডের সদস্য দেশ মোট চারটি, যথা- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান। কোয়াডের প্রাথমিক উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হল একটি উন্মুক্ত, সমৃদ্ধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য কাজ করা।
২০০৭ সালে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেই আনুষ্ঠানিক চতুর্পাক্ষিক নিরাপত্তা বা কোয়াড গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। তৎকালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সমর্থনে ২০০৭ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এই সংলাপের সূচনা করেছিলেন।
একই বছরের ডিসেম্বরে, কোয়াডের চার সদস্য রাস্ট্র মিলিত হয় এবং ভারতের উদ্যোগে বঙ্গোপসাগরে আয়োজিত মালাবার নৌ মহড়ায় যোগ দেয়। কিন্তু ২০০৮ সালে অস্ট্রোলিয়া নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলে জোটটি কার্যত ভেঙ্গে যায়। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান নীতিতে দ্বিমত প্রতিফলিত করে প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুডের অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যাহারের পরে কোয়াড বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে উন্নত সামরিক সহযোগিতা পুনরায় শুরু হয়।
২০১২ সালে, জাপানে শিনজো অ্যাবে ক্ষমতায় আসলে কোয়াড নিয়ে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে। সর্বশেষ, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে কোয়াডের সদস্য চারটি দেশ মিলিত হয়। এতে কোয়াড আবারও নতুন উদ্যম ফিরে পায়।
কোয়াড এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ”Quadrilateral Security Dialogue” বা QUAD। এর অর্থ হলো ‘চতুর্পক্ষীয় নিরাপত্তা সংলাপ’। কোয়াড গঠনের মূল উদ্দেশ্য চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক অগ্ৰযাত্রা প্রতিহত করা। যদিও প্রশান্ত মহাসাগরে অবাধ নৌ চলাচল নিশ্চিত করার কথা বলে এ সংগঠনটি যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই এই সংগঠনের লক্ষ্য চীন। বর্তমানে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য বিস্তারকে রুখে দেওয়ায় কোয়াডের মূল উদ্দেশ্য।
তাছাড়াও কোয়াড গঠনের আরও উদ্দেশ্য হল, ইন্দো-প্যাসিফিকের কৌশলগত সমুদ্র পথগুলোকে সামরিক বা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা। একটি নিয়ম-ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা, নৌ পথের স্বাধীনতা এবং একটি উদার বাণিজ্য ব্যবস্থা সুরক্ষিত করা। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য বিকল্প ঋণ অর্থায়নের প্রস্তাব করা।
সমসাময়িক বৈশ্বিক ইস্যুতে মত বিনিময় করা, যেমন, সমালোচনামূলক এবং উদীয়মান প্রযুক্তি, সংযোগ এবং অবকাঠামো, সাইবার নিরাপত্তা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, মানবিক সহায়তা, দুর্যোগ ত্রাণ, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারী এবং শিক্ষা।
কবির আহমেদ/ইবিটাইমস