নব আনন্দে বাংলা বর্ষবরণ

ঢাকা : করোনার আঘাত পেরিয়ে দু’বছর পর পহেলা বৈশাখে আবার বর্ণিল উৎসবে মেতেছে দেশ। নতুন বাংলা বর্ষের প্রথম দিনের ভোরেরআলো রাঙিয়ে দেয় নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানীসহ  সারাদেশ ছিল বর্ষবরণের নানা আয়োজন।  বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষ ১৪২৯।

আনন্দঘন পরিবেশে  নব আনন্দে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উয্যাপিত হয় নববর্ষ।  জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ এভাবে আহ্বান জানায় বাঙালি।

‘বাংলা নববর্ষ ১৪২৯’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ছায়ানট  রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে রামকেলি রাগ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ছায়ানটের অনুষ্ঠান শুরু হয় । করোনা অতিমারির কারণে গত দু’ বছর রমনার বটমূলে বর্ষবরণের ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী প্রভাতি সংগীতানুষ্ঠানটি হতে পারেনি। করোনা মহামারির  দুঃসময় অতিক্রম করে জীবনে প্রায় ফিরে আসছে স্বাভাবিক কর্মপ্রবাহ। নতুন বছরে এ নতুন বাস্তবতাকে তুলে ধরতে আনন্দের গান নিয়ে সাজানো হয় এবারের ছায়ানটের গানের অনুষ্ঠান। মূল ভাব ছিল ‘নব আনন্দে জাগো’। ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন এ নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন। নব্বই বছরে পা রাখা সানজিদা খাতুন শারীরিক দুর্বলতায় এবার অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হতে পারেননি। শেষে ধারণ করা তাঁর গাওয়া ‘নব আনন্দে জাগো’ গানটি বাজিয়ে শোনানো হয়। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য  রাখেন নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী । অনুষ্ঠানে সম্মেলক কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত ‘মন, জাগো মঙ্গললোকে’  আহির ভৈরব রাগে এবাদুল হক সৈকতের সেতারবাদন, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী  পরিবেশন করেন নজরুল সংগীত ‘অরুণকান্তিকে গো যোগী ভিখারি’। তোড়ি রাগে ছোট আলাপ শোনান বিটু কুমার শীল। সুস্মিতা দেবদনাথ পরিবেশন করেন  নজরুলর ‘জাগো জাগো খোলো গো আঁখি’। এছাড়াও একক সংগীত পরিবেশন করেন অন্যান্য শিল্পিরা।  প্রায় আড়াই ঘণ্টার এ অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন এই পাঁচ কবির গানের সঙ্গে লালন সাঁই, গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারীর গান, গিরীন চক্রবর্তীর পল্লীগীতি এবং নুরুল ইসলাম জাদিদের ভাওয়াইয়া দিয়ে সাজানো হয়েছিল ছায়ানটের অনুষ্ঠান মালা । সাথে ছিল আবৃত্তি ও পাঠ ।

বাংলা নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে  সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে।  এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে। সকাল নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকার সড়কদ্বীপের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরুহয়। শোভাযাত্রা শুরুর আগে বেজে ওঠে ঢাক। মুখোশ, টেপাপুতুল, মাছ–পাখির প্রতিকৃতিসহ লোকসংস্কৃতির নানা উপাদান ছিল এবারের শোভাযাত্রায়।  বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন–সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন চত্বর ঘুরে আবার টিএসসিতে এসে শোভাযাত্রা শেষ হয় । পরে শোভাযাত্রায় প্রদর্শিত শিল্পবস্তু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে যাওয়ার পর ঢাকের তালে উচ্ছ্বাসে মাতেন শিক্ষার্থী ও হাজারো মানুষ।

ঢাকা/ইবিটাইমস/এমএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »