ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ট্রিয়ার নিরপেক্ষ নীতি এখন প্রশ্নের সম্মুখীন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অস্ট্রিয়া একটি নিরপেক্ষ দেশ হিসাবে বিশ্বে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিল। রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে নিরপেক্ষ নীতি নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে

ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী অস্ট্রিয়া তার নিরপেক্ষ দেশের নীতি থেকে অনেকটাই দূরে সরে আসতে শুরু করেছে। অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল সোস্যালিস্ট পার্টি অস্ট্রিয়ার (SPÖ) চেয়ারপার্সন ডা.পামেলা রেন্ডি-ভাগনার আজ এক টুইট বার্তায় অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামারকে (ÖVP) উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি আপনাকে আমাদের দেশের নিরপেক্ষ নীতির স্পষ্টীকরণ দাবি করছি,আপনি প্রথমে দেশের “স্বচ্ছতা তৈরি করুন। আমাদের দেশের নিরপেক্ষতার প্রতি একটি স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন প্রতিশ্রুতি দিন!”

এদিকে অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা OE24 জানিয়েছে,অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন ÖVP দলের শীর্ষ রাজনীতিবিদ আন্দ্রেয়াস কোহল চাচ্ছে অস্ট্রিয়ার পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তি বা সদস্য পদের জন্য আবেদন করুক। কেননা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর এখন জোট বাধা একান্ত জরুরী বলে মনে করছেন তারা।

পত্রিকাটি আরও জানায়, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ফলে অস্ট্রিয়ার সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের ফলে দেশটির নিরপেক্ষতা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই গত সপ্তাহের শেষের দিকে অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গের রুশ বিরোধী বক্তব্যের প্রচণ্ড সমালোচনা করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যেটা ক্রেমলিন সরকারের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মতামতের প্রতিফলন হিসাবেই দেখা হচ্ছে।

তাছাড়াও ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর অস্ট্রিয়ান সরকারের তৎপরতা ও বিভিন্ন বক্তব্যের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দেশটির শীর্ষ কূটনৈতিক সের্গেই ল্যাভরভ অস্ট্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন – যা অবিলম্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ দ্বারা পাল্টা আক্রমণের সূত্রপাত করে:অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, একজন সামরিকভাবে নিরপেক্ষ হলেও, কিন্তু সে রাজনৈতিকভাবে তাই হতে হবে এমন নয়।

এদিকে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর থেকে অস্ট্রিয়ায় গ্যাস সরবরাহ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অস্ট্রিয়ার জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, অস্ট্রিয়া রাশিয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৭ মিলিয়ন ইউরোর গ্যাস সংগ্রহ করে। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে অস্ট্রিয়া গ্যাস বাবদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারকে দিয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন ইউরো। অস্ট্রিয়া তার গ্যাসের চাহিদার প্রায় পুরোটাই রাশিয়া থেকে নিয়ে থাকে।

রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য সমাবেশের পর থেকেই অস্ট্রিয়া আসন্ন গ্যাস ঘাটতির সমস্যা আঁচ করতে পেরে আরব উপসাগরীয় দেশ সমূহ থেকে রাশিয়ান গ্যাসের বিকল্প খুঁজছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই কয়েক আরব দেশ সফর করেছেন। সরকারের একজন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএকে বলেন,আমরা রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধে অর্থায়ন করতে পারি না।

সংবাদ সংস্থার খবরে আরও বলা হয়েছে,অস্ট্রিয়া ২০২১ সালে তিন বিলিয়ন ইউরোর বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে। যা অস্ট্রিয়ার এনার্জি এজেন্সি অনুসারে দেশের চাহিদার শতকরা ৮৫ শতাংশ। সেই হিসাবে অস্ট্রিয়া প্রতিদিন রাশিয়াকে সাত মিলিয়ন ইউরো দেয় শুধুমাত্র গ্যাসের জন্য। তবে এই হিসাব বর্তমান মূল্য বৃদ্ধির পূর্বের হিসাব।এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশ সমূহ থেকে রাশিয়া গ্যাস বাবদ প্রতিদিন ২০০ শত মিলিয়ন ইউরো পেয়ে থাকে।

অস্ট্রিয়ান সরকার এখন গ্যাস সংগ্রহে রাশিয়ার বিকল্প ভাবছে। ইতিমধ্যেই তারই ধারাবাহিকতায় অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার, পর্যটন ও কৃষি মন্ত্রী এলিজাবেথ কোস্টিংগার সম্প্রতি উপসাগরীয় আরব আমিরাত সফর করেছিলেন। মন্ত্রী এলিজাবেথ কোস্টিংগার সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে আবুদধাবিতে
একটি নবায়নযোগ্য চুক্তির সহযোগিতার বিষয়ে অভিপ্রায়ের একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।

অস্ট্রিয়া কেবল সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে সবুজ হাইড্রোজেন গ্যাস আমদানি করতে চায়। কারণ অস্ট্রিয়া আরব আমিরাত থেকে তরল গ্যাস সিলিন্ডারের মাধ্যমে সমুদ্র পথে জাহাজের মাধ্যমে আমদানি করবে। তবে এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আরব আমিরাত অস্ট্রিয়ার চাহিদার কতটুকু সরবরাহ করতে পারবে ? অস্ট্রিয়ার পরিবেশ ও যোগাযোগ মন্ত্রী
লিউনোরে গেভেসলার(Greens) জানিয়েছেন আমাদের সমস্যা হল গ্যাস ট্যাঙ্কারের জন্য টার্মিনাল ক্ষমতার অভাব। “আমরা ইউরোপে বিদ্যমান টার্মিনালগুলির ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল।”

কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »